যমুনায় বালু উত্তোলন, ৩০৬ কোটি টাকার বাঁধ হুমকিতে
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ সংলগ্ন স্থান থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের আওতায় ৩০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়ছে।
সম্প্রতি সরকারের একটি সংস্থার অনুসন্ধানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনে নেতাকর্মী। এদের মধ্যে অনেকই রয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানাগেছে, যমুনা নদীর ভাঙন থেকে সারিয়াকান্দি উপজেলাকে রক্ষার জন্য প্রধান মন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের আওতায় কামালপুর ইউনিয়নের রৌহদহ হতে কুতুবপুর ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদী শাসন করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৬ সালে এই বাঁধ নির্মাণ কাজে ৩০৬ কোটি টাকা ব্যয় করেন। শুষ্ক মৌসুমে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বাঁধের পূর্ব পার্শ্বে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে চর জেগে ওঠে। আর এই চরে বালু দস্যুরা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনে রাতে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছেন।
স্থানীয়রা জানান, বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতরা সবাই সরকার দলীয় নেতা-কর্মী। ফলে কেউ তাদের কাজে বাঁধা দিতে আসেন না। গত বছর দুদকের একটি দল চরের মধ্যে অভিযান চালিয়ে উত্তোলন করা বালু জব্দ করে। তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে জড়িতদের তালিকা তৈরি করে নিয়ে যায়। এরপর কয়েক মাস বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। কিন্তু নভেম্বর মাস থেকে জব্দ করা বালু বিক্রি হয়ে যায় এবং আবারো বালু উত্তোলন শুরু হয়। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দিনে বালু উত্তোলন করা হয় এবং রাতের আঁধারে ট্রলি ও ট্রাক যোগে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।
সরকারি সংস্থার অনুসন্ধানে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত যাদের নাম এসেছে তারা হচ্ছেন, সারিয়াকান্দির কালীতলা ঘাটে ২টি বালুর পয়েন্টে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহান সাগর, সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন ও সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য আনছার আলী মাষ্টার।
কুতুবপুর বালুর পয়েন্টে জড়িত চন্দনবাইশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাদৎ হোসেন দুলাল, কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজিউল হক ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চন্দনবাইশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী হিরো। রৌহদহ বালুর পয়েন্টের সাথে জড়িত কামালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম, কামালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব মন্ডল, চন্দনবাইশা ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা বাবুল মিয়া, চন্দনবাইশা ইউনিয়ন বিএনপির নেতা দেলোয়ার হোসেন ও সোনামিয়া।
জড়িতদের কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেন, চর থেকে বালু উত্তোলন করা হয়, এতে বাঁধের কোন ক্ষতি হবে না। বরং বর্ষা মৌসুমে নদীর নাব্যতা ফিরে পাবে। তারা আরো বলেন, বালু উত্তোলন করে সেগুলো সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সরবরাহ করা হয়।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন অবৈধ। আমরা কয়েক জনকে শনাক্ত করেছি। তাদের নামে থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হবে।