সাভারে পাড়া-মহল্লায় বিনামূল্যে মিলছে সবজি
থরে থরে হরেক রকমের সবজি সাজানো রয়েছে। লাউ, কুমড়া, বেগুন, আলু, কাঁচা মরিচ, ঢেঁড়স, টমেটো, চিচিঙ্গাসহ আরও অনেক সবজি। সঙ্গে আছে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ডিম এবং নানা রকমের নিত্যপণ্য।
তবে দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। করোনাভাইরাসের সংকটে দুর্মূল্যের বাজারে এর সবই মিলছে বিনামূল্যে। তবে শর্ত একটাই। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকতে হবে।
প্রতিবন্ধী, কর্মহীন, অসহায়-দুস্থ, এমনকি চরম এই পরিস্থিতির মধ্যে কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারেন না- সমাজের এমন মানুষরাও পাচ্ছেন এই সহযোগিতা।
বেশ কিছুদিন ধরে এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে সাভারের আনাচে কানাচে।‘মানবতার সবজি বাজার’ নামে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন নিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান।
তার এই প্রচেষ্টা এখন অনুপ্রেরণার আলো হয়ে সাভারের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে আতিকুর রহমান বলছেন, এই কৃতিত্ব তার নয়। ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীর। যারা দুঃসময়ে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা যার সার্বিক সহযোগিতা, দিকনির্দেশনা আর অনুপ্রেরণায় ব্যতিক্রমী কার্যক্রম নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যেও মানুষের পাশে রয়েছি, তিনি হলেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্র নেতা মঞ্জুরুল আলম রাজীব। তার নির্দেশনাতেই সাভারের আনাচে-কানাচে মানবতার এই সবজি বাজার চালু হয়েছে।’
শনিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে সাভারের আড়াপাড়ার মোড়, সিটি সেন্টারের পেছনে, ব্যাংক কলোনি, পাবলিক লাইব্রেরির সামনে এই ‘মানবতার সবজি বাজার’ দেখা গেছে। সভারের বিভিন্ন স্থানে এমন আরও সবজি বাজার রয়েছে।
জানা গেছে, ঘরে বসেই বিনামূল্যে এসব সবজিসহ নিত্যপণ্য পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তরা। আর এতে খুশি তারা।
রংপুরের রেজিয়া আক্তার জানান, তিনি স্থানীয় একটি ভাতের হোটেলে থালাবাসন পরিষ্কার করার কাজ করতেন। স্বামী নেই। কাজ না থাকায় দুই সন্তান নিয়ে কোনো রকমে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তার। ছাত্রলীগের এই উপহারের কথা কোনো দিন ভুলবেন না তিনি।
ছাত্রলীগের এই উদ্যোগে রেজিয়া আক্তারের মতো অসংখ্য মানুষের ঘরে এখন চাল-ডাল-সবজি পৌঁছে যাচ্ছে।
এদিকে সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমানের পরিচালনায় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে এ কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব।
তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের ছাত্রলীগ। জননেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি সত্ত্বেও আতিকুরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা যে দৃষ্টান্ত রেখেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের এই উদ্যোগ এখন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা যদি মানবতার জন্য এভাবে সকলে যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি তাহলে খুব সহজেই এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করা সম্ভব।’
আতিকুর রহমান জানান, ‘দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই আমাদের রাজনীতি। এই সংকটে মানুষকেই যদি বাঁচাতে না পারি তাহলে কাদের জন্য রাজনীতি করি?’
যতদিন এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় ততদিন ‘মানবতার সবজি বাজারের’ মতো এমন মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, দেশ করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে না পড়তেই নিজের কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামেন আতিকুর রহমান। হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে সচেতন করেন জনসাধারণকে। নিজেই বিভিন্ন যানবাহনে জীবাণুনাশক স্প্রে করেন। মানুষের মাঝে বিতরণ করেন মাস্ক ও স্যানিটাইজার।
এরপর পরিস্থিতি একটু জটিল হতেই দুস্থদের ঘরে ঘরে চাল, ডাল লবণের মতো নিত্যপণ্যের উপহার সামগ্রী নিয়ে গেছেন। এর পাশাপাশি চালু রেখেছেন ‘মানবতার সবজি বাজার’।