যশোরে বিষাক্ত স্পিরিট পানে এক সপ্তাহে ১৫ জনের মৃত্যু!
যশোরে বিষাক্ত স্পিরিট পানে গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তাদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে, পাঁচটি মামলায় গ্রেফতারকৃত এক মাদক ব্যবসায়ীর জবানবন্দিতে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি জানিয়েছেন, সরবরাহ বন্ধ থাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ স্পিরিট মিশ্রিত মদ বিক্রি বেড়েছে। এসব মদ খেয়ে মাদকসেবীরা মারা যাচ্ছেন।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) শহরের আরবপুর গোরাপাড়া এলাকায় চোলাই মদ পানে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন ওই এলাকার কেষ্টপদ দাসের ছেলে প্রহ্লাদ দাস ও মৃত অজিত দাসের ছেলে প্রশান্ত দাস।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে একসঙ্গে বাড়িতে বসে মদ পান করেন তারা। মদের বিষক্রিয়ায় রাতে প্রহ্লাদের মৃত্যু হয় আর রাতে প্রশান্ত দাস মারা যান।
এরআগে ২৬ এপ্রিল শহরের রেলগেট চোরমারা দীঘির পাড় এলাকার মৃত কুরবান গাজীর ছেলে ওজিয়ার ওরফে ওলিয়ার ও বিকাশ শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার দামোদর সাহানির ছেলে বিকাশ সাহানি মারা যান। ২৫ এপ্রিল মারা যান রাঙি, যশোর সদর উপজেলার শেখহাটির আরশাদ আলীর ছেলে শাহিন হোসেন, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের খিতিবদিয়ার শাহজাহান সরদারের ছেলে ইনামুল হোসেন, ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল গ্রামের সাহেব আলী, মণিরামপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের তপন হালদার।
২৩ ও ২৪ এপ্রিল মণিরামপুর উপজেলার মদরপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোমিন, একই গ্রামের মুক্তার হোসেন, যশোর শহরের গরীব শাহ মাজার এলাকার শরিফ উদ্দিন ওরফে মনি বাবু, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবুর, বেজপাড়ার নান্টু, ঝুমঝুমপুর মান্দারতলার ফজলুর রহমান চুক্কি, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান মদ পানে মারা যান।
এদিকে, ২৫ এপ্রিল চোরাই মদের কারবারি মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসানের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে তিনটি মামলায় মদ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। অন্য দুটি মামলায় অবৈধভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে।
পরদিন ২৬ এপ্রিল মাহামুদুল হাসানকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে জবানবন্দিতে যশোর শহরের মাইকপট্টি এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান উল্লেখ করেছেন, তিনি ২০ বছর ধরে মদের ব্যবসা করেন। ইয়াকুব কবির নামে লাইসেন্সধারী এক বিক্রেতার কাছ থেকে মদ ক্রয় করেন। যদিও ইয়াকুব কবিরের ম্যানেজার রাজু, কর্মচারী লাভলু, গহুর, বাবলু, শঙ্কর দোকান চালায়। এরা চুরি করে মাহমুদুল হাসানসহ প্রায় ৪০ জনকে লাইসেন্স ছাড়াই মদ বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, করোনা পরিস্থিতিতে গত ২৫ মার্চ থেকে মদ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে নিশি ও আবদুল মাঝারি বোতলে মেয়াদোত্তীর্ণ স্পিরিট বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই দেন। এসব স্পিরিটের সঙ্গে পানি মিশিয়ে মদরে বদলে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করেন মিন্টু, রাজ্জাক, গহুর, লাভলু, বাবলু, শঙ্কর, নিশি ও আবদুল। এই পানি খেয়েই কয়েকজন মৃত্যু হয়েছে।
মাহমুদুল হাসান জানান, মূল ব্যবসা করছেন নাজির ও তার ছেলেরা। নাজিরের ছেলে বাবলু হোমিওপ্যাথিকের দোকানে চাকরি করেন। এই সুযোগে স্পিরিট সংগ্রহ করেন।
এ প্রসঙ্গে যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘অ্যালকোহল পয়জনিংয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। এক্সপার্ট রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না, কী কারণে বাকিদের মৃত্যু হয়েছে। পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। একটি চক্র শনাক্ত করা হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈধ, অবৈধ মদ বিক্রির অফিস বন্ধ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা সংকটে বৈধ ও অবৈধ মদ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে একটি চক্র ভেজাল ও বিষাক্ত স্পিরিট দিয়ে মদ তৈরি করে বিক্রি করছে। এই সব অ্যালকোহল খেয়ে মাদকসেবীরা মারা গেছে বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃত আসামি মাহমুদুল হাসান।’