ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার: পাঠক বেশি, আসন কম

  • উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহ বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার, ছবি: বার্তা২৪.কম

ময়মনসিংহ বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার, ছবি: বার্তা২৪.কম

ময়মনসিংহ নগরের সার্কিট হাউজ মাঠের পশ্চিম প্রান্তে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারটি অবস্থিত। গণগ্রন্থাগারটির বাইরের পরিবেশটা বেশ মনোরম। মূল গেটের ডান পাশে সাইবোর্ডে দেয়া আছে সময়সূচি। এতে সপ্তাহের দু’দিন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছাড়া বাকি ৫ দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালু থাকার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়াও গেটের দুই পাশের দেয়ালে লেখা রয়েছে- ‘একটি ভালো বই, চিরদিনের উৎকৃষ্ট বন্ধু’, ‘বই কত আনন্দ দেয় অনেক শিক্ষিত লোক তা জানে না’, ‘বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক’।

বিজ্ঞাপন

কলাপসিবল গেটের চারপাশে দেখা গেল ফুলের টব। গ্রন্থাগারে রয়েছে দু’টি পাঠকক্ষ- একটি পুস্তক পাঠকক্ষ এবং অন্যটি শিশু পাঠকক্ষ ও পত্রিকা পাঠের জন্য। এর পশ্চিম কোনায় সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দীনের কক্ষ।

জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ শহরের ছোট বাজারে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবনে ১৯৬৯ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিষদ আঞ্চলিক কেন্দ্র ময়মনসিংহ নামে এ গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ওই নামেই পাঠক সেবা চলমান ছিল। এরপর ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার নামে এ গ্রন্থাগারের নামকরণ করে সরকার। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল থেকে সার্কিট হাউজ মাঠের পশ্চিম পাশের নতুন এই ভবনে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে কার্যক্রম শুরু হয়। যা পরে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার হিসেবে চলছে।

বিজ্ঞাপন

এই গ্রন্থাগারের কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে রয়েছে- সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, মুসলিম গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই গণগ্রন্থাগারটিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশি। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পাঠকে ভর্তি থাকে গ্রন্থাগারটি। তবে তাদের বসার জন্য আসন পর্যাপ্ত না থাকায় বই পড়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি কিংবা অনেককে ফিরে যেতে হয়।

 ছবি: বার্তা২৪.কম

গণগ্রন্থাগার সূত্র জানায়, এখানে একসঙ্গে মাত্র ১২০ জন পাঠক একত্রে বসে বই পড়তে পারেন। তবে প্রতিদিন গড়ে চার শতাধিক পাঠক আসায় তাদের জন্য আসন সংকুলান করা সম্ভব হয় না। এছাড়াও বিভিন্ন বয়সী নারী-শিশু ছাড়াও প্রবীণ পাঠকরা আসেন বই ও পত্রিকা পড়তে।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত এই গ্রন্থাগারের দুটি কক্ষে মোট ৬২ হাজার বই রয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা ও ভাষা আন্দোলন, জীবনী, রচনাবলি, সাহিত্য, উপন্যাস, কবিতা, সাংবাদিকতা, নারী, ধর্ম, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের বইয়ের আধিক্য বেশি। আছে বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, ময়মনসিংহ কর্নার, নারী কর্নার, রবীন্দ্র ও নজরুল কর্নার। গত অর্থবছরে এখানে ১২শ নতুন বই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অপরকক্ষে আছে শিশু কর্নার ও পত্রিকা পাঠের ব্যবস্থা। এ কক্ষে শিশুদের বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি একটি ইংরেজি ও একটি স্থানীয় পত্রিকাসহ শীর্ষস্থানীয় ১৩টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়।

গ্রন্থাগারে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৪৯ জন। শিশুদের জন্য সদস্য চাঁদা ২শ টাকা, শিক্ষার্থীদের ৩শ টাকা এবং সাধারণ সদস্যদের চাঁদা ৫শ টাকা। সদস্যরা দুটি করে বই বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়তে পারবেন, যা ফেরত দিতে হয় ১৫ দিনের মধ্যে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দীন জানান, ২০১৯ সালে জেলা গণগ্রন্থাগার থেকে এটি বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী লোকবল বাড়েনি এবং আধুনিকায়নও হয়নি। পাঠকদের আসন সংকট, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সেবা চালু, ভবন সম্প্রসারণ এবং লোকবল বৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বতন মহলে চাহিদাপত্র জমা দেয়া হয়েছে।