করোনা সংকটে পরিবহন শ্রমিকদের পাশে নেই মালিকরা
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসকরোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে দেশে চলছে সাধারণ ছুটি। ফলে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন। এমন পরিস্থিতিতে দিন এনে দিন খাওয়া পরিবহন শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে।
সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভর করে দিন পার করছেন তারা। শ্রমিকদের অভিযোগ, এমন সংকটে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, খোঁজখবরও নিচ্ছেন না পরিবহন মালিকরা।
করোনা রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহনসহ সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার পরিবহন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবহন মালিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলছে না কোনো সাহায্য। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারের ত্রাণের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। তবে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছেন বলেও জানা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, গাড়ির চাকা না ঘুরলে যেখানে আমাদের আয় রোজগার হয় না। সেখানে দিনের পর দিন গাড়ি বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা সাধারণ শ্রমিকরা। পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে পাচ্ছি না কোনো আশ্বাস, মিলছে না কোনো সাহায্য। এমন পরিস্থিতিতে অনাহারে দিন যাপন করতে হচ্ছে পরিবার নিয়ে। মাঝে মাঝে সরকারি ত্রাণ পাচ্ছি, সেগুলো দিয়ে কোনো রকমে দিন চলছে।
পরিবহন শ্রমিকরা আরও বলেন, পরিবহন সেক্টর এখন বন্ধ। তাই কোনো কাজ নেই। জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে বেকার হয়ে আছি আমরা। প্রথমে ধারদেনা করে সংসার চললেও বর্তমানে অবস্থা খুবই খারাপ। এ সময় সবারই টাকা দরকার, কেউ তাই ধার দিতেও চায় না। শুনেছি শ্রমিকদের কল্যাণের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এমন দুর্দিনেও ওই চাঁদা থেকে কেউ কোনো সাহায্য পেয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই।
সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে, যা আগামী দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে পরিবহন সেক্টরেও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছেন মালিক-শ্রমিকরা।
পরিবহন শ্রমিকদের এসব অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমরা পরিবহন মালিকরা কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তারপরও পরিবহন মালিকরা শ্রমিকদের নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছেন। তবে অনেক মালিক আছেন, যারা সহায়তা করছেন না। তাদের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বন্ধ থাকা পরিবহন খাতে দৈনিক ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবহন সেক্টর ও বেকার শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের কাছে বিশেষ প্রণোদনার দাবি জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, প্রথম দফায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তারপরা দেশে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে দুই দফা ছুটি বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।