বেশি দামে লবণ বিক্রি, সারাদেশে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা



নিউজ ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
অসাধু ব্যবসায়ীদের সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

অসাধু ব্যবসায়ীদের সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লবণের দাম বাড়ছে এমন গুজব প্রতিরোধে রাজধানীসহ সারাদেশে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে এবং গুজবের সুযোগ নিয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রি করছে এমন অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতেনাতে ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর:

ঢাকা:

অসাধু লবণ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল থেকে এ অভিযান শুরু হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আব্দুল্লাহ আল মামুন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব রোধে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। আমরা নয়াবাজারের তিন ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আমাদের অভিযান চলবে।

বেশি দামে লবণ বিক্রির খবরে মাঠে নামে প্রশাসন

সাভার:

বেশি দামে লবণ বিক্রির দায়ে রাজধানীর অদূরে সাভার ও এর আশেপাশের এলাকার ব্যবসায়ীদের জেল ও জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে সহকারী কমিশনার ভূমি (আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদের নেতৃত্বে আশুলিয়ার বাইপাইলে অভিযান চালানো হয়।

এসময় তিন দোকানিকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দোকানগুলো হলো- শরিফ স্টোর, সবুজ বাণিজ্যালয় ও ভাই ভাই স্টোর।

সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পারভেজুর রহমান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহফুজ আহম্মেদের নেতৃত্বে সাভারের নামা বাজার, উলাইল, হেমায়েতপুর ও আমিনবাজার এলাকায় বাড়তি দামে লবণ বিক্রির দায়ে ১০ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়।

এছাড়া ধামরাইয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রির দায়ে ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা করা হয়।

গুজব প্রতিরোধে মাঠে নামে স্থানীয় প্রশাসন 

যশোর:

যশোরে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির দায়ে শহরের দুই দোকানিকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর থেকে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার গুজবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন এসব জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের পেশকার শেখ জালালউদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, রাতে শহরের জেল রোড এলাকায় ‘ভাই ভাই স্টোর’ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান। বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় দোকানিকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অপরদিকে, শহরের পুরাতন কসবা চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজারের সোহরাবের দোকানে অভিযান চালানো হয়। সেখানেও লবণের অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় এক হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়।

নোয়াখালী:

নোয়াখালীতে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির দায়ে ২৭টি অভিযান পরিচালনা করেছেন ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ৯ উপজেলায় ২৪ এর অধিক প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর থেকে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার গুজবে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন।

এ সময় তারা নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এ দিকে লবণের গুজবের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রোকনুজ্জামান খান।

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

রংপুর:

রংপুরে বেশি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে দশ ব্যবসায়ীকে পৌনে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হলেও পরে মুচলেকা ও আর্থিক জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে রংপুরের বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করে এই জরিমানা করা হয়।

নগরীর সিটি বাজার সংলগ্ন কৈশাল রঞ্জন সড়কে ভোলা স্টোর নামে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়াও পীরগঞ্জে একই অভিযোগে আবু বক্কর ও মানিক মিয়া নামে দুই লবণ ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে গুজব ছড়িছে লবণের দাম বেশি নেওয়ার অপরাধে রংপুর মহানগরের বাস টার্মিনাল বাজার ও মর্ডাণ মোড় বাজারে চারজন ব্যবসায়ীকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এর আগে বিকেলে সিটি বাজারে দোকানে মূল্য তালিকা না টাঙানোর কারণে কয়েকজন কাঁচামাল ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার জরিমানা করা হয়।

লবণ গুজব বন্ধ করাসহ জনসাধারণকে বিভ্রান্ত না হবার আহ্বান জানিয়ে সন্ধ্যায় রংপুর মহানগরসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। এছাড়াও বাজারগুলোতে তাৎক্ষণিক মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করা হয়।

এতে করে জনমনে স্বস্তি ফিরলেও অনেক স্থানে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে লবণ বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে অলিগলিতে গড়ে উঠা দোকানে গুজবের সুযোগ নিয়ে ৩০ টাকার লবণের প্যাকেট ৫০-৬০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।

তবে পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ লবণ গুজব রুখতে মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব বিরোধী প্রচারণা ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রংপুর উপ-পরিচালক খন্দকার মোহাম্মদ নুরুল আমিন জানান, ‘গুজবের কারণে সাধারণ মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, সেজন্য আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি দামে লবণ বিক্রির সুযোগ না পায়, এজন্য বাজার মনিটরিংয়ের সাথে অভিযোগের প্রমাণ সাপেক্ষে জরিমানাও করা হচ্ছে।’

রংপুরে লবণের দাম বেশি নেয়ায় পৌনে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়

গাইবান্ধা:

গাইবান্ধায় লবণের দাম বাড়ার গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এই গুজবে ভোক্তাদের লবণ কেনার হিড়িক পড়েছে। এদিকে গুজব ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন প্রশাসন। এবং অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করায় দুই ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দিনভর জেলার বিভিন্ন হাট-বাজরে লবণ কেনার হৈচৈর চিত্র লক্ষ্য করা যায়। জেলার সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, পলাশবাড়ি, উপজেলা সদর এবং গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারগুলোতে লবণের মূল্য বৃদ্ধি এবং দুষ্প্রাপ্যতার গুজব সকাল বেলা থেকেই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এই গুজবের ফলেই ক্রেতারা অধিক পরিমাণ লবণ কিনতে শুরু করেন। এই সুযোগে কোনো কোনো উপজেলা সদর এবং গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিকেজি লবণের দাম ২০ থেকে ৬০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধায় প্রশাসক মো. আবদুল মতিন জানান, এ ধরণের গুজবের কোনো ভিত্তি নেই। লবণের কোনো সংকট বা মূল্য বৃদ্ধিরও কোনো কারণ নেই। তবে এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিং করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বগুড়া:

লবণ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে বেশি দামে বিক্রি এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ৪৪ জনকে আটক করেছে জেলা পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ এই অভিযান শুরু করে। রাত ৯টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৪৪ জন ব্যবসায়ীকে আটক করেছে।

এছাড়াও জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মেদ নিজেই সন্ধ্যার পর লবণের বাজার মনিটরিং করেছেন। অপরদিকে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বলেছেন দেশের কোথাও লবণের সংকট নেই। গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করলে বগুড়া জেলা পুলিশ কঠোর হস্তে তা দমন করবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করা হয়েছে।পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও অভিযান চালাচ্ছে।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, এ পর্যন্ত ১২ থানায় ৪৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অতিরিক্ত দামে লবণ কেনায় ১৩ ক্রেতা আটক হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশ কয়েক কেজি লবণ জব্দ করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, একটি চক্র লবণের মূল্য বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে হঠাৎ করেই বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। গুজব রোধে পুলিশসহ ভোক্তা অধিকার, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছেন। অভিযানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাতন বাজার হতে ১২ জন এবং শিবগঞ্জ বাজার হতে ১ জনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি এরফান আলী জানান, লবণের বিষয়ে গুজবে কান না দিতে জেলা জুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে এবং কোনো ব্যবসায়ী যদি লবণের অতিরিক্ত মূল্য রাখে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দিতে অনুরোধ করেন।

ঠাকুরগাঁও:

ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ে সিরাজ ও আইয়ুব নামের দুই ব্যবসায়ীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ঠাকুরগাঁও শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই দুই ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার করে এক লাখ টাকা জরিমানাসহ অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা।

কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিরাজ স্টোরের মালিক সিরাজুল ইসলাম ও আইয়ুব স্টোরের মালিক আইয়ুব আলী।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকা ও অধিক মূল্যে লবণ বিক্রির অপরাধে দুই দোকানদারকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এদিকে সকাল থেকে হঠাৎ করে লবণের দাম বাড়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে জেলার বিভিন্ন স্থানে বাজারসহ দোকানগুলোতে ক্রেতাদের লবণ কেনার উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

লালমনিরহাট:

লালমনিরহাটে গুজব ছড়িয়ে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করায় লবনের ডিলার সোনারগাঁ স্টোরের মালিক হাজী গোফরান আলীসহ ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, শহরের গোশালা রোডে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে অধিক দামে বিক্রি করার অপরাধে লবণের ডিলার সোনারগাঁ স্টোরের মালিক হাজী গোফরান আলী(৫৫) ও দুই ম্যানেজার লুৎফর রহমান(৪৫) ও ইয়াকুব আলীর(৪২) প্রত্যেককে এক বছরের করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অন্যদিকে, আজহারুল (৬৫), ওবায়দুল (৪০) ও খায়রুল (৩২) নামে তিন ব্যবসায়ীকে সাতদিন করে কারাদণ্ড এবং ব্যবসায়ী বিনয় কৃষ্ণকে (৩২) ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রাণী রায়।

এছাড়া একই কারণে আদিতমারী উপজেলার হাবীব স্টোরের মালিক নূর ইসলামকে (৩৮) ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন উপজেলা নির্বাহী মনসুর আলী। পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলায় আব্দুল কাদের (৬৫) নামে এক লবণ ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন উপজেলা নির্বাহী রবিউল হাসান।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, পরিবহন ধর্মঘটের দোহাই দিয়ে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে অধিক মূল্যে বিক্রি শুরু করে জেলার ডিলার সোনারগাঁ স্টোরের মালিক হাজী গোফরান আলী। পরে গুজব ছড়িয়ে খুচরা বিক্রেতাদের নিকট অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করার খবর পেয়ে পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হকসহ শহরের বিভিন্নস্থানে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

ফেনী:

লবণ নিয়ে গুজব প্রতিহত করতে ফেনীতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে তিন ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও একজনকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে লবণের ফেনী বড় বাজারে অভিযানে নামে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এসময় ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে গুজব ছড়ানোর দায়ে ইসলামপুর রোডের হক ট্রেডার্সের লবণ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ও মোল্লা এন্টারপ্রাইজের জালাল উদ্দিনের দুইজনের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় বিক্রেতাদের কোনরকম হুজুগে পরিস্থিতি সৃষ্টি না করার জন্য সতর্ক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক।

অপরদিকে সন্ধ্যায় বেশি দামে লবণ বিক্রি করার দায়ে সোনগাজীর বখতারমুন্সী বাজারে এক ব্যবসায়ীর ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক অজিত দেব বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় বাজারের ব্যবসায়ী নিতাই চন্দ্র সেনের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

জেলার দাগনভূঞা উপজেলার বাজারে লবণ নিয়ে গুজব ছড়ানোর সময় হাতনাতে এক যুবককে আটক করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুজন চন্দ্র রায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন।

নাটোর:

নাটোরে লবণের কৃত্তিম সংকটের অজুহাত দেখিয়ে খুচরা বিক্রেতাকে বিভ্রান্ত করার দায়ে বরুণ চন্দ্র নামে লবন কোম্পানী এসিআইয়ের এক বিক্রয় প্রতিনিধিকে আটক করা হয়।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাকে আটকের পর রাত সাড়ে ১০টায় সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

নাটোর সদর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসইই) আব্দুর রশীদ জানান,দুপুরে বরুণ নাটোর শহরের মাদ্রাসামোড় এলাকায় পরিবেশক কোম্পানী এসিআইয়ের লবণ দোকানে দোকানে সরবরাহের সময় বিক্রেতাদের লবণ সংকেটর কথা জানায়। এতে বিক্রেতারা বেশি দামে লবণ বিক্রি করা শুরু করে। পরে গুজব ছড়ানোর অপরাধে বরুণকে আটক করে একটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা বরুণকে থানায় হস্তান্তর করে।

আটক বরুণ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজের দোষ স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজশাহী:

রাজশাহীতে অবৈধভাবে লবণ মজুত করার দায়ে ১১ ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ ব্যবসায়ীকে এক বছরের কারাদণ্ড, দুই ব্যবসায়ীকে ছয় মাসের জেল ও চারজনকে জরিমানা করা হয়।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরী, জেলার তানোর, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাগমারা উপজেলায় প্রশাসনের অভিযানকালে তাদেরকে আটক ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে এ দণ্ড প্রদান করা হয়।

জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম জানান, অবৈধভাবে লবণ মজুত ও মূল্য বৃদ্ধির দায়ে নগরীর সাহেববাজারের মানিক ও আজমল হোসেন নামে দুই ব্যবসায়ীকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৬ মাস করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। গুজব ছড়িয়ে লবণের মূল্য বৃদ্ধির অপচেষ্টা ঠেকাতে নগরীতে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।

পুঠিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আফরোজ জানান, লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ঠেকাতে বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে মজুত এবং বেশি দামে লবণ বিক্রির দায়ে মঞ্জুর রহমান ও জহুরুল ইসলামকে আটক করা হয়। ভোক্তা অধিকার আইনে তাদের দু’জনকে যথাক্রমে ৫০ ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এদের মধ্যে একজনকে এক বছরের জেলও দেয়া হয়।

চারঘাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ নাজমুল হক জানান, লবণের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে অভিযানে সরদহ বাজারের ব্যবসায়ী রায়হানুল হক রান্টুকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করছিলেন। এছাড়া চারঘাট বাজারে শ্রীকৃষ্ণ ভাণ্ডারের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানু জানান, লবণ সংক্রান্ত গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তিনি বাজার মনিটরিংয়ে নামেন। এ সময় গোল্লাপাড়া বাজারে ‘চিমান্তর’ দোকানিকে ১০০০ টাকা এবং মুন্ডুমালা বাজারে রাকিব স্টোর মালিককে ২০০০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এছাড়া জেলার বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে লবণ মজুত ও বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে তিনজনকে আটক করে প্রশাসন। পরে তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তবে দণ্ডপ্রাপ্তদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

   

নীলফামারীতে বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বাসার ছাদ থেকে পড়ে আবু সাঈদ( ৪৫)নামে এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহত আবু সাঈদ গদা কেরানীপাড়া এলাকার জবান উদ্দিনের ছেলে।

মঙ্গলবার( ১৬ এপ্রিল)সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরআগে বিকালে শহরের পশু হাসপাতাল মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতদের স্বজন ও প্রদক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আবু সাইদ বিকালে হঠাৎ পশু হাসপাতাল মোড়ের শরিফুল (সুদারুর) পাঁচতলা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদের পর তিনি নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করতেন। স্বজনদের দাবী দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানসিক রোগে ভুগছিলেন।

এবিষয়ে কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)পলাশ চন্দ্র মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মরদেহ হাসপাতালে আছে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

;

ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে ট্রাক চাপায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগ করে নাটোর থেকে মোটরসাইকেল যোগে ঢাকার আশুলিয়ায় ফিরছিলেন পোশাক শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী। বাসার কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও পথিমধ্যে একটি ট্রাক কেড়ে নিল তাদের প্রাণ। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার বিশমাইল-জিরাব সড়কের বড় রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধ কারখানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী হাসি বেগম। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরের সিংড়ায়। দেলোয়ার হোসেন আশুলিয়ার রাতুল নিটওয়্যার লিমিটেড নামক পোশাক কারখানায় লাইনচিফ পদে চাকরি করতেন এবং তার স্ত্রী গৃহিনী। তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তারা আশুলিয়ার পুকুরপাড় বাগানবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, জিরাবো-বিশমাইল সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী দম্পত্তি জিরাব এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেলটি বড় রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় পৌছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে পড়ে যায়। এসময় একই দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাদের চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে।

নিহত দেলোয়ারের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আজকেই তারা গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছে। আমি তাদের লাশ নিয়ে যেতে চাই। আমরা কোন মামলা মোকদ্দমা চাইনা। আমরা লাশ পোস্টমর্টেম করাতে চাইনা।

আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছি। নিহতদের স্বজনরা এসেছেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

;

গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণে চীনা নাগরিক নিহত, আহত ৫



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরে একটি ব্যাটারি তৈরি কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্মরত প্রকৌশলী পুং জুকি (৫৩) নামে এক চীনা নাগরিক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ৫ জন।

খবর পেয়ে কাশিমপুরের সারাবো ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর এলাকায় টং রুইদা ইন্ডাস্ট্রিজ নামে ব্যাটারি কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ব্যাটারি কারখানা চালু করতে গেলে বয়লার বিস্ফোরণ হয়। এ সময় বয়লারের আশেপাশে থাকা পাঁচ জন গুরুতর আহত হন। পরে তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের উদ্ধার করে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে চীনা নাগরিক পুং জুকিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। বাকিদের ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

;

বরিশালে কর্মস্থলমুখী জনস্রোত অব্যাহত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদ উল ফিতরের আগে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকামুখী জনস্রোত ঈদ পরবর্তি সময়ে এখনো কর্মস্থলমুখী। পরিবহন বিশেষজ্ঞসহ মালিক ও শ্রমিকদের মতে এবারো ঈদ উল ফিতরের আগে পরে বরিশালসহ সন্নিহিত এলাকার সাথে রাজধানী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্তত দশ লাখ মানুষ যাতায়াত করছে। কিন্তু দেশের একমাত্র রেললাইন বিহীন বরিশাল বিভাগে এতদিন নৌপথেই ৭৫ ভাগ যাত্রী যাতায়াত করলেও পদ্মা সেতু চালু হবার পরে সড়ক পথেই ৬৫ ভাগ চলাচল করছে।

নদ-নদী বহুল বরিশাল অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী নৌপথে পৌনে দুশ বছরের জৌলুস হারাতে চললেও পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে’র পরে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল অঞ্চলের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর অবস্থা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় নয়। বরিশাল মহানগরী থেকে ৯০ কিলোমিটার অপ্রসস্ত জাতীয় মহাসড়ক অতিক্রম করে উত্তরে ভাংগায় বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত পৌছতেই ৩-৪ ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। ফলে পদ্মা সেতু চালু হবার পরে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকা রাজধানীর যতটা কাছে আসার কথা ছিল, তা এখনো সম্ভব হয়নি। এ মহাসড়কে যানবাহনের আধিক্য ৩ গুনেরও বেশী বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীরপাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সাথে বরিশাল অঞ্চলের সড়ক পরিবহনে বিড়ম্বনা আরো বেড়েছে।

ঈদকে সামনে রেখে গত কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি আরো নাজুক আকার ধারন করে। বরিশাল ও ভাংগা’র মধ্যবর্তি ৯০ কিলোমিটার মহাসড়কের বেশীরভাগ এলাকায়ই দিনরাত যানজট লেগে আছে।

এদিকে ঈদকে ঘিরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দরে অতীতের চীরচেনা দৃশ্য না থাকলেও ঈদ পরবর্তি সময়ে যাত্রীদের পদভারে মুখরিত বিগত কয়েকটি দিন। বরিশাল-ঢাকা নৌপথে রুট পারমিটধারী প্রায় ২৯টি যাত্রীবাহী নৌযানের অন্তত ১০টি ইতোমধ্যে হারিয়ে গেলেও অবশিষ্টগুলো কোনমতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। রোববারে বরিশাল নদী বন্দর থেকে ১২টি নৌযান যাত্রী বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবার পরে সোম ও মঙ্গলবারেও প্রায় একই পরিস্থিতি অব্যাহত ছিল। এমনকি বেশীরভাগ নৌযানই ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুনেরও বেশী যাত্রী বহন করলেও এবার নৌপথে ভাড়া বাড়ায়নি মালিক পক্ষ। নিকটজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরেফেরা শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ আগামী শনিবার পর্যন্তই বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকা থেকে কর্মস্থলে ফিরবেন বলে আশা করছেন সড়ক ও নৌ পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্টজনেরা। দুটি বাস টার্মিনাল ছাড়াও বরিশাল নদী বন্দরেও গত কয়েকদিন পা ফেলার স্থান নেই।

এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে এবার সড়ক পথে যে যার মত করে ভাড়া আদায় করছে। এমনকি অনেক নামী দামী সড়ক পরিবহন কোম্পানী রুট পারমিটের বাইরেও বাস নিয়ে আসছেন বরিশালসহ আশেপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে। ভাড়াও আদায় করছেন তাদের মত করেই। বরিশাল থেকে মাত্র ১৬৫ কিলোমিটার সড়ক পথে ঢাকার বাতানুকুল বাসে সাড়ে ১২'শ টাকা ভাড়া আদায় এখন স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ বিআরটিসি একই পথে ৬'শ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। তবে রাষ্ট্রীয় এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটি ঈদ উপলক্ষে কোন বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করতে পারেনি যানবাহন স্বল্পতায়।

রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটি দিনরাতে বরিশাল-ঢাকা সড়ক পথে প্রায় ৩০টি বাসে যাত্রী পরিবহন করলেও সরকারী নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসি এবারের ঈদে ছিলো সম্পূর্ণই নিরুদ্বিগ্ন। দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীন স্টিমার সার্ভিসের জন্য সংস্থাটির হাতে ৬টি যাত্রীবাহী নৌযান থাকলেও তার কোনটিই যাত্রী পরিবহনে নেই।

রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা-বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বরিশালের আকাশ পথে তার সাপ্তাহিক ৪টি ফ্লাইটের বাইরে ঈদের আগে ২টি বিশেষ উড়ানোর ব্যবস্থা করলেও ঈদ পরবর্তী সময়ে ছিল চুপচাপ। তবে বিগত পুরো সপ্তাহ জুড়েই যাত্রীর চাপে জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটিও ৩২'শ টাকার টিকেট সাড়ে ৮ হাজার টাকারও বেশী দামে বিক্রী করছে। এব্যাপারে বিমান-এর বরিশাল বিক্রয় অফিসের জেলা ব্যবস্থাপকের ল্যান্ডফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

;