অবশেষে নওগাঁ শহরের যানজট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি যানজট কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন। শহরে প্রবেশের প্রধান ৮টি মোড়ে অবৈধ যানবাহনে চলছে পুলিশি তল্লাসী।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খাঁন জানান, শহরের সরিষা হাটির মোড় হয়ে বাটার মোড় থেকে লিটন ব্রিজ এলাকায় যেতে যানজটের কারণে আধা ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অথচ এই সামান্য অংশটুকু যেতে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় লাগার কথা। বহু বছর পার হলেও যানজট ও শহরের শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রশাসনের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে হাফ ছেড়ে বেঁচে থাকার মতো। যানজটে নষ্ট হওয়া কর্মঘণ্টা যত বেঁচে যাবে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড আরও বেগবান হবে। তাই এমন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে তিনি সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন জানান, শহরের প্রবেশদ্বার তাজের মোড়, কালীতলা, পাটালীর মোড়, ইদুর বটতলী, বিজিবি ব্রিজ, শিবপুর ব্রিজ, বরুনকান্দি ও আব্দুল জলিল শিশু পার্ক মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন। প্রতিটি মোড়ে অনিবন্ধিত যানবাহনগুলো চেক করা হচ্ছে। বৈধ কাগজপত্রাদি না থাকলে সেই সব যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং ব্যাটারী চালিত রিকশা ও টমটমগুলোকে শহরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এতে করে শহরের অভ্যন্তরীণ যানজট অনেকাংশই কমেছে।
নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি. এম. এ মমিন জানান, শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪হাজার। কিন্তু প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা ও ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন যানবাহন শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টির মাধ্যমে জনজীবনে চরম ভোগান্তি তৈরি হয়। এই দুর্ভোগ কমাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এতে করে শহরবাসীসহ অন্যান্য স্থান থেকে আসা পথচারীরা শহরের ভিতরে তেমন একটা যানজটের শিকার হবেন না।
পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন জানান, নওগাঁর দীর্ঘদিনের প্রধান সমস্যা হচ্ছে যানজট। যানজট বর্তমানে শহরবাসীসহ চলাচলকারীদের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে এবং পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতাদের সমন্বয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরবাসীসহ চলাচলকারীরা সুফল পেতেও শুরু করেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, অভিযানের ধারাবাহিকতা সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরের শৃঙ্খলা ফেরার সঙ্গে যানজট মুক্ত হবে তিলোত্তমা শহর নওগাঁ। এমন কর্মকাণ্ড সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে পরিচালানা করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি শহরবাসীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বপ্রথমে সবাইকে নিয়ম ও আইনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মানতে হবে। বর্তমানে সড়কের নিয়ম আর আইন ভাঙ্গাকেই আমরা ক্রেডিট মনে করি। এমন রেওয়াজ থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবেই আমরা নওগাঁকে একটি যানজট ও দূষণমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। নওগাঁকে একটি শান্তিপূর্ণ, সুন্দর ও ছিমছাম জেলা হিসেবে বিনির্মাণ করতে প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ড আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে বলে তিনি জানান।
ভারতের কোনো যুক্তিই নেই আমাদেরকে নদীর পানি না দেওয়ার বলে মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে ভারতকে চাপ দিতে হবে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘উজানে যৌথ নদীর পানি প্রত্যাহার: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভারতে যখন পানির চাপ থাকে, তখন জলাধারের গেট খুলে দেয়। আবার তাদের যখন পানি কম থাকে তখন গেইটগুলো বন্ধ করে দেয়। এটা তারা ইচ্ছামাফিক করছে, সেজন্য আমরা পানি পাচ্ছি না। এতে করে আমাদের চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চল দিন দিন মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ইউরোপ মহাদেশের অন্যতম প্রধান পরিবহন পথ দানিউব নদী। যে নদী জার্মানিতে উৎপত্তি হয়ে নেদারল্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়েছে। তাদের মধ্যে পলিটিক্যাল সমস্যা থাকতে পারে কিন্তু নদীর পানির হিস্যা নীতি আছে।
এসময় তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে কাজগুলো করছে, সেগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং। এগুলোতে জনগণের সাপোর্ট প্রয়োজন। পানির ব্যাপারে শুধু ফারাক্কা নয়, আরও অভিন্ন যে ৫৪টা নদী আছে সেগুলো যাতে ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী পানি পায় সেজন্য আমরা কাজ করবো।
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, নিউইয়র্কের আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
ডায়াবেটিস থেকে সৃ্ষ্ট চক্ষুরোগ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির পরীক্ষা ও চিকিৎসায় কক্সবাজার জেলার একমাত্র বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতাল কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতালে চালু হলো নতুন একটি ইউনিট।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সংস্থাটি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) ওই হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেরেক হডকি ইউনিটটি উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ এবং বায়তুশ শরফ হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক এম এম সিরাজুল ইসলাম।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি পরীক্ষা ও চিকিৎসা ইউনিটটি প্রতিষ্ঠায় অরবিস ইন্টারন্যাশনাল অলাভজনক এ হাসপাতালকে একটি ফান্ডাস ক্যামেরা দিয়েছে, যেটি ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, গ্লুকোমা ও ম্যাকুলার ক্ষয় নিরুপণে ব্যবহৃত হয়।
অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম বলেন, নতুন ইউনিটটি কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী জেলার ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করবে, যেখানে আগে এ ধরনের কোনো সুবিধা ছিল না।
ডেরেক বলেন, ভালোবাসা ও আন্তরিকতার সঙ্গে বায়তুশ শরফ হাসপাতাল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে, যার জন্য এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে পেরে অরবিস ইন্টারন্যাশনাল গর্বিত।
বায়তুশ শরফ হাসপাতাল গোটা কক্সবাজার জেলার মানুষদের চক্ষুসেবা দিচ্ছে, যেখানে ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে প্রায় ৩০ লাখ জনসংখ্যা রয়েছে। এদের মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে, যারা তাদের মাতৃভূমিতে চক্ষুসেবা থেকে বঞ্চিত ছিল।
ডা. মুনির বলেন, ভবিষ্যতে অরবিস বায়তুশ শরফ হাসপাতালের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চায় কারণ চোখের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এ দুটি সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে অনেক কিছু করতে পারবে। অরবিস যে ফান্ডাস ক্যামেরাটি বায়তুশ শরফ হাসপাতালকে দিয়েছে সেটি ফান্ডাস বা চোখের পিছনের অংশ অর্থাৎ রেটিনা, অপটিক নার্ভ, ম্যাকুলা ও রেটিনা রক্তনালীর ছবি তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়।
এ ছবির মাধ্যমে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, গ্লুকোমা ও ম্যাকুলার ক্ষয়ের মতো রোগ নির্ণয় করতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারেন।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, খুনি হাসিনা সারাজীবন শুধু নিজের পরিবারের গান গাইতে গাইতে ক্ষমতাটাকে অষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছিল। যেখানে গেছেন সেখানেই তার পরিবার নিয়ে কান্নাকাটি করেছে। তার পরিবারের ১৮ জন মানুষ, আর এই দুই হাজার জন মানুষ না! এদেরকে খুন করার সময় তার বুকটা একটু কাঁপেনি। আজ আমার যে ভাই শহীদ হয়েছে, যে বোন শহীদ হয়েছে, সেই শহীদ পরিবারের বাবা-মা ভাই বোনকে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা দেব?
শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আন্দোলনে বরিশাল বিভাগের শহীদ পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, খুনি হাসিনা সারাজীবন আজ থেকে ৫০ বছর আগের ১৯৭৫ সালের গল্প বলে ক্ষমতাকে সবসময় সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন। এখন তিনি দুই হাজার মানুষকে কীভাবে খুন করলেন। তিনি যদি দরদ বোঝেন তাহলে এ খুনগুলো কীভাবে করতে পারেন? যে রাজনৈতিক প্লাটফর্মকে সামনে রেখে তারা এ কাজগুলো করেছে তাদের কোনো অধিকারই নেই এই বাংলাদেশে চলার।
সারজিস আলম আরও বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে সব ভুলে যাই, ওই ষোল বছর ভুলে গেছি, আমরা ওই ৩৬ দিন ভুলে গেছি, এখন আমরা নতুন কিছু নিয়ে আছি। কিন্তু এই জবাব খুনি হাসিনাকে দিতে হবে, খুনি হাসিনার দোসরদের জবাব দিতে হবে। আর এই বিষয়গুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত একটি যৌক্তিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই বাংলাদেশে তাদের পুনর্বাসনের কথা যারা বলে আমরা মনে করি খুনি হাসিনার মতো তারা আরেক ধরনের ক্ষমতা পিপাসু লোভী। এই বাংলাদেশে তাদের বিচার হওয়ার প্রশ্নে তাদের একটা কথা হওয়া উচিত- তাদেরকে পুনর্বাসনের প্রশ্নে তাদের পক্ষে কারও সাফাই গাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা এটা আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও করতে দেব না।
এ সময় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন বরিশাল বিভাগের ৭৯ শহীদ পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। সারজিস আলম জানান, পর্যায়ক্রমে সব শহীদ পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, এই সহায়তা নিছক অর্থ নয়, এটা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।