গার্মেন্টস চালু রোববার, ভোগান্তি নিয়ে ফিরছেন শ্রমিকরা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যেই দেশের তৈরি পোশাক,নিটওয়্যার এবং টেক্সটাইল মিলস খাতসহ সকল কারখানা চালু করছে গার্মেন্টস মালিকরা।
রোববার (০৫ এপ্রিল) সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকে উপেক্ষা করে শ্রমিকদের বিপদের মুখে রেখেই কারখানা চালু করছেন মালিকরা। আর কর্মস্থলে ফিরতেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া এই শ্রমিকরা।
একদিকে করোনা আর অন্যদিকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায়, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার গার্মেন্টস শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে, রিকশায়, ভ্যান, অটো এবং মালবাহী ট্রাকে করে,গাজীপুর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কর্মস্থলে ফিরছেন শ্রমিকরা।
অথচ সরকার করোনার সংক্রমণ বিস্তার রোধে সারাদেশের গণপরিবহন বন্ধ। মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করার জন্য সারাদেশে সক্রিয় সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।
কিন্তু সব বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে রাজধানীমুখী এখন লাখো মানুষ। শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে পায়ে হেঁটেই ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে।
অন্যদিকে, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও আজ সকাল থেকে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় লেগেই আছে।
গাদাগাদি করে ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়া এসব মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে কতোটা মুক্ত তা নিশ্চিত না হয়ে এভাবে তাদেরকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়া কতোটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, শনিবার (০৪ এপ্রিল) সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে ঢাকার দিকে আসে। পথিমধ্যে তারা ছোট ছোট যানবাহন ব্যবহার করে আবার পায়ে হেঁটে আসছিল। এদের অধিকাংশই গার্মেন্টস শ্রমিক।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ৫ তারিখ থেকে গার্মেন্টস খুলবে। আগেই ঢাকায় যেতে গার্মেন্টস থেকে বলা হয়েছে। সে কারণে করোনার ভয় নিয়ে কষ্ট করেই রওনা হয়েছেন তারা। যেতে না পারলে চাকরি চলে যাবে।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসা এনায়েত উল্লাহ বলেন, কাল থেকে গার্মেন্টস কারখানা খোলবে। তাই ময়মনসিংহ থেকে হেঁটে, রিকশা করে ঢাকায় আসছি। তিনি বলেন, আমরা তাবলীগের স্টাইলে ২১জন ভালুকা থেকে হেঁটে এসেছি।
তিনি বলেন,'কারখানা চালু কাল থেকে,সময় মত না আসতে পারলে, চাকরি থাকবো না। গরিবের পেটে লাথি। কিসের করোনা কিসের কি? চকরি না থাকলে না খাইয়া মরতে অইবো'
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৫ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সব নিট গার্মেন্টস’ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় বিকেএমইএ। সে সময় বিকেএমইএ থেকে জানানো হয়েছিল, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে পরে কারখানা বন্ধের বিষয়ে আরও বিশদ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২৫ লাখ শ্রমিকের রোজগারের প্রতিষ্ঠান দুই হাজার ২৮৩টি কারখানার সংগঠন বিকেএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী রফতানীমুখী শিল্পকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত অর্থনৈতিক মন্দা থেকে রক্ষার জন্য বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এই শিল্পখাতের জন্য প্রদান করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের কারণে কোনো শ্রমিকের যেন কোনো রূপ ক্ষতি না হয়, সেজন্য কোনোভাবেই আতঙ্কিত না হয়ে, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে বিকেএমইএ-র সদস্যভুক্ত সব নিট পোশাক কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।