পিপিপিতে থাকছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বা পিপিপি কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রস্তাবিত চাকরি প্রবিধানমালায় বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান রেখে বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (সংশোধন) আইন-২০১৯ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রস্তাবিত চাকরি প্রবিধানমালায় বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। পিপিপি কর্তৃপক্ষের সরাসরি নিয়োগ দেওয়া কর্মচারীদের চাকরির শর্তাবলী প্রবিধান দিয়ে নির্ধারিত হলেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আলাদা বিধানের কথা বলা হয়েছে। ফলে পিপিপি কর্তৃপক্ষ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারবে। আইনে অন্তর্ভুক্তির ফলে পিপিপিতে সব সময়ই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে। দক্ষ জনবল তৈরি না করে খসড়া আইনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি তরান্বিত করা এবং অবকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মধ্য দিয়ে বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করতে বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব আইন, ২০১৫ তথা পিপিপি আইন প্রণয়ন করা হয়। পিপিপি আইনের বাস্তবায়ন পর্যায়ে লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে ওই আইনে কিছু সংশোধন জরুরি হওয়ায় তা সংশোধন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সংশোধনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পিপিপি আইন, ২০১৫-এর ৮(২) উপ-ধারায় বোর্ড অব গভর্নরস-এর সভা বছরে অন্তত ছয়টি করার কথা রয়েছে। কিন্তু বছরে ছয়টি সভা আয়োজন সময়সাপেক্ষ এবং সভাপতিসহ সদস্যদের সার্বক্ষণিক ব্যস্ততার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এজন্য প্রস্তাবিত আইনে সভার সংখ্যা বছরে ছয়টির স্থলে একটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ৩ ধারা)।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের বোর্ড অব গভর্নরস-এর প্রথম সভায় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী বোর্ড গঠন করা হয়েছে। উপযুক্ত নির্বাহী বোর্ডের গঠন, দায়িত্ব ও সভা আয়োজন সংক্রান্ত বিষয়াদি বিদ্যমান আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ধারা ৪)।
পিপিপি আইনের ৯ ধারায় পিপিপি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা ও কার্যাবলিতে ‘পিপিপি সম্পর্কিত নীতিমালা/প্রবিধি/নির্দেশনা/গাইডলাইন প্রণয়ন, অনুমোদন, গেজেটে প্রকাশ ও জারিকরণের বিষয় উল্লেখ আছে। ওই ধারায় নীতিমালা/প্রবিধি/নির্দেশনা ও গাইডলাইনের সঙ্গে কার্যপ্রণালী’ শব্দটি সংযুক্ত করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ধারা ৫)।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামোতে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান রয়েছে। বিদ্যমান আইনের ১১ ধারায় পিপিপি কর্তৃপক্ষে সরাসরি নিয়োগকৃত কর্মচারীদের চাকরির শর্তাবলী প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হবে বলে উল্লেখ আছে। কর্তৃপক্ষের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পৃথক বিধানাবলি সংযোজনের লক্ষ্যে এ পর্যায়ে বিদ্যমান আইনের ১১ ধারা সংশোধন করে শতাংশ হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব গভর্নরস কর্তৃক অনুমোদিত গাইডলাইন বা বিধান প্রযোজ্য হওয়ার বিষয় সন্নিবেশ করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ধারা ৬)।
পিপিপি আইনের ১২ ধারায় চুক্তিকারী কর্তৃপক্ষ যেসব ক্ষেত্রে পিপিপি কর্তৃপক্ষের সহায়তা ও মতামত গ্রহণ করবে তা উল্লেখ আছে। ওই ধারায় পিপিপি প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপ ও চুক্তি সংশধোনের ক্ষেত্রে সহায়তার বিষয় উল্লেখ আছে। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর তা বাস্তবায়ন ও সেবা প্রদান কার্যক্রম পরিবীক্ষণ (post contract monitoring) পর্যায়েও পিপিপি কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রয়োজন হয়। যার উল্লেখ বিদ্যমান আইনে নেই। এ কারণে বিদ্যমান আইনে ১২(ছ) উপ-ধারা হিসেবে অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদনের পর চুক্তির আওতাধীন কার্যক্রমের পরিবীক্ষণ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিপিপি কর্তৃপক্ষের মতামত ও সহায়তা নেওয়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে [প্রস্তাবিত আইনের ৭(খ) উপ-ধারা]।
‘পিপিপি আইন, ২০১৫’-তে জি-টু-জি প্রকল্পের বিষয়ে কোনো বিধান ছিল না। কিন্তু ‘পিপিপি আইন, ২০১৫’ প্রবর্তিত হওয়ার পর সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে পিপিপি প্রকল্প (জি-টু-জি পিপিপি) বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে ‘Policy for Implementing PPP Projects through Government to Government (G2G) Partnership, 2017'.45 আওতায় জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও দুবাই-এর সঙ্গে সমঝোতা/সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। অন্যান্য দেশও এ প্রক্রিয়ায় প্রকল্প গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জি-টু-জি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনে ২(ক), ১৩(৩) এবং ১৩(৪) উপ-ধারা সংযোজন করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের
ধারা ৮)।
পিপিপি চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সেবা দিতে সরকারি সংস্থাগুলোর সার্বিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এ কারণে পিপিপি চুক্তি সম্পাদনের পরে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেসরকারি অংশীদারকে সহায়তা করার লক্ষ্যে বিদ্যমান
আইনে ২৩(২) উপ-ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ধারা-৯)।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাসদ নেতা ও সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।