৩১ পদের উপহারে করোনা রোগীকে ইউএনও’র নববর্ষের শুভেচ্ছা
তিনটি ডালিতে সাজানো ফুল, নতুন গামছা, মুড়ি-চিড়াসহ ৩১ পদের উপঢৌকন। তার উপরে কাগজে লেখা- ‘শুভ নববর্ষ-১৪২৭’, শুভেচ্ছান্তে- জনাব মো. ওলিউজ্জামান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুঠিয়া, রাজশাহী।’
রাজশাহী বিভাগে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীকে মানসিক শক্তি যোগাতে এমন অভিনব প্রক্রিয়ায় বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওলিউজ্জামান। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) ইউএনও নিজে ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে উপহার সামগ্রী ঘরের দরজায় রেখে আসেন।
বাড়ির সামনে থেকে ইউএনও ফোনে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথাও বলেন। জানান বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। ভয় না পেয়ে তাকে মানসিক সাহস জোগানের পরামর্শ দেন। জানিয়ে আসেন- ‘ভয় নেই, উপজেলা প্রশাসন তার পাশেই আছে। করোনাকে জয় করে ফিরে আসুন আমাদের কাছে।’
আক্রান্ত ব্যক্তির (৪৫) বাড়ি পুঠিয়ার জিউপাড়া ইউনিয়নের বগুড়াপাড়া গ্রামে। ওই ব্যক্তি পেশায় একজন দর্জি। তিনি ঢাকার শ্যামলীতে একটি দোকানে কাজ করতেন। হালকা জ্বর ও সর্দি নিয়ে সম্প্রতি গ্রামে আসেন।
রোববার (১২ এপ্রিল) রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ল্যাবে তার নমুনা পরীক্ষা করা হলে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তিরসহ এলাকার ৪৩টি বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান লকডাউন করা হয়। এরই মধ্যে পহেলা বৈশাখে মঙ্গলবার ইউএনও মো. ওলিউজ্জামান আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ির সামনে যান।
উপহার হিসেবে ঘরের দরজার সামনে রেখে আসেন চাল, ডাল, শাক-সবজি, তেল, মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মুড়ি-চিড়া, কলা, খেঁজুর গুড়, ফুল, নতুন গামছাসহ ৩১ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। তিনটি ডালিতে সাজিয়ে এসব নিয়ে যাওয়া হয়।
জানতে চাইলে ইউএনও মো. ওলিউজ্জামান বলেন, ‘যদিও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এবার পহেলা বৈশাখে কোনো ধরনের উৎসব করার সুযোগ নেই। কিন্তু এটা তো অবশ্যই বাঙালির কাছে বিশেষ একটা দিন। সেই দিনে আক্রান্ত ব্যক্তিরও আনন্দ-উৎসব করার কথা ছিলো। কিন্তু এই দিনটা তার কাটছে হতাশায়। তাই সাহস দেওয়ার জন্যই আমি গিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হবার পরই আমরা বাড়িটি লকডাউন করি। তখন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দেয়া হয়। তারপরেও মানসিক শক্তি জোগানোর জন্য আবারও উপহারসামগ্রী নিয়ে গিয়েছি। খারাপ সময় কাটিয়ে যেন পুরো বছরটা তার ভালো কাটে সেই প্রত্যাশা করেছি।’
পুঠিয়ার এই ব্যক্তি রাজশাহী বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি শনাক্ত হবার পরের দিন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় নারায়ণগঞ্জ ফেরত আরেক ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা শনাক্ত হলেও দুজনেরই শারীরিক অবস্থা ভালো। তাই বাড়িতেই তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।