অগ্নিস্নানে করোনামুক্ত হোক বসুন্ধরা



অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নববর্ষ মানে নতুনের হাতছানি। তাই তো বসন্তের শেষে আবহমান বাংলার চিরায়ত রীতিতে মহাসমারোহে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে মেতে ওঠে বাঙালি। উৎসব প্রিয় বাঙালির জীবনে নববর্ষ এক আনন্দোৎসব।

কেননা, তা আসে নতুন আশা নিয়ে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন প্রত্যয় নিয়ে। সব অশুভ ও অসুন্দরকে পেছনে ফেলে বৈশাখ আসে নতুনের কেতন উড়িয়ে। তবে এবারের পহেলা বৈশাখ এসেছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে।

শহর কী গ্রাম- কোথায়ও এবার কোনো বৈশাখী উন্মাদনা নেই। নেই চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা ফেস্টুনসহ নানা থিমের ঢাউস সাইজের প্রাণীর প্রতিকৃতি।

পান্তা-ইলিশ নেই, আয়োজন করা হয়নি বারুণী (গ্রাম্য মেলা) কিংবা নাগরদোলারও; দেশজুড়ে আয়োজন নেই চড়ক পূজার। করোনা পানি ঢেলে দিয়েছে পাহাড়ে বৈসাবী বা বিঝু উৎসবেও। তাই মানুষের মুখেও হাসি নেই।

চারদিকে শুধু আতঙ্ক, বিষাদ আর নিস্তব্ধতা। এখন মানুষ ঘরে বন্দী; রাস্তাঘাট ফাঁকা, দোকানপাট-বিপণিবিতান সব কিছুই বন্ধ। কোনো কোনো জেলা-উপজেলা লকডাউন। অন্যান্য জায়গাও জনমানবহীন!

এরই মাঝে হয়তো আসছে স্বজনদের আক্রান্ত হওয়ার খবর। মৃত্যুভয়ে আক্রান্ত মানুষ, যন্ত্রণাক্লিষ্ট অসুস্থ শরীর, উদ্বিগ্ন স্বজনেরা এভাবেই দিনাতিপাত করছেন। কর্মহীন হয়ে না খাওয়ার জো খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের।

থুবড়ে পড়ছে দেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ এসেছে অনেকটা বিবর্ণ হয়ে। এরপরও ১৪২৭ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে হবে।
ঢাক-ঢোলের বাদ্যি কিংবা লালন, হাছন, করিমের গানের আসর বসছে না এবার। আয়োজন নেই মেলার, তাই তো বেজায় মন খারাপ মৃৎ শিল্পীদেরও। কারণ তাদের পকেটের অবস্থাও যে ভালো না!
বাঙালির পহেলা বৈশাখ উদযাপনের রীতি বেশ পুরনো। বাংলা সনের প্রবর্তন বিষয়ে অনেকেই বলে থাকেন, ভারতবর্ষে শশাঙ্কের সময় থেকেই বাংলা সাল (বিক্রম সাম্বাত পঞ্জিকা, সংস্কৃত ভাষায় লিখিত) অনুসারে রাজ্য শাসন হতো।

আবার এও জানা যায়, ভারতবর্ষের ক্ষমতা মুঘলদের হাতে এলে তারা ইসলামিক বা আরবি ক্যালেন্ডার ‘হিজরি’ অনুযায়ী রাজ্য পরিচালনা করতে শুরু করেন।
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর এবং তার পুত্র দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন হিজরি সাল মতেই দেশ পরিচালনা করেন।
তবে এর ব্যতিক্রম ঘটে তৃতীয় মুঘল সম্রাট জালালুদ্দিন মুহম্মদ আকবরের সময়ে। তিনি চান্দ্র মাসের ক্যালেন্ডার বদলে পুনরায় চালু করেন বাংলা ক্যালেন্ডার।

সূত্রমতে, হিজরি পঞ্জিকা চান্দ্র মাসভিত্তিক হওয়ায় ৩৫৪/৩৫৫ দিনে বছর হয়, যা সৌরবছরের (৩৬৫/৩৬৬ দিনে বছর) চেয়ে ১০/১১ দিন কম। ফলে হিজরি পঞ্জিকা অনুযায়ী, একই মাস ঘুরে ঘুরে কয়েক বছর পরে ভিন্ন ঋতুতে আসে। এতে কৃষকের খাজনা দিতে অসুবিধায় পড়তে হতো। কারণ, কৃষকেরা ফসল বিক্রি করে খাজনা দিতেন। চান্দ্র মাসের বছর একেক সময় একেক ঋতুতে শেষ হয় বলে তখন ফসল তোলার কাল ঠিক থাকে না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য বিচক্ষণ সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ সিরাজিকে হিজরি চান্দ্র বর্ষপঞ্জিকে সৌরবর্ষপঞ্জিতে রূপান্তর করার দায়িত্ব দেন।

এভাবেই সৌরবর্ষপঞ্জি বাংলা পঞ্জিকার নবযাত্রা শুরু হয়। খাজনা আদায়ের জন্য তিনি প্রচলন করেন ‘হালখাতা’র। যা হাল-আমলে দোকান বা গদিতে বাকি পরিশোধের অন্যতম বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান বা হিসাব লেখার খাতা খোলার দিন।

হালখাতার দিনে একে একে দেনাদারেরা আসেন, বাকি পরিশোধ করেন, দোকানিরা তাদের মিষ্টি পরিবেশন করেন এবং কুশলাদি বিনিময় করেন। এভাবে একটি আনন্দঘন এবং উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে অতীতের সব দায়দেনা মিটিয়ে ব্যবসায়ীদের নতুন বছরের যাত্রা শুরু হয়।

পৃথিবীতে প্রচলিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি কোনো না কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত, কিন্তু বাংলা নববর্ষ একান্তই সাংস্কৃতিক ও বৈষয়িক।
এর সঙ্গে ধর্মীয় অনুষঙ্গ নেই। এ উৎসবের প্রচলন ঘটে কৃষি কাজ ও খাজনা সংগ্রহের ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। কালক্রমে তা পরিণত হয় বাঙালির সর্বজনীন ও প্রাণের উৎসবে।

প্রাচীনকালে এটি ছিল মূলত গ্রামীণ উৎসব, তখন গ্রামে গ্রামে মেলা বসত, নানা রকমের খেলাধুলার আয়োজন হতো। এমনকি পহেলা বৈশাখের দিন শুরু হওয়া কোনো কোনো মেলা পরবর্তী সপ্তাহ দুয়েক ধরেও চলত। এখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেলা বসে।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে অনেক গান কবিতাও হয়েছে। পহেলা বৈশাখ নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,

‘এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’

তবে পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীত চর্চা নিষিদ্ধ করা হয়। তা উপেক্ষা করে ১৯৬৭ সালে ছায়ানটের শিল্পীরা রমনার বটমূলে সমবেত হয়ে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’- গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান।

এরপর ঢাকায় রমনার বটমূলে, নববর্ষ উদযাপনের প্রথা শুরু হয়। যার ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। বিশেষ করে বড়বড় শহরগুলোতে। ধীরে ধীরে এ উৎসবে যুক্ত হয় পান্তা-ইলিশ, নানান রকমের ভর্তাও।

আর ১৯৮৯ সালে এর সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে চারুকলা ইনস্টিটিউট। তবে প্রথম এ শোভাযাত্রা শুরু হয় যশোরে।
বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা দেশজুড়ে বেশ সমারোহে উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব রুখতে এবার দেশে সব ধরনের জনসমাগের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

সংস্পর্শের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোই নতুন সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে কোভিড-১৯ এর কমিউনিটি ট্র্যান্সমিশন হয়ে গেছে। ফলে তা ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আমাদের অবশ্যই উচিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। তবেই এর সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হতে পারে।

কারণ নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের সাফল্যের মূলে এ পদ্ধতি-ই। সিঙ্গাপুর এগিয়ে গেছে আরও এক ধাপ। তারা সংক্রমণের উৎস খুঁজে বের করেছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কারা সংস্পর্শে এসেছে, তাদেরও তালিকাভুক্ত করে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ৩৪৫ করোনা রোগীর কেউ মারা যায়নি।
আমাদের দেশেও ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ১৭ মার্চ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়।

করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানান পহেলা বৈশাখসহ জনসমাগমের অনুষ্ঠান বাতিল করতে।

এরই মধ্যে জোরদার করা হচ্ছে করোনা পরীক্ষা। পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষার সরঞ্জামাদিও রয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৩। আর মৃতের সংখ্যা ৩৯। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, পৃথিবীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকারে যেভাবে চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। আবারও পৃথিবী নির্মল হবে। জেগে উঠবে শুনশান শহর-নগরের কোলাহল।
দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ছোটখাটো কারখানা বন্ধ রয়েছে। স্থগিত রয়েছে গণপরিবহন ও প্লেন চলাচল। এরই মধ্যে আমদানি-রপ্তানির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

প্রবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পুরোপুরি ধস নেমেছে পহেলা বৈশাখ কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যেও। এ অবস্থায় অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণের কথা ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশবাসীকে তিনি বলেন, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। কোনো গুজবেও কান দেবেন না। এছাড়া ঘরে অবস্থান করে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে নববর্ষকে বরণ করুন।

অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা বেশ যুগোপযোগী ও বাস্তবধর্মী। তিনি বলেছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের অবশিষ্ট তিন মাসে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে এ চারটি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলো হচ্ছে-১. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা। এ ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।

২. আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন। অর্থনৈতিক কর্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।

৩. সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি। এর মাধ্যমে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে।

৪. মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা। অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বাড়ানো হবে, যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে। আসন্ন অর্থনীতির ওপর ধাক্কা মোকাবিলায় এ উদ্যোগ বেশ কার্যকর বলেই মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগের এ সময়ে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা জোরদারেরও কথা বলেছেন। বীজ, সার, কীটনাশকসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণের ঘাটতি যাতে না হয় এবং সময় মতো কৃষকের হাতে যাতে পৌঁছায়, সে ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন তিনি।
এছাড়া চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকেরা যাতে উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পান, সেজন্য গত বছরের চেয়ে এবার দুই লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধান কেনা হবে। ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য। এতে দেশের কৃষক বাঁচবে।

কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের জন্য সরকার প্রধান যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করার কথা বলেছেন, তাতেও লাভবান হবেন কৃষকেরা। তবে প্রকৃত ও তৃণমূলেও যাতে কৃষকেরা এর সুবিধা ভোগ করতে পারেন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তিতে করলা জাতীয় তিতা খাবার খেয়ে পুরনো বছরকে বিদায় দেওয়া হয়। আর নতুন বছরে মিষ্টিমুখ করে, ভালোমন্দ খেয়ে নতুন আশায় বুক বাধেন মানুষ।

এ দুর্যোগ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমরাও নববর্ষে এমনই এক নতুন আশায় বুক বাধতে চাই যে করোনায় প্রতিদিন যেমন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, কিংবা মৃত্যুবরণ করছেন, তেমনি সুস্থ হয়ে ঘরেও ফিরছেন। ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, করোনাভাইরাসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সারা বিশ্বে সেরে উঠেছেন চার লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ। (সূত্র:www.worldometers.info)।

আমাদের দেশের মানুষও সেভাবেই সেরে উঠবেন। আর নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে এমনটাও প্রত্যাশা করি। ১৪২৭ বঙ্গাব্দে আমরা কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার পঙক্তির মতো, ‘... কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর!–’ সেই সুন্দর দিন দেখতে চাই। যেখানে সবাই জয়ধ্বনি করবে জীবনের, মানবতার। সব গ্লানি, জরা মুছে ভবিষ্যৎ মঙ্গলপানে পতপত করে উড়বে নতুন দিনের কেতন!

লেখক: শিক্ষাবিদ; উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর।

   

বাস চাপায় নিহত চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর পরিবার ৫ লাখ টাকা করে পাবে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
বাস চাপায় নিহত চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর পরিবার ৫ লাখ টাকা করে পাবে

বাস চাপায় নিহত চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর পরিবার ৫ লাখ টাকা করে পাবে

  • Font increase
  • Font Decrease

 

বাস চাপায় নিহত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দুই শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চুয়েট কর্তৃপক্ষ, চুয়েটের ছাত্র প্রতিনিধি, বাস মালিক সমিতি, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জেলা প্রশাসকের বৈঠকে হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি খুব শিগগিরই এ সড়ক সম্প্রসারণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, এছাড়াও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় মন্ত্রী নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়াও আহত শিক্ষার্থীরা পাবেন ৩ লাখ টাকা। কালকের মধ্যেই আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্রসহ ফরমপূরণ করে পাঠিয়ে দিবো। দুই একদিনের মধ্যে আমরা সে টাকা পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো বলে আশা করছি।

;

রংপুরে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২ যুবদল নেতা কারাগারে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নাশকতার মামলায় কারাদণ্ড প্রাপ্ত রংপুরের দুই যুবদল নেতা আত্নসমর্পন করলে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এ আসামিরা আত্মসমর্পণ করলে বিচারক কৃষ্ণ কান্ত রায় তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

দণ্ড প্রাপ্তরা হলেন–মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ জহির আলম নয়ন ও জেলা যুবদলের সহসভাপতি তারেক হাসান সোহাগ।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পরিদর্শক (কোর্ট) পৃথীশ কুমার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে হরতালে নাশকতা ও ককটেল রাখার অভিযোগে বিএনপির পাঁচ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। এ সময় মামলার আসামি জহির আলম নয়ন ও তারেক হাসান সোহাগ পলাতক ছিলেন।

এ বিষয়ে নগর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন বলেন, একটি সাজানো মামলায় জহির আলম নয়ন ও তারেকের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীদের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে দূরে রাখাতে বর্তমান সরকারের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। বিএনপি নেতা কর্মীরা অচিরেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ সরকারকে উৎখাত করা হবে।

;

মোংলায় ‘রসু খাঁ’ খ্যাত টিএ ফারুকের মনোরঞ্জনে শতাধিক নারী!



Ashish Biswas
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘ভাড়াটে গুণ্ডা’ দিয়ে স্ত্রীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে, বাগেরহাটের মোংলার বহুল আলোচিত ‘রসু খাঁ’ খ্যাত শিল্পপতি টিএ ফারুকের (তালুকদার আখতার ফারুক) বিরুদ্ধে।

বহুবিবাহের নায়ক এ শিল্পপতির বিরুদ্ধে রয়েছে, নারী কেলেঙ্কারির নানা অভিযোগ। কখনো নিজে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন আবার কখনো অধীনস্থ কর্মচারীদের বিয়ে করিয়ে নারীদের রক্ষিতা হিসেবে বানিয়ে রাখছেন তিনি।

আলোচিত এই টিএ ফারুকের সর্বশেষ লালসার শিকার হয়েছেন সুমি আক্তার (২৫) নামে দুই সন্তানের এক জননী। উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের এ নারীর সঙ্গে বছর দুই আগে ফারুকের পরিচয় হয়।

এরপর নানা প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সংসার ভেঙে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর ফারুকের জলসাখানা শতরূপা বরফ কলের দ্বিতীয়তলার ভবনে ওঠেন স্ত্রী সুমিকে নিয়ে। এখানে বছর দেড়েক ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু সুমির চোখে ধরা পড়ে স্বামী টিএ ফারুকের বহু নারীগামিতা। আর এ নিয়ে হঠাৎ করে শুরু হয়, পারিবারিক দ্বন্দ্ব। এক পর্যায়ে স্ত্রী সুমিকে তাড়াতে শুরু করেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমন কী গত শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে তীব্র তাপদাহের মধ্যেই স্ত্রী সুমিকে ঘর থেকে বের করে তালা ঝুলিয়ে দেন।

পরে বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যস্থতায় সুরাহা হয় এবং ফের ঘরে ওঠেন সুমি।

টিএ ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছেন তার সর্বশেষ স্ত্রী সুমি আক্তার, ছবি- বার্তা২৪.কম

সর্বশেষ, সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ১০টায় ২৫/৩০ জনের একদল ‘ভাড়াটে গুন্ডা’ সুমির ঘরে হানা দিয়ে তাকে মারধর করে সাদা স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী হুলুস্থূল কাণ্ড ঘটে শতরূপা বরফ কলে। রাতেই প্রতিবেশীরা সুমিকে উদ্ধার করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সুমি আক্তার এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টির আমলে টিএ ফারুকের (তালুকদার আখতার ফারুক) উত্থান হয়। বিগত কয়েক দশক তিনি এ রাজনৈতিক দলটির উপজেলা সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি কয়েক দফায় রাজনৈতিক খোলসও বদল করেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।

টিএ ফারুক পেশায় একজন শিল্পপতি ও আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী। কিন্তু তার নেশা মোবাইল ফোন ও দালালদের মাধ্যমে কিশোরী ও নারীদের সুকৌশলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা। এরপর নিজের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করেন।

এভাবে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের অসংখ্য নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে ‘টক অব দ্য টাউন’-এ পরিণত হয়েছেন টিএ ফারুক।

নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে দিনরাত মোংলা পৌর শহরের শ্রম কল্যাণ রোডের তার জলসাখানায় আড্ডা চলে। এ নিয়ে অতিষ্ঠ এলাকার আশপাশের লোকজন।

নারীদের সঙ্গে প্রেম, অতঃপর ভোগ-বিলাসের তার এই কাজে সহযোগিতায় নিযুক্ত আছেন ১৫/২০ জনের একটি দালাল সিন্ডিকেট।

এ সিন্ডিকেট মোংলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অসহায় গরিব পরিবারের সুন্দরী মেয়েদের বাড়ি-জমিসহ মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা নিয়ে আসেন ফারুকের জলসাখানায়। সেই জলসাখানা ঘিরে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে ‘মিনি যৌনপল্লী’।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন রহস্যজনকভাবে চুপ থাকায় ফারুকের এই অপকর্ম চলে আসছে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শতরূপা বরফ কল ও হোটেল সিঙ্গাপুর এবং চৌরঙ্গী হোটেলসহ একাধিক স্থানে টিএ ফারুকের এরকম ঘাঁটি রয়েছে।

টিএ ফারুকের বয়স এখন ৭০-এর ঘরে। তার নামে বহু নারীগামিতা নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা থাকলেও টিএ ফারুকের বিয়ের সঠিক তথ্য কেউ নিশ্চিত করে দিতে পারেননি।

ফারুকের সর্বশেষ স্ত্রী সুমি আক্তার জানান, এ পর্যন্ত তার স্বামীর (টিএ ফারুক) শতাধিক বিবাহের খোঁজ পেয়েছেন তিনি। এছাড়া আরো শতাধিক নারীর সঙ্গে তার অবৈধ পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিএ ফারুকের হোটেল ম্যানেজার সোহাগ জানান, তার বস যখন যা নির্দেশ করেন, তখন তাই-ই করতে হয় তাকে। এক্ষেত্রে তার কোনো দোষ নেই। তবে টিএ ফারুকের সর্বশেষ স্ত্রী সুমি আক্তারকে তিনি ‘ম্যানেজ’ করেছিলেন বলেও জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে মোংলা পোর্ট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম জানান, টিএ ফারুকের সর্বশেষ স্ত্রী সুমিকে নিয়ে পারিবারিক সমস্যার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

মোংলা উপজেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের সভাপতি এইচএম দুলাল বলেন, টিএ ফারুকের বরফ কলে দিন-রাত উঠতি বয়সের নারীদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছে। এতে এলাকার সামাজিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ বিষয় প্রশাসনের নজরদারিসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না জানান, নারীদের প্রতি তার এমন অসম্মান সামাজিকভাবে নৈতিক অবক্ষয় ও দুঃখজনক। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

টিএ ফারুকের বিরুদ্ধে স্ত্রী সুমি আক্তারের অভিযোগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম। তিনি জানান, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সব বিষয়ে জানতে টিএ ফারুককে (তালুকদার আখতার ফারুক) একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। এরপর বক্তব্যের জন্য তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর আবাসিক হোটেলে গেলে (টিএ ফারুক) পরে কথা বলবেন বলে দরজা বন্ধ করে দেন ফারুক।

;

চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৫০ ভাগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের মার্চ মাস পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি শতকরা ৫০ ভাগ। এসময় জাতীয় গড় অগ্রগতি হয়েছে ৪২ ভাগ এবং গত বছর একই সময়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি ছিল ৪২ ভাগ।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

সভায় আরও জানানো হয়, চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৮০টি প্রকল্পের ৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে ৬৯৮ কোটি টাকা এবং পার্টনার প্রকল্পে ৬৬০ কোটি টাকা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। সঞ্চালনা করেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। এসময় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং সংস্থা প্রধানগণসহ প্রকল্প পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্প পরিচালকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প যথাসময়ে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, পিছিয়ে থাকলে চলবে না। আর্থিক ব্যয় ঠিকমতো করতে হবে। আর্থিক অগ্রগতির পাশাপাশি ভৌত অগ্রগতিও দেখতে হবে এবং কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন প্রকল্প পরিচালক পিছিয়ে থাকলে বা কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং প্রয়োজনে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করা হবে।

;