করোনা আতঙ্কের মধ্যেই বিয়ে, খাওয়া হলো না ২ চেয়ারম্যানের
টেবিলে সাজানো থরে থরে খাবার। বিয়ে বাড়ির ভোজ বলে কথা! বাদশাহী পোলাও, কোরমা, খাসির রেজালা, চিকেন ঝাল ফ্রাই, গরুর ঝাল ফ্রাই, চিংড়ি ও মুরগির রোস্ট, ইলিশ ভাজা, কাবাব, ডিম, জর্দা, বোরহানি, দই, ফিরনি, সালাদসহ আরো কত কি!
সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের সালেপুর পশ্চিম পাড়ার ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদের বাড়িতে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) দুপুরের চিত্র এটি।
কিছুক্ষণ আগে বর এসেছে। এলাকাজুড়ে যখন করোনা আতঙ্ক তার মাঝেই কেবলমাত্র ওই বাড়িতে উৎসবের আমেজ। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকার মাঝেই মহা ধুমধামে আদুরে কন্যা সুমাইয়া আহমেদ সাদিয়ার (২০) বিয়ের আয়োজন করেছেন সালেহ আহমেদ।
উৎসব আরো জমে ওঠে বর ও কনের এলাকার প্রভাবশালী দুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর উপস্থিতিতে।
কনে পক্ষে উপস্থিত আমিনবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আর বর পার্শ্ববর্তী বনগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের নগরকোন্ডা গ্রামের হাসান আলীর ছেলে দেলোয়ার আহমেদের পক্ষে অভিভাবক একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম।
'একজন চেয়ারম্যান তো বিয়ে বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই বলছিলেন, আহ্ পোলাওয়ের কি ঘ্রাণ। খাঁটি ঘি নিশ্চয়ই। বাবুর্চি কোন এলাকার? কতদিন বিয়ের দাওয়াত খাইনা! আজ কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া যাবে!
তবে কপাল খারাপ! কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দূরে থাক, দুই হাতের কব্জিতে হাতকড়া পড়ার উপক্রম হয় তাদের। চটজলদি মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পেলেও বর ও কনেপক্ষের আত্মীয়কে জরিমানা হিসেবে গুনতে হয় ৮০ হাজার টাকা'- বেশ রসিকতা করেই জানাচ্ছিলেন একজন প্রতিবেশী।
এলাকাবাসী জানান, রাষ্ট্রের বিধি নিষেধ ভেঙে করোনা আতঙ্কের মধ্যে এলাকার দুই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বিয়ের আসরে যেন বাজ পড়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিতে।
বরযাত্রায় আসা অতিথিরা কেউ কেউ বিপাকে পড়েছে, কেউ বা খাটের নিচে পালিয়ে, কেউবা ভোঁ দৌড় দিয়ে রক্ষা করেন নিজেকে। তবে বিপাকে পড়েন বিয়ের আসরে উপস্থিত দুই ইউপি সদস্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরের এক আত্মীয় জানান, দেশে করোনাভাইরাসের মহামারি। আগেই বলছিলাম, এ পরিস্থিতির মধ্যে বিয়ের আয়োজনে করা ঠিক হবে না। কে শোনেন কার কথা!
আমাদের বলা হয়েছিল, কোন সমস্যা হবেনা। যাদের বিরোধিতা করার কথা তারাই এই বিয়েতে উপস্থিত থেকে পরের বরের হাতে কনেকে তুলে দেবেন। ওই দুই চেয়ারম্যান নিজেরাই উপস্থিত থেকে বিয়ের যাবতীয় ব্যবস্থা করবেন এমন আশ্বাসের মুখে আমাদের ওজর আপত্তি শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি। মহাধুমধামেই শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। বউ বাচ্চা নিয়ে এসে এখন বেইজ্জত হয়ে ফিরতে হচ্ছে!
এলিট ফোর্স র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় বিয়ে বাড়ির সকল আয়োজন। ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বিয়ের আসরে উপস্থিত থাকা বর ও কনের আট আত্মীয়কে
ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান জানান, দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় সরকার যেখানে অফিস-আদালত বন্ধ রেখে ঘরে থাকার মেয়াদ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে। বারবার সতর্ক করা হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে। আবার সরকারের এই নির্দেশ অমান্য করলে যেখানে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ জারি হয়েছে, সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের দুই চেয়ারম্যান উপস্থিতিতে জনসমাগম ঘটিয়েই এই বিয়ের আয়োজন নিঃসন্দেহে হতাশা ও দুঃখজনক।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে বিয়ে বন্ধসহ আর্থিক জরিমানা আদায় করেছি। আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে দুই চেয়ারম্যান কে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া আগে বিয়ের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনাও দেয়া হয় বলে জানান আনিসুর রহমান।