করোনায় ভালো নেই সাটুরিয়ার তাঁত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা
সারা বছর কাজের চাপ কম থাকলেও ঈদ এবং পহেলা বৈশাখের আগে দম ফেলার সময় থাকে না তাঁত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের। দিনরাত কাজে ব্যস্ত থাকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার তাঁত পল্লীগুলো।
তবে এবারের পরিবেশ পুরোপুরি ভিন্ন। নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে তাঁত শিল্পের ব্যস্ত যন্ত্রগুলো। মানুষের আনাগোনা নেই তাঁত পল্লীতে। নেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা। করোনা ভাইরাসের কারণে সুনসান এখন সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ এলাকার তাঁত পল্লী।
তাঁত ব্যবসায় ভাটা পড়লেও বাপ-দাদার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে বরাইদ এলাকায় ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী এখনো টিকে আছে এই শিল্প নিয়ে। বিভিন্ন ধরনের শাড়ি-কাপড়, থ্রি-পিচ, লুঙ্গী এবং পাঞ্জাবির কাপড় তৈরি করে আসছে তারা।
রাজধানীর বিলাস বহুল শপিং মল আর টাঙ্গাইলের পাইকারি বাজারে এর কদরও রয়েছে বেশ। তবে করোনাভাইরাস সংক্রামণের শুরু থেকে কমতে শুরু করে এসব পণ্যের কদর। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় সব শপিং মল আর পাইকারি বাজার। একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় তাদের তাঁত পল্লীও।
জমানো টাকা পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করে বড় ব্যবসায়ীরা কোনো রকম দিনাতিপাত করলেও ভালো নেই ছোট ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ী এবং তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা। কারও কারও ভাগ্যে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা জুটলেও ইচ্ছাকৃতভাবেই বঞ্চিত রয়েছেন অনেকেই। সামাজিক মান মর্যাদার কারণেই ত্রাণ সহায়তা আনতে যাননি বলে মন্তব্য তাদের।
সরেজমিনে আলাপ হলে বরাইদ এলাকার তাঁত ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের পরপরই তাদের পাইকারি বাজার ও শপিং মলগুলোর চাহিদা কমতে শুরু করে। এক সময়ে তা শূন্যের কোটায় চলে আসে। এছাড়া করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থাকার কারণে শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আরও কিছুদিন এভাবে চলতে থাকলে অনেকেই ব্যবসায় দেউলিয়া হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সোহরাব হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী জানান, নিজেদের অল্প কিছু পুঁজি আর মহাজনদের দাদনের টাকার উপর চলে এই ব্যবসা। প্রতি সপ্তাহে দেওয়া হয় শ্রমিকদের বিল। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় দুই মাস। যে কারণে তাঁত ব্যবসায়ী আর শ্রমিকদের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লকডাউনের কারণে আটকে থাকা শ্রমিক আনোয়ার হোসেন (৬০) জানান, সিরাজগঞ্জের বেলকুচির ক্ষিদ্র মাটিয়া এলাকায় তার বাড়ি। তার আয় করা টাকার উপরেই পুরো সংসারের হাল। করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে তার আয়। এতে করে ধার-দেনার মাধ্যমে কোন রকমে চলছে তার জীবন।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বার্তা২৪.কম-কে জানান, বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁত পল্লীর বেশ কিছু পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখনো যদি কোনো পরিবার ত্রাণের জন্য যোগাযোগ করে তবে অবশ্যই সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।