গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ও তিন সন্তানকে গলা কেটে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে র্যাবের সদর দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন— কাজিম উদ্দিন (৫০), মো. হানিফ (৩২), মো. বশির (২৬), মো. হেলাল (৩০) এবং মো. এলাহি মিয়া (৩৫)। এছাড়াও পিবিআই কাজিম উদ্দিনের ছেলে পারভেজকে (২০) গ্রেফতার করে।
র্যাব গ্রেফতার আসামিদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, ১টি হলুদ রঙের রক্তমাখা গেঞ্জি, ১টি জিন্সের প্যান্ট, ৩টি লুঙ্গি এবং ১টি আংটি উদ্ধার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতকরা খুনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।
তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধ করে বেড়াতেন, তারা সবাই জুয়াড়ি। তারা প্রবাসী কাজলের বাড়ির পাশে নিয়মিত মদ সেবন করতেন ও আড্ডা দিতেন।
গ্রেপ্তার ৫ আসামিকে বুধবার দুপুরে পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বুধবার বিকেলে ৫ আসামিকে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এক নম্বর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আদালতের বিচারক শেখ নাজমুন নাহার শুনানি শেষে প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে তাদের পিবিআই অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
গত ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকায় মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান বংশোদ্ভূত স্মৃতি ফাতেমা (৩৮), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওরিন (১৩) ও প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলের (৮) গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার পরদিন কাজলের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত খুনিদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা (নম্বর ২৮) দায়ের করেন।
র্যাবের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে স্ত্রীর কাছে ২০-২২ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন, এমন ধারণা থেকেই কাজলের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন কাজিম ও হানিফ। মিশন বাস্তবায়নের আগে আসামী বশির, হেলাল, এলাহিসহ কয়েকজন চূড়ান্ত বৈঠক করে কিলিং মিশনে কাজিমের ছেলে পারভেজকে যুক্ত করেন।
গত ২২ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে কাজলের বাড়ির পিছনে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একে একে জড়ো হতে থাকেন হত্যাকারীরা। প্রথমে দৈহিক গঠনে ছোট পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। হানিফ মাদারগাছ ও পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিঁড়ির ঢাকনা খুলে অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ির পেছনের ছোট গেট খুলে দেন। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি এবং আরও কয়েকজন পিছনের গেট দিয়ে বাড়িতে ঢোকেন।
কাজিম এবং হেলালসহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢোকেন এবং কাজিমের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাতেমাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে হুন্ডিতে আসা টাকাগুলো দিতে বলেন। ফাতেমা এত টাকা নেই জানিয়ে কক্ষের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচ থেকে ৩০ হাজার টাকা বের করে দেন।
এরপর ঘাতকরা ফাতেমার স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ শুরু করেন। তখন বাড়ির অন্য কক্ষগুলোতেও লুটতরাজ চলছিল। বশির ও এলাহিসহ আরও একজন ভিকটিম ফাতেমার মেয়ে নূরাকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। তাকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়।
অন্যদিকে বশিরসহ আরও একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওরিনকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। আসামি পারভেজও হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণে অংশ নেয়। কিলিং মিশনে তারা ছাড়াও অংশ নেয়া কয়েকজনের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেনি র্যাব।
র্যাবের দেয়া তথ্যমতে, ফাতেমা ও তার দুই মেয়ে কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়। ধারালো অস্ত্র ও ঘরে থাকা বটি দিয়ে উপুর্যপুরি কুপিয়ে ও গলাকেটে মা ও দুই মেয়েকে হত্যা করা হয়।
সবশেষে ৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ফাদিলকে হত্যা করা নিয়ে ঘাতকরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। পরে কোনও সাক্ষী না রাখার সিদ্ধান্তে ফাদিলকেও হত্যা করা হয়। মিশন শেষ করে লুটে নেয়া মালামাল ও টাকা কাজিম নিয়ে নেয়। সুবিধাজনক সময়ে এসব অন্যদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়।
র্যাব জানায়, মো. রেজোয়ান হোসেন কাজল (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়াতে আছেন। তিনি প্রবাসে থাকাকালীন ১৮-১৯ বছর পূর্বে ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি ফাতেমাকে (৩৮) বিয়ে করে দেশে নিয়ে আসেন।