জানাজা পড়াননি ইফার ৫ আলেম, ইউএনও’র আবেগঘন স্ট্যাটাস!
করোনার উপসর্গে মৃত্যু
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়া গ্রামে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ইদ্রিস আলী নামে এক ব্যক্তির জানাজা ও দাফনে আসেননি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) পাঁচ আলেম। পরে স্থানীয় এক মসজিদের ইমামের মাধ্যমে জানাজা শেষে মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এর আগে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফনের জন্য ইফার ওই পাঁচ আলেমকে নিয়েই একটি কমিটি গঠন করেছিল উপজেলা প্রশাসন। এরপরও তারা ওই মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়াননি। এতে তাদের বিষয়ে স্থানীয় মানুষের মাঝে বইছে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়।
বুধবার (২২ এপ্রিল) সকালে করোনার উপসর্গ নিয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন ইদ্রিস আলী। দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে তার শরীরে করোনা আছে কিনা জানতে নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) পাঠিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো ফল পাওয়া জানা যায়নি।
জানাজা ও দাফন শেষে ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. উসমান গনি। বার্তা২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি...... পাঁচজন আলেমই অপারগতা প্রকাশ করে চলে গেলেন!!!!!
মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়া গ্রামে আজ একজন করোনা সন্দেহভাজন ব্যক্তি মারা গেলেন। ইনালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পরীক্ষার জন্য আজ তার স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে কিন্তু ফলাফল আসেনি। মেহেরপুর জেলা ইসলামী ফাউন্ডেশন (ইফা) কর্তৃক করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফনের ক্ষেত্রে মুজিবনগরের জন্য আলেমদের নিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোপূর্বে একদিন আমার অফিসে ডেকে তাদের ব্রিফিংও করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের জন্য আজ ইফা কর্তৃক গঠিত পাঁচজনসহ মোট ছয়জন আলেমকে ডাকা হয়। করোনা সন্দেহে মৃত্যুর কথা শুনে পাঁচজন সদস্যই অপারগতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, আগে থেকে তাদের বলা হয়নি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দাফন করতে হবে।
আমি তাদের অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম, যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি হয়ত করোনা আক্রান্ত না, শুধু সন্দেহের কারণে স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া এই কমিটিতো শুধু করোনার কারণে মৃত্যু বা করোনা সন্দেহ মৃত্যু ব্যক্তিদের দাফনের জন্য গঠিত হয়েছে। তথাপিও নানা অজুহাতে তারা একজন-দু’জন করে আমার কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান। আমরা তখন খুব বিপদে পড়ে যাই এবং অত্যন্ত নিরুপায় হয়ে পড়ি।
তখন ডিসি স্যারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে আমি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনজন একসঙ্গে মরদেহ দাফনের জন্য যাত্রা করি। হুজুরদের জন্য আনা পিপিই (পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) স্থানীয় মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের মধ্য থেকে চার যুবককে পরানো হয়।
জানাজা পড়ানোর জন্য আমরা নিজেরাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মাওলানা তৌহিদুল ইসলাম, ইমাম, গোপালনগর জামে মসজিদ এসে জানাজায় ইমামতি করেন। অনেক ধন্যবাদ হুজুরকে। অতঃপর আমরা তিনজন কর্মকর্তা ও পাঁচজন যুবক মিলে মরদেহ দাফন করলাম। শুধু একটি বিষয় অজানা রইল। পাঁচজন আলেম আমাদের কি শিক্ষা দিয়ে গেলেন তা বুঝতে পারলাম না।’
উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলায় বুধবার প্রথম একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তার বাড়ি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ইদ্রিস আলীর গ্রামের প্রতিবেশী গ্রাম বল্লভপুরে।
গত মঙ্গলবার মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার শরীরের নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ ফলাফল দেয় যবিপ্রবি ল্যাব কর্তৃপক্ষ। ফলাফল পেয়ে ওই ব্যক্তির বাসাসহ আশেপাশের ছয়টি বাসা ও ব্র্যাক অফিস লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।