করোনা ঝুঁকি নিয়ে মেঘনায় ইলিশ শিকারে অর্ধ-লক্ষাধিক জেলে
ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকা সংরক্ষণে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিলগ্নে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে নেমেছেন অর্ধ-লক্ষাধিক জেলে। একটি নৌকায় বিভিন্ন পরিবারের সদস্য রয়েছে। ফলে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর রয়েছে করোনা ঝুঁকি।
এদিকে, নদীতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও করোনা নিয়ে মাছ শিকারে যেতে সরকারের বাড়তি কোনো নির্দেশনা নেই। যেহেতু বাজারে মাছ উঠছে, হাট বসছে ও বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ সরবরাহ হচ্ছে, সেজন্য জেলেদেরও নদীতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
কিন্তু নদীতে একই নৌকাতে অনেক জেলেকে থাকতে হয়, এতে করোনা ঝুঁকি রয়েছে বলে জানায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর থেকে রক্ষা পেতে জেলেদেরকে সচেতনতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
জেলা সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় প্রায় ৬০ হাজার মৎস্যজীবী রয়েছে। তবে সরকারি হিসেবে এ জেলায় ৪৫ হাজার ৭৭১ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এরমধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময় মাত্র ২৪ হাজার ২৪৭ জন জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কার্ড থাকা সত্ত্বেও বিপুল জেলে খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য বাধ্য হয়ে নিষেধাজ্ঞাকালীন নদীতে নেমেছেন জেলেরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা রক্ষায় চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এ সময় জেলেরা নদীতে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকেন। আর অবসর সময়ে তারা নৌকা মেরামত, জাল বোনা ও ছেঁড়া জাল তুনে নিয়েছেন।
তবে সুযোগ পেয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে নেমেছে কিছু অসাধু জেলে। এরইমধ্যে আটক জেলেদের ৪৬ জনকে কারাদণ্ডাদেশ ও অন্য আটকদের থেকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ নিয়ে গত দুই মাসে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ৯২টি মামলা করেছে মৎস্য বিভাগ। জব্দকৃত ১৫ লাখ মিটার জাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া জব্দ হওয়ায় ১০ মেট্রিক টন জাটকা স্থানীয় অসহায়, এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। নদীতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা শিকার করা যাবে না। জাটকা রক্ষায় প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে করোনা ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামার কারণ জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে মজু চৌধুরীহাটের জেলে শফিক উল্যা ও মোরশেদ মাঝি জানান, গত দুই মাস তারা নদীতে যাননি। বাড়তি কোনো আয়ও নেই তাদের। এতে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়েছে। করোনাতে ঝুঁকি হলেও তারা পেটের দায়ে নদীতে নেমেছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ শিকারে নেমেছে জেলেরা। করোনা ঝুঁকি থাকলেও এ নিয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই।’
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন আবদুল গাফ্ফার বলেন, ‘কোন জেলের কাশি-জ্বর-সর্দিসহ করোনা উপসর্গ থাকলে তাকে অন্যদের সঙ্গে নদীতে নেওয়া পরিহার করতে হবে। ইলিশের মৌসুমে একসঙ্গে অবস্থান করতে হলেও নিজেদের সাধ্যমত সচেতন থাকতে হবে।’
যেসব জেলেদের বাড়ির পাশে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গের রোগী আছে তাদেরকে নদীতে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।