কুড়িগ্রামে চিকিৎসক-নার্সসহ ৮ জন করোনায় আক্রান্ত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে নতুন করে চিকিৎসক নার্সসহ আরো ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এক নার্স ও এক কর্মচারী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে ৪ জন। ফুলবাড়ী উপজেলায় এক চিকিৎসক ও তার ভাইসহ ২ জন রয়েছে।

শনিবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত ৫০ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭ জন।

আক্রান্তরা হলেন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের এক বৃদ্ধা (৮০), এক পুরুষ (৫২), এক নারী (৩০) ও এক শিশু (৫)। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এক নার্স (২৮), এক কর্মচারী (৩০), ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক (২৯) ও ওই চিকিৎসকের ভাই (২৩)।

   

পুলিশের সোর্সকে হত্যা মামলার দুই আসামি গ্রেফতার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০২১ সালে পুলিশের সোর্স আসিফকে নৃশংসভাবে চাকু মেরে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পলাতক দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. আলমগীর (৩১) ও মো. রাজিব (২২)।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) র‍্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. শামীম হোসেন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে রাজধানীর খিলগাঁও থানার মেরাদিয়া এলাকায় পুলিশের সোর্স আসিফকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি আলমগীর ও রাজিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, হত্যা মামলার প্রধান আসামি জিন্নাত আলীর সঙ্গে মিলে গ্রেফতাররা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো। আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। তাদের অবৈধ মাদক ব্যবসায় যারাই বাধা সৃষ্টি করতো, তাদেরকে অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতো। খিলগাঁও থানা পুলিশের সোর্স নিহত আসিফ আসামি জিন্নাত আলীর কয়েকজন সহযোগীকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়।

এতে গ্রেফতার আলমগীর ও রাজিবসহ তাদের গ্রুপের অন্যান্য সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আসিফকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল খিলগাঁও থানার মেরাদিয়া নয়াপাড়া এলাকায় প্রধান আসামি জিন্নাত এবং তার সহযোগী গ্রেফতার আলমগীর ও রাজিবসহ আরও বেশ কয়েকজন অবস্থান নেয়।

এএসপি শামীম হোসেন আরও বলেন, এরপর তারা আসিফকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে আসে। আসিফ মেরাদিয়া নয়াপাড়াস্থ সাকিবুল হাসান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সামনে আসামাত্র আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা আলমগীর ও রাজিবসহ তার সহযোগীরা আসিফকে জাপটে ধরে ধারালো চাকু দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করতে থাকে। এ সময় আসিফ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে গেলে আসামিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আহত অবস্থায় আসিফকে তার স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখপূর্বক ৫/৬ জনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এএসপি শামীম হোসেন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান হত্যাকারী জিন্নাত আলী এবং তার এক সহযোগীকে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর র‍্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ১৬৪ ধারায় জিন্নাতের জবানবন্দিতে গ্রেফতার আলমগীর এবং রাজিব এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে স্বীকার করে।

;

বাংলাদেশের মানুষ মোটামুটি ভালো আছে: ওবায়দুল কাদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সারা বিশ্বে সংকট তার প্রতিক্রিয়া আমাদের দেশেও আছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্ব আছে বলেই বাংলাদেশের মানুষ মোটামুটি ভালো আছে। তুলনামূলক অনেক দেশের মানুষের যে কষ্ট সে তুলনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক ভাল আমরা আছি।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির ইফতার ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ইফতার পার্টি করে, আওয়ামী লীগ মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করে। আমাদের নেত্রীর নির্দেশ ইফতার পার্টি নিজেরা না করে গরিব সাধারণ মানুষের মাঝে যারা এই সংকটের মুহুর্তে কষ্টে আছে তাদের মাঝে ইফতার সামগী বিতরণ করা এটাই আমাদের সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এই কাজ করে যাচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপি ইফতার পার্টি করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। এখন তারা বলে দিল্লির শাসন মেনে নেয়ার জন্য পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। আসলে বিএনপি পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। বিএনপির চেতনায় পাকিস্তান।

কোন বিদেশি রাষ্ট্রের দাসত্ব আমরা করি না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের হৃদয়ে বাংলাদেশ। আমাদের চেতনায় বাংলাদেশ। সেটাই আমরা মনে প্রাণে ধারণ করি। আজকে বিএনপির চারদিকে অন্ধকার। শেখ হাসিনার উন্নয়ন, মানবতা, অন্তর্ভুক্তি মূলক রাজনীতি বিএনপির রাজনীতিকে অন্ধ করে রেখে দিয়েছে। এখান থেকে বের হতে পারছে না। আজকে তারা দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে একটা স্বাধীন দেশ সে কথাও তারা ভুলে গেছে। নির্বাচনের আগে কিভাবে বিদেশি শক্তির তাবেদারি করেছে। নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করেছিলো। নির্বাচন যখন হয়ে গেছে, সরকার ক্ষমতা দখল করেছে, শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব দেশ সংকট উত্তরণ করে ভালোর দিকে যাচ্ছে, সুসময় আসতে সময় লাগে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে বিএনপির ৮০ ভাগ নেতাকর্মী তারা নাকি নিগৃহীত হতে হচ্ছে আমি মির্জা ফখরুল কে বলবো এসব মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন। ৮০ ভাগ নেতাকর্মীরা কারা? আমির খসরু, মির্জা ফখরুল একে একে জেল থেকে বের গেছেন। তাহলে নিগৃহীত কে হচ্ছে? তাদের তালিকা প্রকাশ্যে দিতে হিবে। মিথ্যাচার অনেক করেছেন। আপনাদের নেগেটিভ রাজনীতি এদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। এই রাজনীতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। কেউই গ্রহণ করবে না। বিএনপি নামের একটি দল সংকুচিত হয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু সুজিত রায় নন্দী, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।

;

পটুয়াখালীতে ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি করেছে জেলা প্রশাসন



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পটুয়াখালী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে ন্যায্য মূল্যে গরুর মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) শহরের সোনালী ব্যাংক মোড় এলাকায় গেলে দেখা যায় প্রায় শতাধিক মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ন্যায্য মূল্যে পন্য সামগ্রী ক্রয় করার জন্য অপেক্ষা করছেন। বিক্রয়ের দ্বিতীয় দিনে ন্যায্য মূল্যে ৩৭০ কেজি গরুর মাংস, ২০০ লিটার দুধ ও ২০০০ পিস মুরগীর ডিম বিক্রি করা হয়েছে৷

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিক্রয়ের প্রথম দিনে ২০০ কেজি গরুর মাংস, ১২শ পিস ডিম এবং ৫০ লিটার দুধ বিক্রি করা হয়েছে। এই বিক্রয় কার্যক্রম চলবে শেষ রমজান পর্যন্ত ।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে পটুয়াখালী শহরের সোনালী ব্যাংক মোড়ে জেলা প্রশাসক মোঃ নূর কুতুবুল আলম এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

পটুয়াখালী জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, এখান থেকে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি, মুরগির ডিম প্রতি পিস ৯ টাকা এবং গরুর দুধ প্রতি লিটার ৬৫ টাকা দরে যে কেউ কিনতে পারবেন। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ কেজি গরুর মাংস, ২ দুই লিটার গরুর দুধ ও ১ ডজন মুরগীর ডিম সংগ্রহ করতে পারবেন।

মাংস কিনতে আসা মোঃ আব্বাস হাওলাদার নামের এক ক্রেতা বলেন, 'এখানে আমি ব্যাংকে আসছিল একটা কাজে। এসে দেখি ডিসি স্যারের নির্দেশে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ৯ টাকা পিস ডিম আর ৬৫০ টাকা করে গরুর মাংস ক্রয় করলাম, ইনশাআল্লাহ ভালোই লাগলো। যদি ন্যায্য মূল্যটা সব যায়গায় থাকতো তাহলে যদি আমাদের ক্রয় করতে সুবিধা হতো।'

পেশায় অটো চালক মোঃ আবুল বাসার বলেন, আমার পক্ষে সম্ভব না মাংস কিনে খাওয়ার মতো কারন বাজারে তো ৮'শ থেকে সাড়ে ৮'শ টাকায় মাংস বিক্রি হচ্ছে। আমি দুই দিনে যা ইনকাম করি তা দিয়াও এক কেজি মাংস কেনা সম্ভব না। কিন্তু এখানে ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি হচ্ছে শুনে আসলাম এবং ১ কেজি মাংস কিনলাম। যদি পুরো রমজানের শেষ পর্যন্ত এভাবে বিক্রি করতো তাহলে আমরা অন্তত এই কয়দিন গরুর মাংস খাইতে পারতাম।

জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের বিক্রয় প্রতিনিধি মোঃ খায়রুল ইসলাম বলেন, আমরা এখানে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস, ৬৫ টাকায় ১ লিটার দুধ ও ৯ টাকা পিচ মুরগীর ডিম বিক্রি করছি। এক্ষেত্রে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ কেজি গরুর মাংস, ২ লিটার দুধ ও ১ ডজন মুরগীর ডিম সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া আমাদের স্যারদের নির্দেশ আছে যদি কেউ ২০০ গ্রাম মাংসও কিনতে চায়, তাকেও যাতে মাংস দেওয়া হয়। আমরা সেভাবেই বিক্রি করছি।

পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ডাঃ মোঃ ফজলুল হক সরদার বলেন, সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে বাজার ক্রয় ক্ষমতা নিম্ন আয়ের মানুষের সহনশীলতার মধ্যে থাকে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা সাধ্য মতো চেস্টা করছি। আশা করছি আমাদের এমন উদ্যোগে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। এখানে যে গরু জবাই করা হয় তা আমাদের ডাক্তার দ্বারা পরিক্ষা নিরিক্ষা করে সুস্থ থাকলেই জবাই করা হয়। আমাদের উদ্যেশ্য জনগণের হাতে নিরাপদ আমিষ পৌঁছে দেয়া।

জেলা প্রশাসক মোঃ নূর কুতুবুল আলম বলেন, ‘বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও পাশপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার পাশাপাশি ব্যাবসায়ীদের সচেতন করছি। আজ থেকে চালু হওয়া এই ন্যায্য মূল্যের স্টল থেকে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ডিম, দুধ এবং গরুর মাংস কিনতে পারবেন। আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করলাম, ভবিষ্যতে এই পরিসর বড় করতে চাচ্ছি।’

;

বাঁশির গ্রাম নওগাঁর দেবীপুর



শহিদুল ইসলাম , ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাঁশির গ্রাম হিসেবে পরিচিত নওগাঁর দেবীপুর, কারণ গ্রামটিতে সারা বছরই বাঁশি তৈরী হয়। নওগাঁ শহর থেকে উত্তরে ৩ কিলোমিটার দুরে তিলকপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রা গ্রামে প্রবেশে দেখা মিলবে রাস্তার দুইপাশে বাঁশি তৈরির উপকরণ নল এর গাছ। এ গ্রামের প্রায় দুইশ'টি পরিবার বাঁশি তৈরির কাজে জড়িত। আর এটিকে পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন এ গ্রামের বাসিন্দারা। গত ৫২ বছর আগে এ গ্রামের বাসিন্দা মরহুম আলেক মন্ডলের হাত ধরে বাঁশি তৈরির যাত্রা শুরু হয়। এরপর গ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এ কাজ।

জানা যায়, বছরে এ গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কোটি পিস বাঁশি উৎপাদন হয়। যার উৎপাদন খরচ ২০ কোটি টাকা হলে পাইকারি মুল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। আগামীতে বাঁশি রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। বড় ধরনের মেলা যেমন বৈশাখের মেলায় এক মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার বাঁশি উৎপাদন হবে এ গ্রাম থেকে। ক্ষুদ্র এই কুটির শিল্পকে এগিয়ে নিতে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এসব কারিগররা আর্থিক দিক থেকে আরো উন্নতি করতে পারবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাঁশি নিয়ে খেলছে শিশুরা

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেত/জমি থেকে বাঁশি তৈরির প্রধান কাঁচামাল নল কাটার পর পরিস্কার করে সাইজ মতো কেটে রোদে শুকিয়ে অন্তত ১৫ ধাপে তৈরি হচ্ছে বাঁশি। বলা যায় বাঁশি তৈরিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে নারীরা। আর পুরুষরা বাজারজাত করে। প্রতিটি বাঁশি তৈরিতে (সাধারণ/সাদা বাঁশি) উৎপাদন খরচ পড়ে ১ টাকা ৫০ পয়সা। যা পাইকারিতে বিক্রি হয় ২ টাকা পিস। আর বাঁশির সৌন্দর্য বাড়াতে বেলুন ও রঙিন কাগজ (জরি) পেচিয়ে উৎপাদন খরচ পড়ে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। যা পাইকারিতে বিক্রি হয় প্রতি পিস ৬ টাকা ৫০ পয়সা। খুচরা পর্যায়ে সাদা বাঁশি বিক্রি হয় ১০-১৫ টাকা এবং রঙিন বাঁশি ১৫-২০ টাকা পিস। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরাও এ গ্রাম থেকে বাঁশি কিনে যান। এ গ্রামের নারীরা সাংসারিক কাজের পাশাপাশি বাঁশিতে রঙিন কাগজ জড়িয়ে বাড়তি আয় করে।

বাঁশির কারিগর গৃহবধু হালিমা বেগম বলেন, সংসারে কাজের পাশাপাশি বাঁশিতে জরি পেচানো হয়। প্রতি হাজার বাঁশিতে জরি ও বেলুন লাগানো মজুরি ১৬০ টাকা। দুই দিনে এক হাজার কাজ করা যায়। যা আয় হয় সংসারের কাজে ব্যয় করা হয়। এছাড়া নিজেদের ব্যবসার জন্যও তৈরি করা হয়।

বাঁশি তৈরির কারিগর বাচ্চু মন্ডল বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর থেকে এ বাঁশি ব্যবসার সাথে জড়িত। নিজের জমি না থাকায় অনেক দুর থেকে নল কিনে নিয়ে এসে বাঁশি তৈরি করি। এ বছর প্রায় ৮০-৯০ হাজার পিস তৈরি করা হবে। খুলনা ও সিলেট থেকে পাইকার এসে কিনে নিয়ে যায়। আবার কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া নিজেও বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করা হয়। বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষে প্রায় ২০ হাজার পিস বাঁশি তৈরি করা হবে। যা থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভ হওয়ার আশা করছেন তিনি।

৫০ বছর ধরে বাঁশি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন দেবীপুর গ্রামের বাসীন্দা ৭৩ বছরের আমজাদ হোসেন

গত ৫০ বছর থেকে বাঁশি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন দেবীপুর গ্রামের বাসীন্দা ৭৩ বছরের আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, মরহুম মামা আলেক মন্ডলের হাত ধরেই এ গ্রামে বাঁশির কাজ শুরু হয়। সেসময় প্রতিটি বাঁশির দাম ছিল ২৫ পয়সা। আর এখন ২টাকা পিস। সারা বছরই বাঁশি তৈরি হলেও বৈশাখে বাঁশির চাহিদা বেড়ে যায়।

বৈশাখের বিভিন্ন মেলাকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫ হাজার পিস বাঁশি বিক্রি করার ইচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বাশি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরসহ কয়েকটি জেলায় চলে যাবো। সারা মাস সেখানে বিভিন্ন মেলায় বিক্রি হবে। মোটামুটি ভাল লাভ হবে আশা করছি।

স্থানীয় পাইকারি বাঁশি ব্যবসায়ি খলিল বলেন, এ বছর বৈশাখে হচ্ছে রমজান মাসে। এ মাসে ঈদ। এতে আনন্দের মাত্রা আরো একধাপ বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেলা ও রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে এ এক মাসে এ গ্রাম থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার বাঁশি উৎপাদন হবে। এসব বাঁশি রংপুর, সিলেট, খুলনা, ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরসহ আরো কয়েকটি জেলার ব্যবসায়ীরা কিনে নেয়। এছাড়া স্থানীয়রা বিভিন্ন জেলায় মেলায় গিয়ে নিজ হাতে বাঁশি বিক্রি করে।

নওগাঁ বিসিক এর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। বাঁশির সাথে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তারা যদি কোন ধরণের সহযোগীতা নিতে চায় নারীদের জন্য ৫ শতাংশ এবং পুরুষদের জন্য ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে সহযোগীতা করা হবে। এছাড়া তারা যদি দলবদ্ধ (গ্রুপ) ভাবে নেয় সেক্ষেত্রেও সুবিধা দেওয়া হবে। শিল্পকে এগিয়ে নিতে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থাসহ সরকারি সুবিধা প্রদান করা হবে।

;