নিখোঁজ ব্যবসায়ীর কঙ্কাল উদ্ধার, স্ত্রী-ছেলেসহ গ্রেফতার ৪
বগুড়ার সোনাতলায় নিখোঁজের এক বছর পর রফিকুল ইসলাম (৫০) নামের এক ব্যবসায়ীর কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৯ মে) দুপুরে সোনাতলা উপজেলার রানীর পাড়া (নয়াপাড়া) গ্রামের অদূরে রেল লাইন সংলগ্ন খালের পাড়ে মাটি খুড়ে তার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
এর আগে শুক্রবার ভোরে রফিকুলের স্ত্রী রেহেনা (৪৫), ছেলে জসিম (১৭), ভাগিনা শাকিল (২০) ও রেহেনার প্রেমিক মহিদুলকে (৫০) গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা। তিনি বলেন, রেলওয়ের যে জমি থেকে রফিকুলের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয় ওই জমি চাষাবাদ করতেন গ্রেফতারকৃত মহিদুল।
জানা গেছে, গত বছরের ১৫ জুন মরিচ কেনার জন্য গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন রফিকুল। এরপর তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। গত বছরের ১ জুলাই সোনাতলা থানায় রফিকুলের ভাই শফিকুল এ বিষয়ে জিডি করেন।
পুলিশ জিডির সূত্র ধরে রফিকুলের সন্ধান করতে থাকে। এর মধ্যে পেরিয়ে যায় প্রায় এক বছর। কিন্তু হাল ছাড়েননি পুলিশ। জিডি তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কৌশলে জানতে পারে রফিকুলের স্ত্রী রেহেনার সঙ্গে প্রতিবেশি মহিদুলের পরকীয়া সম্পর্ক। রেহেনার বাড়ি সংলগ্ন রফিকুলে সেচ মেশিন ঘর। মেশিন পাহারা দেওয়ার নামে মহিদুল মেশিন ঘরে রাত যাপন করতেন। এছাড়া রফিকুলের চার ছেলের মধ্যে দু’ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ ছিল।
এদিকে, রফিকুল নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক প্রকাশ পেলে অপর দুই ছেলে এবং দেবর মিলে রেহেনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর থেকে রেহেনা পার্শ্ববর্তী সাঘাটা উপজেলায় বোনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে মহিদুল যাতায়াত করতেন নিয়মিত।
এসব তথ্য যাচাই বাছাই করে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে চার জনকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করে মহিদুল এবং রেহেনার পরিকল্পনায় রফিকুলের বাড়িতে হত্যা করা হয় তাকে। হত্যার আগে রেহেনা কৌশলে তরকারির সঙ্গে অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়ায় তার স্বামীকে। এরপর শ্বাসরোধ করে রফিকুলকে হত্যা করা হয়। পরে ছেলে জসিম ভাগিনা শাকিল ও মহিদুল রাতের আঁধারে রেল লাইন সংলগ্ন জমিতে মাটি খুঁড়ে পুতে রাখে রফিকুলের মরদেহ। ওই জমিতেই বিভিন্ন ফসল চাষ করতে থাকেন মহিদুল। তবে কোন তারিখে রফিকুলকে হত্যা করা হয় তা সঠিক করে বলতে পারেননি গ্রেফতারকৃতরা।
ছেলে জসিমের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক খারাপ থাকায় হত্যাকাণ্ডে তাকেও ব্যবহার করে মা রেহেনা। সঙ্গে বোনের ছেলে শাকিলও অংশ নেন।
সোনাতলা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদ হাসান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রেহেনা ও মহিদুলের পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরেই রফিকুলকে হত্যা করা হয়। তাদের দেখানো মতে মাটি খুঁড়ে রফিকুলে কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদেরকে রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’