সবজি, পানের দোকানে মিলছে পিপিই-মাস্ক, মান নিয়ে প্রশ্ন
নীলফামারী চেম্বার ভবনের সামনে খোলা ভ্যানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করছেন মতিয়ার রহমান। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে হাটবাজারে ঘুরে হাস-মুরগির ওষুধ বিক্রি করলেও করোনাকালে তার ভ্যানে শোভা পাচ্ছে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও ব্লিচিং পাউডার।
নীলফামারী জেলা সদরের নটখানা এলাকার এই বাসিন্দার কাছে বাজারের তুলনায় অনেকটাই কম দামে মিলছে এসব সামগ্রী। দামে সস্তা ও নিম্নমানের একেকটা পিপিই বিক্রি করছেন ২৫০-৫০০ টাকা দরে। হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক বিক্রি করছেন ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকায়।
তবে মতিয়ারের ভ্যানে সাজানো এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উন্নতমানের নয়। মানহীন এসব পণ্যের প্যাকেটের গায়ে নেই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা বা বিস্তারিত তথ্য। কিন্তু বিক্রেতার দাবি, শপিং ব্যাগের কাপড়ে তৈরি মাস্ক এবং স্যুট তৈরির কাপড়ে বানানো পিপিই মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর।
আর এসব স্বাস্থ্য সামগ্রী স্থানীয় দারোয়ানী হাজীপাড়া এলাকার শাহীন আলম নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ক্রয় করা হয়। যা আলাপচারিতার ফাঁকে এই প্রতিবেদককে জানিয়ে দেন ফেরিওয়ালা মতিয়ার।
এদিকে এসব পণ্যের ব্যাপারে শাহীন আলম বলেন, 'এখন পিপিই, মাস্কের চাহিদা অনেক। ঢাকা থেকে কুরিয়ারে এনে আমি খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। কোথায় তৈরি হয় জানি না, কোনো কোম্পানির নামও আমার জানা নেই।'
তবে শাহীনের কাছে কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি রশিদের কপি দেখতে চাইলে তা দেখাতে পারেননি তিনি। এরপরেই দ্রুত সটকে পড়েন।
মতিয়ার আর শাহীনের মতো নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড কামারপাড়ার পান দোকানদার শাহাজাহান আলীও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করছেন। করোনা দুর্যোগে দোকান খোলা নিয়ে সমস্যা হওয়াতে চৌরঙ্গী এলাকায় সোনালী ব্যাংকের সামনে তিনি সাজিয়েছেন পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস বিক্রির পসরা।
বার্তা২৪.কমকে শাহাজাহান বলেন, ‘পেটের দায়ে এখন ব্যবসা বদল করেছি। রোজার মাসে মানুষ পান কম খায়। তাছাড়া দোকান খুললে পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়। এ কারণে সবার জন্য প্রয়োজনীয় সব স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করছি।’ তবে শাহাজাহান নিজেই স্বীকার করেন যে তার বিক্রি করা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উন্নতমানের নয়।
মূলত পুরো জেলাজুড়ে বিভিন্ন বাজারে হার্ডওয়ার, সবজি, পানের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে মাস্ক ও কথিত পিপিই। কিন্তু এসব কথিত সুরক্ষা সরঞ্জামের মান নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তবে মান যাচাই নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই স্থানীয় প্রশাসনের। এতে করে সুরক্ষার তাগিদে মানহীন এসব সামগ্রী কিনে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
নীলফামারী পৌর শহরের বাড়ইপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মঞ্জু বলেন, 'নীলফামারী বাজারের দোকানগুলোতে যে পিপিই পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোকে রেইন কোট বলাই শ্রেয়। এটা পরলে অনেক গরম লাগে। অল্পতেই ঘেমে যেতে হয়। একটি পিপিই সেটে পারসোনাল প্রটেকটিভ ক্লথ স্যুট, এক জোড়া গ্লাভস, একটি মাস্ক, এক জোড়া সুজ কাভার ও একটি আই প্রটেকটিভ গ্লাস থাকবে। কিন্তু ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে পাওয়া সুরক্ষা সামগ্রী এমন নয়। '
এদিকে সচেতন মহল বলছেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর চাহিদা থাকায় মানহীন সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি করে বাজারজাত করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা সিভিল সার্জন ডা. রণজিৎ কুমার বর্মণ বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমাদের দেশ যখনই কোনো সংকটকাল অতিক্রম করে তখন বড় থেকে ছোট পর্যায়ের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তাদের স্বার্থ হাসিল করে। শপিং ব্যাগের কাপড়ে তৈরি মাস্ক, স্যুটের কাপড়ে তৈরি পিপিই মানসম্মত নয় বরং ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া এগুলোর মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেই।'
এ বিষয়ে কথা বলতে নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।