রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী (৬১) মারা গেছেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
রোববার (৩১ মে) বেলা ১১টায় করোনার কাছে পরাজিত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
এম বজলুল করিম চৌধুরী সাবেক সচিব ও ঢাকা বিভাগী কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজবাড়ী জেলার কৃতি সন্তান এম বজলুল করিম চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার নিকট আত্মীয় মোমিন শিকদার। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কয়েকদিন ধরে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
জ্বর, গলা ব্যথা অনুভূত হওয়ায় গত ১৭ মে এম বজলুল করিম চৌধুরী ও তার সহধর্মিণী নাজমুন নাহার বজলুল (৫০) করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এরপর তাদের করোনা পজিটিভ আসায় গত ২২ মে তাদের মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বজলুল করিম চৌধুরী অবস্থার অবনতি ঘটলে ২৪ মে তাকে একই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ( আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন।
তবে তার স্ত্রী এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এম বজলুল করিম চৌধুরী রাজবাড়ী জেলার ধুঞ্চি গ্রামের মরহুম রেজাউল করিম চৌধুরীর সন্তান। তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৭ম ব্যাচের কর্মকর্তা। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
কুষ্টিয়ার মিরপুরে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে নদী থেকে নৌকা ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলনের সময় নৌ পুলিশের বিশেষ অভিযানে একটি নৌকা ও একটি ড্রেজারসহ আটক হয়েছেন ৫ বালি উত্তোলনকারীচক্রের সদস্য।
গতকাল মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া থেকে রূপপুর নৌ পুলিশের বিশেষ একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেন। এ সময় নৌকার মাঝি-মাল্লাসহ একটি লোডিং ড্রেজার এবং একটি বালি টানার কারগো /নৌকা আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলার তালবারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ফারুক মাঝি (৫৫), মো. সজিব, মোহাম্মদ আলতাফ (৩৫), মো. সাবদুল(৩৫) এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামার উপজেলার মসলেমপুর গ্রামের মো. মামুন (২৫)।
অভিযান পরিচালনাকারী এসআই জামাল জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে বালি মহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মামলা করা হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে ফিরছে ১৭৩ বাংলাদেশি, অপেক্ষায় স্বজনরা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
জাতীয়
সাজা ভোগ শেষে মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশি নাগরিক। বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে তাদের বহনকারী জাহাজ কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বাঁকখালী নদীর মোহনায় বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এদিকে, হিট অ্যালার্ট অপেক্ষা করে প্রিয়জনের অপেক্ষায় সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে আছেন তাদের স্বজনেরা।
ইয়াঙ্গুনের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজারের, ৩০ জন বান্দরবানের এবং খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা স্বজনরা কেউ ৩/৪ দিন ধরে কক্সবাজারে এসে অপেক্ষা করছেন। বেলা ১২টা বাজলেও এখনো কাঙ্ক্ষিত জাহাজটি কক্সবাজারে এসে পৌঁছায়নি। সময় যতই যাচ্ছে নুনিয়ারছড়ার এ ঘাটে স্বজনদের উপস্থিতি বাড়ছে।
মহেশখালীর শাপলপুর থেকে আসা গুনু মিয়া বলেন, আমার ছেলে কায়সার হামিদ দুই বছর ধরে মিয়ানমার কারাগারে বন্দী। আজকে ছেলে ফিরছে। তার জন্য অপেক্ষায় আছি। রোদ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও এ অপেক্ষা কষ্ট দিচ্ছে না।
টেকনাফের কুলারপাড়া থেকে আসা স্বজন আব্দুল শুক্কুর বলেন, আমার ভাই মোহাম্মদ ইসমাইল ৯ বছর আগে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলো। সেখান থেকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বন্দী জীবন শেষে আজকে সে ফিরছে।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) মিয়ানমার থেকে ফেরা ১৭৩ বাংলাদেশিকে যাছাই বাছাই শেষে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মিয়ানমার ফেরত ১৭৩ জনের মধ্যে ১৪৪ জন দেশটির বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাদের সবার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে আগেই। বাকি ২৯ জনের সাজার মেয়াদ শেষ না হলেও তাদেরকে বিশেষ ক্ষমার আওতায় আনা হয়েছে।
বাগেরহাটের মোংলায় তীব্র দাবদাহের সঙ্গে অসহনীয় রোদ আর অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মোংলার জনজীবন। তীব্র এ গরম থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়ে পৌর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদ গাহ মাঠে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন ধর্ম প্রাণ মুসলিমরা।
মোংলা উপজেলা ইমাম পরিষদের উদ্যোগে এবং পৌর কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে এ নামাজে সব শ্রেণি-পেশার অন্তত দুই হাজার মুসল্লি অংশ নেন।
ইসতিসকার নামাজে ইমামতি করেন মোংলা ইমাম পরিষদের সভাপতি ও বি এল এস মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম। নামাজ শেষে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা দাবদাহ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া হয়।
নামাজে আসা মুসল্লী ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক এসএম মহিউদ্দিন বলেন, 'সারাদেশের মতো মোংলাতেও অসহনীয় গরম পড়েছে। অনেকদিন ধরেই বৃষ্টি হওয়ার কথা, কিন্তু হচ্ছে না। তীব্র গরমে শুধু মানুষ না পশু পাখিরাও কষ্ট পাচ্ছে। সে জন্য রাসুল (সা.) এর সুন্নত অনুযায়ী দুই রাকাত ইসতিসকার নামাজ আদায় করলাম, বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলাম।'
ইসতিসকার নামাজ পড়ানো ইমাম হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রচন্ড গরম, তার ওপর বৃষ্টি নাই। ফলে ফসল নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের চলাফেরা, ইবাদাত বন্দেগি করতেও সমস্যা হচ্ছে। যে কারণে আমরা আজ বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করলাম। আল্লাহর কাছে চাওয়া তিনি আমাদের নামাজ কবুল করবেন এবং বৃষ্টি দিবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান জসিম, চালনা বন্দর আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা রুহুল আমীন, কোরবান আলী আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা গোলাম মোস্তফা, মোংলা উপজেলা ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রহমানসহ পৌর শহরের সবকটি মসজিদের ইমাম ও সাধারণ মুসল্লীরা।
শৈশবে ছুটে বেড়িয়েছেন গ্রামের পথে প্রান্তরে। অথচ এখন হাঁটার শক্তি নেই, পারেন না দাঁড়াতেও। কোথায় যেতে হলে কারো সাহায্য নিতে বা প্লাস্টিকের টুল টেনে করতে হচ্ছে চলাফেরা। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নে হরিপুর গ্রামের একই পরিবারের শারীরিক প্রতিবন্ধী চার ভাই-বোন। এ চার ভাই-বোনের বয়স যখন ১০ থেকে ১২ বছর পর থেকেই হাত-পা ছোট, চিকন ও শরীর বাঁকা হয়ে পড়ে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্মের পর সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন ৩৩ বছর বয়সী আব্দুল হাকিম, ৩১ বছর বয়সী আলমগীর, ৩০ বছর বয়সী সালমা ও ২৭ বছর বয়সী আব্দুর রহমান। কিন্তু চার ভাই বোনের জীবনে ছন্দপতন ঘরে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সের পর থেকেই। বয়স বাড়লেও বাড়েনি তাদের আর উচ্চতা। আস্তে আস্তে তাদের হাত-পা ছোট, চিকন ও বাঁকা হয়ে পড়ে, তারা হয়ে যান শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। পরে অনেক ডাক্তার-কবিরাজ দেখালেও কোন লাভ হয়নি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দেখাতে পারেনি ভালো কোন ডাক্তারও। ছেলে-মেয়েদের এমন অবস্থা দেখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন মা। এরপর চার ভাই-বোনকে দেখাশোনার জন্য তাদের বাবা আবারো বিয়ে করেন। বর্তমানে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে না পারায় তাদের দৈনন্দিন কাজে কাজে সহায়তা করেন সৎ-মা মো. কমলা। নিজের সন্তান না হলেও প্রতিবন্ধী চার ভাই-বোনকে নিজের সন্তানের মতোই পরম আদরে দেখাশোনা করছেন তিনি। এইভাবেই সংগ্রাম করে জীবন-জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারটি।
পরিবারটিকে সহায়তায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান স্থানীয়রা।
প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান ও আলমগীর বলেন, আমাদের বয়স যখন ১০ বছর পর্যন্ত আমরা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলাম। বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতাম, আড্ডা দিতাম, হাটে-বাজারে যেতাম। অনেক স্মৃতি ছিল। এখন ছোটবেলার কথা মনে পড়লে কষ্ট হয়, অনেক সময় কান্নাও করি। ভবিষ্যতে আমাদের দেখবে কে? বাইরের কোন মানুষজন আমাদের চার ভাই-বোনের চলাফেরা দেখলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না।
তারা আরও বলেন, আমরা চার ভাই বোন অনেক কষ্ট আর সমস্যার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি। চলাফেরা করা যায় না টুল টেনে না হলে হামকুর পেরে কোনরকম চলাফেরা করতে হয়। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ভালো না হওয়ায় কোন অসুখ হলে ঠিকমতো ওষুধও কিনে খেতে পারি না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে বা কোন বিত্তবান মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়ালে একটু উপকার হতো।
তাদের প্রতিবন্ধী বোন সালমা বলেন, ১০ বছরের পর থেকে আমি আর স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না। টুল নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। আমার ভাইদের চেয়ে আমার কষ্ট আরও বেশি। সব সময় অসুখ-বিসুখ লেগে থাকে।
সৎ-মা মোছা. কমলা বলেন, আমার বিয়ে হয়ে এখানে আসার পর থেকেই তাদেরকে টুল টেনে চলাফেরা করতে দেখছি। তাদের সব কাজ আমাকেই করে দিতে হয়। তাদের কথা চিন্তা করে নিজে কোন সন্তান নিইনি। নিজের সন্তানের মতই তাদেরকে সেবাযত্ন করে যাচ্ছি। আমার এই চার সন্তানদের পাশে কেউ দাঁড়ালে তাদের জন্য খুব ভালো হতো।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিতে বলেছি। এছাড়াও চিকিৎসা মাধ্যমে তাদেরকে ভালো করা গেলে চিকিৎসার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।