বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষার্থী৷ শ্যামলী সুলতানা জেদনী৷ আত্মপ্রকাশের একদিনের মাথায় স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলেও জানিয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
ফেসবুকে জেদনী লেখেন, গত ৭/৮ মাস ছিলো আমার জীবনের অন্যতম অভিজ্ঞতার সময়কাল। পুরো সময়জুড়ে অনেক কিছু বুঝেছি, জেনেছি, শিখেছি। নানা রকম চিন্তাভাবনার মানুষের সঙ্গে মিশতে পারা এবং তাদের সঙ্গে গল্প করতে পারা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম অধ্যায়। জুলাই/আগস্টের পর আর সবার মতো আমার মনেও নানা আশা-আকাঙ্ক্ষার উদয় হয়েছে যার পুরোটা জুড়ে ছিলো দেশের মানুষের জন্য কিছু করা এবং গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন। কাজেই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে এর ভীতকে মজবুত করার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছি। যখন মনে হয়েছে , হাতে সময় কম তবে কাজ অনেক ; ঠিক তখনই সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে এই জায়গাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। চলমান সেমিস্টারেও বেশিরভাগ ক্লাস করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে বিশেষ কারণে সবকিছু থেকে আজ ইস্তফা দিতে হচ্ছে।
তিনি আরও লেখেন, গত ৬ মাসে বোধহয় ১২০ দিনও বাসায় থাকতে পারিনি , মায়ের হাতের রান্না খেতে পারিনি। কারণ দেশের নানা প্রান্তের মানুষকে পড়ার জন্য, বোঝার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি। আমাদের সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন এখনও আসেনি। কাজেই যখন রাত ২/৩ টায় বাসায় ফিরতাম , গলির মোড়ের দোকানদার থেকে শুরু করে অনেকে আড়চোখে তাকাতো। এইসব উপেক্ষা করে চলার দারুণ ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা অবশ্য আমাকে দিয়েছে। পড়াশোনা/ নিজের শখ / যত্ন বিসর্জন দেয়া বা কারো কোনো ভাবনা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই কিংবা কোনো অনুশোচনা কাজ করছে না।
তিনি আরও লেখেন,তবে আজ খারাপ লাগছে এই ভেবে যে , গত ৬ মাস আমার মা-কে আমি ঠিকঠাক সময় দিতে পারি নি বরং বেশিরভাগ সময় উপেক্ষা করে গেছি। আমার এইটুকু জার্নিতে আমার মা সবচেয়ে বেশি সাপোর্টিভ ছিলো , কি কি করেছে আমার জন্য সেগুলো বলা এখানে মূখ্য বিষয়ও নয় অবশ্য। সবকিছু বাদ দিয়ে এই জায়গাকে আপন করে নেয়ার ফলে যা কিছু হারিয়েছি, তা নিয়ে মা মাঝেমধ্যে বকা দিলেও আজ যখন আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ; ঠিক তখনই আমার মা'র চোখেও পানি দেখেছি!
জেদনী লেখেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জন্য শুভকামনা রইলো। ৫৪ বছরের কুৎসিত ছাত্র রাজনীতির অবসান এই প্লাটফর্মের হাত ধরে হোক, এই প্রত্যাশা! আপনারা সুস্থ ছাত্র রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠা করুন, স্বজনপ্রীতির অবসান ঘটিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দিকে অগ্রসর হোন। যোগ্য নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া এবং মানুষকে মর্যাদা দেয়ার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠুন, মানুষের অধিকারের কথা বলুন।
তিনি আরও লেখেন, যাদের সঙ্গে এতদিন কাজ করেছি কিংবা গল্প করেছি , তাদের জন্যও শুভকামনা রইলো। আপনারা এগিয়ে যান, সাংগঠনিকভাবে আপনাদের সঙ্গে না থাকলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবাদে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব, অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার লড়াই আজীবন চলবে। আজকের সিদ্ধান্ত আমার জীবনের অন্যতম কঠিন এবং কষ্টের সিদ্ধান্ত তবে আবুল মনসুর আহমেদের একটা লাইনকে আমি ধারণ করি বলি এখানে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না।
ফেসবুক পোস্টে জেদনী লেখেন, আরেকটি বিষয় উল্লেখ করে দেওয়া ভালো , আমার এই পুরো জার্নিতে কিংবা কাজে আমি সংগঠন থেকে কোনো প্রকার অর্থ গ্রহণ করিনি।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এসময় কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের 'বঞ্চিত' করা হয়েছে জানিয়ে কমিটি ঘোষণার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাতাহাতি-মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হয়। পরে রাতে বারডেম হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলামোটরের রুপায়ন টাওয়ারের সামনে সড়ক অবরোধ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷