ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইল ঘরবন্দী পহেলা বৈশাখ
রমনার বটমূলে গান নেই, লাল পেড়ে সাদা শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে নাগরিক উদযাপন নেই। রাস্তা ভরা আমোদী মানুষ নেই, নেই চারুকলার জমকালো মঙ্গল শোভাযাত্রা। কোনো কিছুই নেই তবুও বৈশাখের তীব্র দাবদাহে এসেছে নতুন বছর। করোনাকালের এই নববর্ষে বাংলাদেশ দেখলো একটি ঘরবন্দী বৈশাখ। ঘরবন্দী বৈশাখের নগরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো হয়ে রইল একটি অন্য রকম ইতিহাসের সাক্ষী।
ঐতিহাসিক এই বৈশাখে নগরীর রমনা বটমূল, শাহবাগ, চারুকলা ও টিএসসি ঘুরে দেখা যায় এমন জনমানব শূন্য নাগরিক চিত্র।
১৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকাল ১১টায় রমনা এলাকা ছিলো একেবারেই সুনসান জনমানব শূন্য। বন্ধ রাখা হয়েছে রমনা পার্কের সবগুলো গেট। এমন কি গণমাধ্যমকর্মীদেরও প্রবেশাধিকার নেই রমনার বটতলায়। এবার যে ভোর বেলায় ছায়ানটের আগমনে এসো হে বৈশাখ গানে মেতে ওঠবে না বটমূল সেটা পূর্বেই নির্ধারিত ছিলো। রমনার বটমূলের বৈশাখী রূপ ছিলো একেবারেই অনুপস্থিত।
শাহবাগসহ নগরীর সব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়গুলোতে ছিল না নাগরিক মানুষের প্রাণখোলা সেই উদযাপন। রাজধানীতে চলছিলো গুটি কয়েক রিকশা ও জরুরি কাজে নিয়োজিত পরিবহনগুলো। এছাড়া চোখে পড়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থান। শাহবাগ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সবার ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে আমরা রাস্তায় আছি। পয়লা বৈশাখে কোনো ধরনের গণজমায়েত যেন না হয় সেদিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
চারুকলায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নেই কোনো আয়োজন। মঙ্গল শোভাযাত্রার কোনো আয়োজন না হলেও আসছে বছর দ্বিগুণ উদযাপন হবে এমন প্রত্যাশা রেখেছে চারুকলা।
তবে ‘ডিজিটালি’ মঙ্গল শোভাযাত্রার একটি পোস্টার তৈরি করে তার মাধ্যমে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। যাতে সব ভয়ের বিপরীতে মানুষের জয়গানের কথা উল্লেখ করছে চারুকলা অনুষদ। সেই পোস্টারে এবারের শোভাযাত্রায় মূলমন্ত্র করা হয়েছে, ‘মানুষ ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু মানুষ পরাজিত হয় না’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় একেবারেই জনমানব শূন্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আর গণমাধ্যম কর্মীদের ছাড়া বৈশাখের এই দিনে কাউকেই দেখা যায়নি টিএসসিতে । এসময় কথা হয় প্রথম আলোর আলোকচিত্রী সাইফুল ইসলাম রনির সাথে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এই পেশায় যুক্ত আছি, প্রথমবারের মতো এমন উৎসবহীন পহেলা বৈশাখ দেখলাম। যা বাঙালি জাতির জীবনে ইতিহাস হয়ে থাকার মত। তবে করোনার এই সময়ে গণজমায়েত নিষিদ্ধ একটি যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ বলে মনে করছি।
ঘরে বসে ব্যতিক্রমী বাংলা নববর্ষ উদযাপন করছে এবার মানুষ যে উদযাপনে কোনো বাহুল্যতা না থাকলেও রয়েছে প্রত্যাশা। সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা জানিয়েছে করোনাকালের এমন সময়ে নতুন বছর যেন নিয়ে আসে ‘অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’র বার্তা!