গার্মেন্টস কর্মীদের বিড়ম্বনা পিছু ছাড়ছে না
এতোদিনতো হাতে হাতেই বেতন নিতেন গার্মেন্টস কর্মীরা। এখন হঠাৎ করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার তাগিদ এসেছে। যখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া আর সবকিছুই বলা চলে বন্ধ।
এখন ছবি কোথায় গিয়ে তুলবেন, আর অন্যান্য কাগজপত্রই বা ফটোকপি করবেন কীভাবে? কিন্তু থেমে গেলে যে তার জীবন থেমে যাবে। এই ভয়-শঙ্কা মাথায় নিয়ে চার কিলোমিটার হেঁটে স্টুডিও আবিষ্কার করেছেন সাবিনা বেগম। সঙ্গত কারণেই স্টুডিওর নাম ঠিকানা প্রকাশ করা গেল না।
স্টুডিওর সাটার লাগানো, বাইরে অপেক্ষা করতে হবে। সুযোগ বুঝে তার ছবি প্রিন্ট করে দিতে চান দোকানি। আগেও কয়েকজন এসে সিরিয়াল দিয়ে বসে আছেন। আবার সাবিনার কাছে খোঁজ পেয়ে আরও কয়েকজন এসে ভিড় করেছেন স্টুডিওর সামনে।
স্টুডিও মালিক ভয়ে ভয়ে রয়েছেন, কখন না জানি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে পড়ে যান। দেখে-শুনে একজন একজন করে বিদায় করছেন। সাবিনা বেগম ছবি নিয়ে রওনা দিলেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। শিয়ালবাড়ি মোড়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গিয়ে দেখতে পেলেন লম্বা লাইন। কি আর করা, লম্বা লাইনেই দাঁড়িয়ে পড়লেন। আশপাশে আরও কিছু এজেন্ট থাকলেও আজ তাদের দোকান বন্ধ।
অন্য দিকে সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা দুলাল মিয়া। তিনি চাকরি করেন মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকার প্রিন্স গার্মেন্টসে। ১০ বছর হয়েছে তার চাকরির বয়স। তাদের ডাচ-বাংলা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়েছে। অফিস থেকেই ফরম দিয়েছে। সেই ফরম নিয়ে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কখন তার সিরিয়াল আসবে, সেই অপেক্ষায় আছেন।
দুলাল মিয়া থাকেন চেতনা মডেল একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায়। তারা যেখানে থাকেন, ওই এলাকায় এখনও কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি। তৈরি পোশাক খারখানার শ্রমিক ভোলার লালমোহনের দিদার আলী থাকেন কমার্স কলেজ এলাকায়। তিনিও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি। একই গার্মেন্টসের আরও জনা বিশেক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউই এখনও কোনো ধরনের ত্রাণ পাননি। তাদের আশপাশে কেউ পেয়েছেন বলেও তাদের জানা নেই।
গত মাসের বেতনের সঙ্গে ধার দেনা করে চলছে তাদের সংসার। বাসা মালিকরা চলতি মাসের ভাড়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেতন না পেলে তারা অনেকে বিপদে পড়বেন। আগে দোকানিরা বাকি দিতেন। এখন গার্মেন্টস বন্ধ থাকায় তারাও বাকি দিতে রাজি হচ্ছেন না। তাই সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে নির্ঘুম রাত পার করছেন অনেকে।
আবার কিছু গার্মেন্টস কর্মী বিকাশ ও রকেটের অ্যাকাউন্ট খুলতে ভিড় করছেন। তারাও ভাবছেন যদি বেতন দেয়, তাহলে এসব অ্যাকাউন্টে জমা দেবেন।
এতোদিন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেননি কেন জানতে চাইলে তারা বলেছেন, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে কি করব। যা বেতন পাই, ওই দিনেই গিয়ে বাসা ভাড়া, বাকি-বকেয়া শোধ করে হাতে টাকা থাকে সামান্যই। কখনও কখনও সব টাকাই শেষ হয়ে যায়। পুরো মাস আবার বাকিতে সংসার চলে।
এভাবে ঘাটতি থেকে তারা বের হতে পারেন না। কখনও ওভারটাইম করে বেশি আয় করেন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে। কাটিয়েও ওঠেন, কিন্তু অসুখ বিসুখে তাদের আবার ঘাটতি দেখা দেয়। আবার দুই ঈদে উৎসবে সামিল হতে গিয়ে কেউ ঘাটতিতে পড়েন। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়টি তাদের কাছে বিলাসিতার নামান্তর। কেউ কেউ একে বড়লোকি বিষয় বলে মনে করেন।