বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলো



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,ঢাকা
বৈদ্যুতিক লাইন/ ছবি: সংগৃহীত

বৈদ্যুতিক লাইন/ ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দুই দিনে বিদ্যুতের চারটি বিতরণ কোম্পানির (বিপিডিবি, নেসকো, ডিপিডিসি ও ডেসকো) দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানি সম্পন্ন হলো। চারটি বিতরণ কোম্পানিই বিদায়ী বছরে মুনাফায় রয়েছে। যে কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখছেন না ক্যাবের (কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে দ্বিতীয় দিনের মতো অনুষ্ঠিত হয় ডেসকোর (ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি) দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি।

এই শুনানিতে অংশ নিয়ে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ডেসকো প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ গড়ে ৬ দশমিক ৮৩ পয়সা দরে কিনছে। আর বিক্রি করছে গড়ে ৭ দশমিক ৭৪ পয়সা দরে। এর মধ্যে ৩৭ পয়সা রয়েছে অন্যান্য আয়। বিতরণ খরচ ১ দশমিক ১৮ টাকা বাদ দিলেও ১০ পয়সা হারে মুনাফা থাকে। বিগত বছরে ডেসকো প্রায় ৬০ কোটি টাকা আয় করেছে। সরকারকে করপোরেট ট্যাক্স দিয়েছে ১৯ কোটি টাকা।

আবার হোল্ডিং কোম্পানি বিপিডিবি (৬৭ শতাংশের শেয়ারের মালিক) ও ব্যক্তি শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ট দিয়েছে। আবার তারা এসেছে প্রফিট বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে। আমরা যদি এই প্রস্তাব অনুমোদন দেই তাহলে কী হবে। কোম্পানির কি কোনো লাভ হবে। না হবে না। তারা শেয়ারহোল্ডারদের আরও প্রফিট বাড়িয়ে দেবে। এতে কোম্পানি কিংবা ভোক্তাদের কি লাভ হবে! কিছুই হবে না।

শুধু ৮ হাজার শেয়ারহোল্ডারের পকেট মোটা হবে। এই পকেট মোটাতাজা করার জন্য আমরা সমর্থন দিতে পারি না। এই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্পূর্ণ অন্যায্য এবং অযৌক্তিক। আমরা মনে করি এই দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। একইভাবে অন্যান্য বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থার ক্ষেত্রেও এমন বিষয় লক্ষণীয়। 

পাইকারি দাম না বাড়লে খুচরা দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। মানুষ এমনিতে নানা রকম পণ্যের বর্ধিতমূল্যে কষ্টে আছে। নতুন করে আর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দুর্ভোগ বাড়ানোর কোনো মানে হয় না বলে মন্তব্য করেন শামসুল আলম।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিতরণ অঞ্চলে (সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ) খুচরা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য সরাসরি কোনো আবেদন করেনি। বিপিডিবির প্রস্তাবে নতুন কিছু বিধি নিষেধ আরোপের আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে পুনঃসংযোগ ফি নির্ধারণ ও ডিমান্ড চার্জ বৃদ্ধি। বিতরণ সংস্থাটি বিদায়ী বছরে বিতরণ খরচ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ইউনিট প্রতি বিতরণ ব্যয় ছিলো ১.০৯ টাকা, বর্তমান পঞ্জিকা বর্ষে যা ১ দশমিক ০৫ টাকায় নেমে আসবে। এতে করে তাদের মুনাফা কিছুটা বাড়বে। 

গণশুনানিতে ডিপিডিসি তাদের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, যেহেতু তারা দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারেননি। তাই দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী বিতরণ কোম্পানি দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা প্রমাণে বাধ্য। অন্যান্য বক্তারাও তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

৩ নভেম্বর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আবেদনের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সবচেয়ে বৃহৎ এই বিতরণ প্রতিষ্ঠানটি তাদের আবেদনে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে, পাইকারি দাম না বাড়লে দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। পাইকারি দাম যদি বাড়ে তাহলে সমন্বয় করা যেতে পারে।

শুনানিতে কমিশনও তোপের মুখে পড়ে। কয়েকজন প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন তোলেন ইউটিলিটিগুলো যখন মুনাফায় তাহলে এই প্রস্তাব আসে কীভাবে। তাদের এসব অযৌক্তিক প্রস্তাব কমিশনের মিটিংয়েই বাতিল হওয়ার কথা। গণশুনানি পর্যন্ত আসায় কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করে। পাইকারি দাম নিয়ে আলোচনা চলছে সেটা এখনও চূড়ান্ত নয়। সেটাকে সামনে এনে প্রস্তাব দেওয়া যায় না।

জবাবে কমিশন সদস্য প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, আসলে তাদেরকে যে বিতরণ খরচ বিগত বছরে দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এমনও তো হতে পারে প্রফিট যদি বেশি থেকে থাকে, তাহলে কমে যাবে। নাকি কমে যাক এটা আপনারা চান না?

   

তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে আগামী রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এরই মধ্যে দেশের তাপমাত্রা অসহ্য অবস্থায় পৌঁছানোয় কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও ৭ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করছে প্রশাসন। এর মধ্যে স্কুল কলেজ খুললে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আগামী ৭ দিনের জন্য শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, এ বছর শিখন ঘাটতি পূরণে মাধ্যমিকে ১৫ দিন ছুটি কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রমজানের শুরুতে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অন্যদিকে, রমজানের প্রথম ১০ দিন ক্লাস চালু ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একইভাবে সব কলেজ ও মাদরাসায়ও ছুটি কমিয়ে রমজানের শুরুর দিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়। ছুটি শেষে রোববার থেকে পুরোদমে চালু হচ্ছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

 

;

বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার বাতাসে নেই স্বস্তির খবর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। কয়েক দিনের তীব্র গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢাকার বাতাস আবারও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ১২১ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে মেগাসিটি ঢাকা। আজ ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। গতকাল শুক্রবারও ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ছিল।

এদিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ১৭৮ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি শহর। এ ছাড়া ১৭৩ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই, ১৬৩ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, এরপর নেপালের কাঠমান্ডু ১৬২ স্কোর নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে। ১৫৮ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাই শহর।

একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।

 

;

শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের কৃষকেরা



খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিগুলো এখন সবুজ সমারোহে ভরপুর। ধানের পাশাপাশি সবজি চাষাবাদে এখন ব্যস্ত কৃষক। জমিতে বপন করা প্রতিটি শসা গাছের ডগায় ডগায় ঝুলছে ছোট বড় শসা। ২/১ দিন পর পর জমি থেকে শসা সংগ্রহ করছে সবজি চাষিরা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। জমিতে বপন করা শসা গাছের যত্ন নিতে ভর দুপুরেও শসা ক্ষেতে ব্যস্ত কৃষকেরা। জমিতে বপন করা গাছের ফলন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। এর পাশাপাশি কীটনাশকসহ ভিটামিন প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।


আশানুরূপ ফলনের পরও বাজারদর নিয়ে হতাশায় জেলার সবজি চাষিরা। কয়েকদিন আগেও প্রায় ১০০ টাকার কাছাকাছি ছিল প্রতি কেজি শসার দাম। তবে সপ্তাহ দু’য়েক সময় গড়ানোর আগেই শসার দাম নেমে এসেছে ৫০ টাকার নিচে। দ্রুত গতিতে শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের সবজি চাষিরা।

রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অনুকূল আবহাওয়া আর বাম্পার ফলনের কারণে দিনকে দিন মানিকগঞ্জে বেড়ে চলেছে শসাসহ নানা প্রকারের সবজির চাষাবাদ। তবে সার, কীটনাশক, বীজসহ শ্রমিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবজির দাম বাড়েনি বলে অভিযোগ সবজি চাষিদের।

মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাতেই কম-বেশি আবাদ হয় সবজির। তবে জেলার সাটুরিয়া, সিংগাইর এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাতে সবজি, বিশেষ করে শসার আবাদ হয়েছে বেশি এলাকায়। প্রথম দিকে শসার দাম বেশি হলেও আগামীর দিনগুলোতে শসার দর-দাম নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা।


মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাহেবপাড়া এলাকার সবজি চাষি মো. নয়া মিয়া বলেন, এক বিঘা জমিতে শসা আবাদের জন্য জমি তৈরি, বীজ বপন, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি শসা পাইকারি হিসেবে ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি শসা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। বাজারদর এই গতিতে কমতে থাকলে শসা চাষে নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আনোয়ার হোসেন নামের আরেক শসা চাষি বলেন, যারা আগাম শসার আবাদ করেছে তারা দামে শসা বিক্রি করতে পেরেছিল। এখনকার বাজারদর যা আছে তাতে কোনোরকমে চালানো যাবে। কিন্তু দরপতন আরও হলে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।

মোস্তফা হোসেন নামের এক বৃদ্ধ সবজি চাষি বলেন, বাজারে গেলে সবজির দাম হাতের নাগালের বাইরে মনে হয়। কিন্তু এই সবজি চাষাবাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর শ্রমিকের বাজারদর যে হারে বেড়েছে সেই তুলনায় সবজির দাম অনেক কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।


মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ১১৯১ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। সবজির আবাদ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সবজি আবাদের পরিমাণ আরও বাড়বে।

আলাদাভাবে শসা আবাদের জমির পরিমাণের তথ্য এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। তবে জেলায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। শসাসহ বিভিন্ন সবজি চাষে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে সহায়তার জন্য কৃষি বিভাগের লোকজন কাজ করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

;

‘প্রচণ্ড গরমেও আমরা আগুনের কাছে বন্দি’



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচণ্ড গরমে যখন মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে, ঠিক তখন তাদের আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে গরমকে উপেক্ষা করে কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাদের বয়স প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ছুঁই ছুঁই। কেউ কেউ পড়েছেন ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত, আবার কেউ কেউ টেন-ফেল। শেষমেশ তাদের জায়গা হয়েছে মিষ্টির কারখানার আগুনের চুলার পাশে। সমস্যা একটাই অভাব। যার কারণে আজ তারা আগুনের কাছে বন্দি অনেকটাই!

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) তালার পাটকেলঘাটা ভাগ্যকুল মিষ্টি কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে প্রথমে ঢুকতেই দেখা যায় দাউ-দাউ করে জ্বলছে বড়-বড় চুলা। চুলার ওপরে বসানো কড়াই আর তার মধ্যে আগুনের জ্বালের মধ্য দিয়ে ফুটছে দুধ। চুলার পাশে দাঁড়িয়ে সেই দুধ নাড়া দিচ্ছে অভিজিত গুড্ডুর মতো ছেলেরা।

চুলার পাশে একটু যেতেই মনে হলো আগুনের হলকা গায়ের ওপরে এসে পড়ল। মনে হচ্ছে আগুনের তাপে গায়ের লোমগুলো যেন পুড়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ আর অন্যদিকে চুলার আগুন। যেখানে মানুষ এক তাপদাহ সহ্য করতে নাজেহাল আর সেখানে তারা একে একে দুই তাপদাহের সঙ্গে লড়াই করছে। প্রচণ্ড এই তাপে যখন মানুষ নাজেহাল তখন চুলার পাশে দাঁড়িয়ে তারা ছোট গেঞ্জি গায়ে দিয়ে কাজ করছে।


তাদের একজন চুলায় দুধ জ্বাল দিতে থাকা অভিজিত মন্ডল গুড্ডু বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে আমরা আগুনের কাছে বন্দি। শুধু অভাবের কারণে। আমরা এখানে টাকার জন্য আগুনের সাথে লড়াই করছি। এই প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে আগুনের কাছে গেলে মনে হয় জীবন বের হয়ে গেল। এতো তাপ সহ্য করে আছি শুধুমাত্র টাকার জন্য। কারণ বাড়িতে বাবা প্যারালাইজড। অভাবের কারণে সেই ক্লাস ফাইভ থেকে বাইরে বের হয়ে পড়েছি। সেই থেকে আগুনের সাথে লড়াই। আগুনের পাশে থেকে-থেকে বেঁচে থেকেও শরীরটা পুড়ে গেছে। পুড়তে-পুড়তে এই শরীরে আগুন দিলেও আর পুড়বে না।

পাশের চুলায় দুধ ঢালতে থাকা অপু মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, দিনেরাতে মিলে মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুম হয়। বাকি ১৮ ঘণ্টা চুলার আগুনের পাশে থেকে কাজ করতে হয়। সকাল ১১টায় উঠে চুলা ধরিয়ে দুধ জ্বাল দিয়ে কাজ করতে করতে দুপুর ২টায় খেয়েদেয়ে একটু রেস্ট, তারপর আবার কাজ শুরু করে রাতে খেয়ে একটানা কাজ করে শেষ ভোর ৫ টা। এভাবে ঝড়, বৃষ্টি, গরম, বন্যা সবকিছু কাটছে আগুনের সাথে।

মিষ্টি গোল করতে থাকা বাঁধন রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রায় ২০-৩০ জন ছেলে এখানে কাজ করি। প্রায় সবার বয়স ১৮, ১৯, ২০ বছর ছুঁই ছুঁই। টাকার জন্য আমরা সবাই এখানে কাজ করছি। এটাই সত্যি যে টাকা হলে মানুষ সব জায়গাতে আটকায়। আমরা যেমন টাকার জন্য আগুনের কাছে আটকে গেছি। এটাই কপাল। এ দেহ আগুনে পুড়ে ছাই।

;