জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে পুলিশ হত্যার ৭ বছর
স্ত্রী উমেদা বেগম বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বড় মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী। টানাপোড়েনের সংসার। তবুও বাকি তিন সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখতেন পুলিশ কনস্টেবল মোজাহার আলী। কিন্তু কে জানত, তার স্বপ্নপূরণের আগেই তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে!
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর বিকেল ৩টার দিকে পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে জামায়াত-শিবির কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ এতে বাধা দেয়।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন রক্ষা করতে গেলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা হামলা চালিয়ে মোজাহার আলীর মাথা থেঁতলে দেয়। এতে পীরগাছা থানার ওসিসহ ৩৫ জন আহত হন।
ঘটনার পাঁচ দিন পর গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য মোজাহার আলী ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নসরতপুরের কাজীপাড়া গ্রামে। নিহত মোজাহার আলী ১৯৮০ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।
একই দিন জামায়াত-শিবিরের নির্মম হামলায় নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল তোজাম্মেল হোসেন। তারও স্বপ্ন ছিল এক ছেলে ও দুই মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। আর্থিক দৈন্যদশা থাকলেও স্বামীর সেই স্বপ্নপূরণে দমে যাননি তোজাম্মেলের স্ত্রী আরেফা বেগম।
জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় নিহত পুলিশ সদস্যদের সন্তানদের যোগ্যতা সাপেক্ষে পুলিশ বিভাগে উপযুক্ত পদে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
তোজাম্মেলের বড় ছেলে আলমগীর হোসেন একাধিকবার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি তার ভাগ্যে জোটেনি। এখন মেয়ে তানমিন আখতার তিথি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে নাশকতামূলক হামলায় চার পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই হামলায় নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল তোজাম্মেল হোসেন। তার বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের রহমতের চর। তিনি ওই গ্রামের মৃত আনছার আলীর একমাত্র ছেলে। ১৯৮৪ সালে তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।
নিহত পুলিশ সদস্য তোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী আরেফা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। সরকার আমার পরিবারের একজনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। আশায় আছি একদিন না একদিন সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, পীরগাছায় পুলিশ হত্যা মামলায় ১৫৯ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।