২০ লাখ এমআর পাসপোর্ট কেনার প্রস্তাবে মন্ত্রিসভার ‘না’

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল/ ছবি: বার্তা২৪.কম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল/ ছবি: বার্তা২৪.কম

ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়া পর্যন্ত জনগণের চাহিদা মেটাতে ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। তবে তাদের সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি। তাদের দাবি, আগে একই সংখ্যক এমআরপি পাসপোর্ট কিনতে যে ব্যয় ছিল, তার চেয়ে এ বার ৬৭ শতাংশ ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে, যা অযৌক্তিক। তাই ব্যয় কমিয়ে প্রস্তাব রিভিউ করতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয় হয় ৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। অথচ গত ২৪ সেপ্টেম্বর একই পরিমাণ পাসপোর্ট ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। ওই সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪০ কোটি ৭১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।

কমিটির সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ৬৭ শতাংশ দাম বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে তাই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা বলেছি ব্যয় কমিয়ে প্রস্তাবটি আনার জন্য। এ জন্য তাদের ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, তাদের (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) আমরা পরামর্শ দিয়েছি যেহেতু সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এগুলো কেনা হবে, সেহেতু এক্ষেত্রে টেন্ডার প্রয়োজন হবে।

মন্ত্রী বলেন, ৬৭ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি অনেক বেশি। এতটা মূল্য বৃদ্ধি হলে আমাদের কমিটির পক্ষেও এটা অনুমোদন দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এটা সম্পন্ন করে আবার কমিটিতে পাঠাতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কেনার ব্যাপার ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের। কিন্তু এটা আজকে তারা প্রত্যাহার করে নিয়ে গেছে। পূর্বের দামের চেয়ে অনেক বেশি দাম বাড়ায় এটা করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে পাইলট বেসিসে ই-পাসপোর্টে যাচ্ছি। তবে ই-পাসপোর্টে আমরা এখনই লার্জ স্কেলে যেতে পারছি না। তাই আরও এমআরপি পাসপোর্ট প্রয়োজন।

তবে আজকের প্রস্তাবে ২০ লাখ এমআর পাসপোর্ট কেনার জন্য যে দাম ধরা হয়েছে, তা আগের তুলনায় অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে আরও চার-পাঁচটি কোম্পানির সাথে দর-কষাকষি একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ দর নির্ধারণ করে কমিটিতে পাঠাতে বলা হয়েছে।

সুরক্ষা সেবা বিভাগ প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, আরও ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। এই দফায় ২০ লাখ এমআরপির সাথে ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েলও কেনার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। এজন্য মোট ব্যয় ধরা হয় ৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। এই পাসপোর্টগুলো সরবরাহ করার জন্য ‘আইডি গ্লোবাল সলিউশন লিমিটেড (সাবেক ডি লা রু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড) প্রস্তাব করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর কর্তৃক আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এক কোটি ৫০ লাখ এমআরপি এবং দেড় কোটি লেমিনেশন ফয়েল ২৬৭ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় যুক্তরাজ্যের ডি লা রু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সাথে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের পর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর ২০১৩ সালের ১২ জুন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ডি লা রু ইন্টারন্যাশনাল দেড় কোটি এমআরপি ও দেড় কোটি লেমিনেশন ফয়েল সরবরাহ করেছে।

মন্ত্রিসভায় কমিটির বৈঠকের জন্য পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, বর্তমানে পাসপোর্টের চাহিদা প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার। চলতি নভেম্বর মাসের ১২ তারিখে মজুদ পাসপোর্টের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৯৯৩টি এবং লেমিনেশন ফয়েলের সংখ্যা ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০টি। দ্বিতীয় ভেরিয়েশন অর্ডার অনুসারে সরবরাহের অপেক্ষায় আছে ১৪ লাখ ৮ হাজারটি পাসপোর্ট বুকলেট, যা দিয়ে সর্বোচ্চ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাহিদা মেটানো সম্ভব হতে পারে। অন্য দিকে ‘ভেরিডস জিএমবিএইচ’র সাথে চুক্তি মোতাবেক পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু হয়ে সব আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে (দেশে ৬৯টি) এবং বিদেশে সব মিশনে (৮০টি মিশনে) চালু হতে আনুমানিক প্রায় ১৮ মাস সময় প্রয়োজন হবে।

তবে প্রাথমিকভাবে আগামী ডিসেম্বর হতে ই-পাসপোর্ট চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে সব পাসপোর্ট অফিসে এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়া পর্যন্ত ১৮ মাস জনসাধারণের চাহিদা অনুযায়ী এমআরপি প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। ই-পাসপোর্ট চালুর পর পর্যায়ক্রমে এমআরপি ইস্যু কমে যাবে এবং ই-পাসপোর্ট ইস্যু বৃদ্ধি পাবে বলে সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে।