রংপুরে নীল-ললিতার প্রেমের পালানাট্য মঞ্চায়ন
মজলিসপুর গ্রামের সুন্দরী ললিতা বিবির সঙ্গে প্রেম হয় বিরামপুর গ্রামের যুবক নীলচানের। প্রেম পরিণতিতে নীলচান ললিতাকে বিয়ে করে নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পর মুখে মুখে ছড়াতে থাকে ললিতার রুপের প্রশংসা। ললিতার রুপের প্রশংসা এক সময় গিয়ে পৌঁছায় নীলচানের বাল্যবন্ধু আসগর আলীর কাছে।
আসগর আলী ললিতাকে দেখার জন্য আসের নীলচানের বাড়ি। ললিতাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় লম্পট আসগর আলীর। তিনি ললিতাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। এক সময় তিনি ফন্দি করে ব্যবসার নাম করে নীলচানকে নিয়ে যান রংপুর শহরে।
এদিকে ললিতাকে একা পেয়ে সুযোগ বুঝে আসগর আলী চলে আসেন নীলচানের বাড়িতে। তিনি ললিতাকে অনৈতিক কাজের ইঙ্গিত দিলে আসগর আলীর গালে চড় বসিয়ে দেন ললিতা।
এ অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আসগর একদিন ললিতার কাছে লোক মারফত খবর পাঠান, নীলচান রংপুরে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন, তিনি ললিতাকে দেখতে চান।
ললিতা এ কথা শুনে আসগরের পাঠানো লোকের সঙ্গে চলে যান রংপুর শহরে। ওই লোক আসগরের পরামর্শে ললিতাকে নিয়ে তোলেন আসগরের বাড়িতে। এক সময় ললিতার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে ললিতা কাছে থাকা ছুরির ভয় দেখিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন।
এতে আসগর আলী আরো প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন। ললিতাবে আটকে রেখে নীলচানের গ্রামে কুৎসা রটিয়ে দেন যে ললিতা তার (আসগর আলী) হাত ধরে পালিয়ে গেছেন।
তার কিছুদিন পর নীলচান বাড়িতে ফিরে ললিতাকে দেখতে না পেয়ে গ্রামের মানুষের কাছে শুনতে পান ললিতা আর আসগরের পালিয়ে যাওয়ার মিথ্যা কাহিনী। ললিতাকে যখন আসগর মুক্তি দেন, তখন বাড়ি ফিরে আসার পর নীলচান তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে তালাক দেন। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে ললিতা আত্মহত্যা করেন।
গ্রামের এমন সহজ সরল মানুষগুলোকে অবিশ্বাসের ফাঁদে ফেলে এভাবেই অনেক সংসার নষ্ট করে দেওয়া হয়- এমনই গল্পকে পালানাট্য ও ভাওয়াইয়ার সংমিশ্রণে তুলে ধরেছেন নীল-ললিতার গীতিনাট্যের রয়নাকার ও নির্দেশক সায়িক সিদ্দিকী।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের আয়োজনে দেশের ৬৪ জেলাব্যাপী জাতীয় নাট্যোৎসব-২০২০ এর অংশ হিসেবে রংপুর টাউন হল মঞ্চে 'নীল-ললিতার গীত' নাটকটি কারিগরি মঞ্চায়ন করে রংপুর নাট্য কেন্দ্র।
নাটকটির নির্দেশক সায়িক সিদ্দিকী বলেন, এ নাটকটি একটি নিরীক্ষাধর্মী প্রযোজনা। ঐতিহ্যবাহী কিসসা পালার আঙ্গিকে এ পালানাট্যটি তৈরি করা হয়েছে। ভাওয়াইয়ার সঙ্গে আমরা পালানাট্যেকে এক সুতায় গাথার চেষ্টা করেছি। এ নাটকের প্রতিটি গান আমরা ভাওইয়া রাখার চেষ্টা করেছি।
এ নাট্যোৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন- রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, নীলফামারী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি নাট্যজন রাজ্জাক মুরাদ প্রমুখ।