টিআইবির তথ্যসমূহ অসমর্থিত ও অনুমান নির্ভর: বিদ্যুৎ বিভাগ

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বিষয় ও তথ্যসমূহ অসমর্থিত, অনুমান নির্ভর এবং একপেশে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে প্রতীয়মান হয়। মরণঘাতী করোনার ছোবলে সারা বিশ্ব অসহায়, বিশ্ব অর্থনীতি পর্যুদস্ত, বড় বড় দেশগুলো নাকাল, সেখানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে টিআইবির এ ধরনের খণ্ডিত বিশ্লেষণ শুধু একপেশেই নয়, অনভিপ্রেত, উদ্দেশ্য প্রণোদিতও বটে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বিষয়সমূহের ওপর বিদ্যুৎ বিভাগের মতামত সুনির্দিষ্টভাবে নিম্নে তুলে ধরা হলো, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের চাহিদার নিরিখে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান (পিএসএমপি) ২০০৫, পিএসএমপি ২০১০ ইত্যাদি। তারই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক বিদ্যুতের চাহিদার প্রক্ষেপণ, জ্বালানির প্রাপ্যতা, আঞ্চলিক লোড প্যাটার্ন, সঞ্চালন ব্যবস্থা, স্বল্প খরচের বিকল্প ইত্যাদি বিবেচনায় আধুনিক বৈজ্ঞানিক টুল ব্যবহার করে পিএসএমপি-২০১৬ প্রণয়ন করা হয়। উল্লেখ্য যে, যেকোনো পরিকল্পনাই একটি চলমান প্রক্রিয়া যা পরিস্থিতির ওউপর ভিত্তি করে সময়ে সময়ে আপডেট করা হয়, যেমনি করা হচ্ছে পিএসএমপি'র ক্ষেত্রে। ২০০৫, ২০১০ এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ তে আপডেট করা হয়েছে এবং বর্তমানে আবার আপডেট প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

> পৃথিবীর যে কোনো দেশেই বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় সংগত কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা বেশি থাকে, যা সাধারণত রিজার্ভ মার্জিন হিসেবে পরিচিত। রিজার্ভ মার্জিন রাখার যৌক্তিক কারণ হলো: বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রুটিন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ থাকা, দুর্ঘটনাজনিত কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকা, পিক-অফপিক বিবেচনায় জ্বালানি ভেদে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু ও বন্ধ রাখা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়স বিবেচনায় উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি। এসব কারণে কোনো কোনো দেশে রিজার্ভ মার্জিন ১০০ শতাংশ এর অধিক যেমন জার্মানি। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও রিজার্ভ মার্জিন ৭০ শতাংশের অধিক।

> বিদ্যুৎ বিভাগ বর্তমান সংকট মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে করণীয় নির্ধারণের জন্য এ সেক্টরের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে যাতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিদ্যুৎ খাত এ সংকট মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। তবে টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত এমন কোনো প্রতিবেদন বা সুপারিশ এখনও প্রণীত হয়নি। বিশেষ করে সেচের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃষককে প্রদেয় ভর্তুকি প্রদান বিষয়ে টিআইবির উদ্ধৃতিটি অপব্যাখ্যামূলক ও সত্যের অপলাপ মাত্র। বরং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বার্ক) নির্ধারিত সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ট্যারিফ সর্বনিম্ন। উপরন্তু সেচের জন্য কৃষককে প্রদেয় ২০ শতাংশ ভর্তুকিও বহাল রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বা পাওয়ার সেলের কোনো প্রতিবেদনে এ ভর্তুকি বাতিলের কোনো প্রস্তাব করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার আলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণে বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। একক প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্রেডা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের জমির স্বল্পতা, আবহাওয়া, জলবায়ু পৃথিবীর নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমৃদ্ধ দেশসমূহের মত অনুকূল নয়। তাই আমরা আমাদের নিজস্ব খাপখাইয়ে ও টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য উৎসের সবোর্চ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য কাজ করছি। এত প্রতিকূল পরিবেশ ও সীমাবদ্ধতার পরেও বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের দেশ। মূলত সৌর বিদ্যুৎ-ই আমাদের প্রমাণিত সম্ভাবনাময় নবায়নযোগ্য জ্বালানি যার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তারই অংশ হিসেবে আমরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবনের দালান-কোঠার ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তাছাড়া বায়ু বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো হচ্ছে।

আমরা আশা করছি উপরোক্ত ব্যাখ্যার মাধ্যমে টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বিষয়সমূহের ওপর জনমনে কোনো ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হলে তার অবসান হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ সাশ্রয়ী মূল্যে সবার ঘরে ঘরে নিরবচ্ছিন্ন মানসম্মত বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত ২০ তারিখে এক বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে ‘চাহিদার তুলনায় বাড়তি জ্বালানি উৎপাদন সক্ষমতা অব্যাহত; ভাড়া-ভর্তুকি বাবদ অপচয় ও জনগণের ওপর অসহনীয় বোঝা: রেন্টাল বিদ্যুৎ পদ্ধতি বাতিল ও পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১৬ এর সময়োপযোগী সংশোধনের দাবি’ করে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করল বিদ্যুৎ বিভাগ।