সবুজ ফসলের মাঠে বেগুনি ধানের চাদর

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বেগুনি ধান, ছবি: বার্তা২৪.কম

বেগুনি ধান, ছবি: বার্তা২৪.কম

ফসলের মাঠ জুড়ে সবুজ ধানখেত। তার মাঝে একখণ্ড জমিতে বেগুনি রঙের ধানের আবাদ। সবুজের মাঝে বেগুনি রং ফসলের মাঠের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। দূর থেকে দেখে মনে হয় সবুজের প্রকৃতির বুকে বেগুনি রঙের চাদর বিছানো।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের মাইজভাগ ইউনিয়নের হারুয়া গ্রামের ফসলের মাঠে প্রকৃতির এই মনোরম এই দৃশ্য ধরা পড়ে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় বোরো মৌসুমে বেগুনি রঙের ধান আবাদ করেছেন হারুয়া গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, উপজেলায় এবারই প্রথম বেগুনি রঙের ধানের চাষাবাদ হচ্ছে। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ধান গাছের পাতা ও কাণ্ডের রং বেগুনি। তাই কৃষকদের কাছে এই ধান বেগুনি রঙের ধান বা রঙিন ধান নামে পরিচিত।

জানা গেছে, উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের হারুয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক চাঁন মিয়া। চলতি বোরো মৌসুমে হারুয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানার পরামর্শ ও সহযোগিতায় বাড়ির পাশে দশ শতক জমিতে বেগুনি রঙের ধানের আবাদ করতে উদ্যোগী হন। পরে ওই কৃষি কর্মকর্তা হালুয়াঘাট উপজেলা থেকে বেগুনি রঙের ধানের বীজ সংগ্রহ করে দেন তাকে। পরীক্ষামূলকভাবে ধানের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে জমিতে রোপণ করেন চাঁন মিয়া। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সঠিক পরিচর্যায় ধানের চারা ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠে। সবুজ ফসলের মাঠে উঁকি দিতে থাকে বেগুনি রঙের ধান।

বেগুনি রঙয়ের চাল
বেগুনি রঙয়ের চাল
 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, অন্যান্য উফশি জাতের ধানের চেয়ে বেগুনি রঙের ধানের কুশির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ ধানের ফলন বেশি। ধানের শীষের গোড়া শক্ত হওয়ায় বাতাসে ভেঙে পড়েনা। কুশি চারদিকে ছড়িয়ে থাকে। সহজে আলো বাতাস পায় বলে পোকা-মাকরের আক্রমণ কম হয়। উফশি জাতের ধানের মতো বেগুনি রঙের ধানের জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন। এই ধান প্রতি কাঠায় (১০ শতাংশ) ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ ধানের ফলন হয়। বেগুনি রঙের ধানের চালের রঙ কালচে বেগুনি রঙের হয়। এই ধান পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও খেতে সুস্বাদু। তাই এই ধান চাষ অন্যান্য ধানের মতোই লাভজনক হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় এবারই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনের জন্য একজন কৃষককে এই বীজ দেওয়া হয়েছে। জেলায় অন্য কাউকে এই বীজ দেওয়া হয়েছে কিনা সে তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটে এই ধান সীমিত চাষ হয়। সেখান থেকেই বীজ সংগ্রহ করে এনেছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

এদিকে বেগুনি রঙের ধান চাষের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিদিন স্থানীয়রা এক নজর দেখতে ভিড় জমান চাঁনমিয়ার ধানখেতে। উৎসুকদের অনেকেই মেতে উঠছে ছবি ও সেলফি তোলার প্রতিযোগিতায়।

কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী দশ শতক জমিতে বেগুনি রঙের ধানের আবাদ করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকেই ধানের বীজ সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করছে।

বিজ্ঞাপন

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মাত্রায় এস্থোসায়ামিন ও এন্টি অক্সিডেন্টের কারণে এ ধানের রং বেগুনি হয়। এ ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন ই থাকায় নিয়মিত এ ধানের ভাত খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এ ধান ডায়াবেটিস ও অ্যালঝেইমার রোগেরও ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।