ধামরাইয়ে দুধের কেজি ২০ টাকা, বিপাকে খামারিরা

  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এক মাসেই গরুর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

এক মাসেই গরুর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) রাজত্বে মুখ থুবরে পড়েছে সারা দুনিয়া। বন্ধ হয়ে গেছে সকল যোগাযোগ। বাংলাদেশেও এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ঘরে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সকল সরকারি, বে-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণ-পরিবহণ, হোটেল-রেস্তরা, দই, মিষ্টির দোকানসহ হাটবাজার। এতেই বিপাকে পড়েছে সাভার ও ধামরাইয়ে বানিজ্যকভাবে গড়ে উঠা গুরুর খামারগুলো।

ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় মাস যাবত চলছে অঘোষিত লকডাউন। অনেক গ্রাম গিয়েছে স্বেচ্ছায় লকডাউনে। ঘর থেকে বাহিরে আসছে না কেউ। পাওয়া যাচ্ছে না কোনো কাজের লোক। বিক্রি হচ্ছে না খামারিদের দুধ, বৃদ্ধি হয়েছে গরুর খাবারের দাম। এমন পরিস্থিতিতে খামার বাঁচানো ও গরু বাঁচানোর সাথে নিজেদের বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে খামারিদের।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সকালে সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় এক মাসেই গরুর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছে, ঠিক ঠাক খাবার নেই সামনে। দুধ সংগ্রহ করে ফ্রিজ ভর্তি করেছে খামারিরা। ফ্রিজ ভর্তি হওয়ায় দুধ আর রাখতে পারছে না খামারিরা। অবশেষে ৬০ টাকা কেজির দুধ বিক্রি করছে ২০ টাকায়। এমন অবস্থায় সাহায্যের আবেদন করেছেন এসব খামারিরা।

ঢাকার ধামরাইয়ের আদিয়া ডেইরি ফার্মের মালিক মো. আবদুল আহাদ বাবু বলেন, খামারের ২০টি গরুর খাবার ওষুধ ও শ্রমসহ প্রতিদিন ২১০০ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। আয় তো দুরের কথা খরচের টাকাই তো ওঠে না। সারাদিন ৫০০ টাকার দুধও বিক্রি করতে পারছি না। ২০ টাকা কেজিতেও দুধ বিক্রি করতে পারছি না। খাবার সংকটে গরুর স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এখন গরুর খাবার কিনতে গেলে তো মাথায় হাত। শ্রমিকরা ভাইরাসের ভয়ে গ্রামে চলে গেছে। এখন দিন ভিত্তিক চুক্তিতে বেশি দামে শ্রমিক নিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। গরু বিক্রির জায়গা বা হাটও পাচ্ছি না। সব মিলে খুব বিপাকে পড়েছি।

বিজ্ঞাপন
ধামরাইয়ে দুধের কেজি ২০ টাকা, বিপাকে খামারিরা
পাওয়া যাচ্ছে না কোনো কাজের লোক

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার খামারি ইমাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমার খামার বন্ধের পথে। যতটুকু মূলধন ছিলো সব দিয়ে গত একমাস খাইয়েছি। দুধ বিক্রি করতে পারি না। কম দামে বাড়ি বাড়ি দিতে হচ্ছে। তবুও ভাইরাসের ভয়ে কেউ কিনতে চায় না। মিষ্টির দোকান ও দইয়ের দোকান বন্ধ। যেগুলো দুধ বিক্রির প্রধান ক্ষেত্র ছিলো, সেগুলো ভাইরাসের প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে, আর দুধ বিক্রি না করতে পারলে খামারের খরচ জোগানো ও শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। তাই খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না'।

মিষ্টির দোকানদার শংকর বলেন, প্রায় ৫ মণ মিষ্টি বিক্রি অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার শো-রুম খুলতে দেয় না। আউট-লেটগুলো বন্ধ হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। তাই দুধের প্রয়োজন হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখবো। আর স্বাভাবিক হলেই দুধ কেনা শুরু করবো।

ধামরাইয়ের দই উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী মুকুল বলেন, আগের দই তো কিছু দিন থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে, নতুন করে দই বানাবো কিভাবে। খাওয়ার তো মানুষ নাই। বড় বড় অনুষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্ডার নাই, তাই দুধ কেনা বন্ধ করা হয়েছে। চাহিদা না থাকলে আসলে আমরা অসহায়। দুধ কিনে আমাদের রাখার বুদ্ধি নাই। যদি রাখার ব্যবস্থা থাকতো তাহলে না হয় এখন দাম কম কিছুটা কিনে রাখতাম।

এব্যাপারে ধামরাই উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তাদের সহযোগিতা করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একই সাথে গরু ও খামারিদের বাঁচাতে মিষ্টির দোকান নির্দিষ্ট সময়ে খোলার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।