নানা অনিয়মে আরো ১০ জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত
কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ইত্যাদি অভিযোগে আরো ১০ ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ৪ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৬ জন ইউপি সদস্য।
মঙ্গলবার (২ জুন) স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে এ সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার পর এ নিয়ে মোট ৮৪ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। এদের মধ্যে ২৮ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৫১ জন ইউপি সদস্য, ১ জন জেলা পরিষদ সদস্য, ৩ জন পৌর কাউন্সিলর এবং ১ জন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণ হলেন কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউপি'র মো. আনোয়ারুল হক, বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর ইউপি'র হাজী মো. কাজল ভূইয়া, বরগুনা জেলার সদর উপজেলাধীন এম বালিয়াতলী ইউপি'র মো. শাহনেওয়াজ এবং নলটোনা ইউপি'র হুমায়ুন কবীর।
নতুন বরখাস্ত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যগণ হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলাধীন মজলিশপুর ইউপি'র ২নং ওয়ার্ডের সদস্য হারিছ মিয়া এবং ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হাছান মিয়া, বরগুনা জেলার সদর উপজেলাধীন নলটোনা ইউপি'র ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হারুন মিয়া, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ, ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা: রানী এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা: ছাবিনা ইয়াসমিন (পলি)।
প্রজ্ঞাপনগুলোতে উল্লেখ করা হয়, কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল হক কোভিড-১৯ এর সময় ত্রাণ কাজে সহায়তা না করে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। একই জেলার বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. কাজল ভূইয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে দীর্ঘদিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত, করোনোভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি, এপ্রিল/২০২০ মাসের ভিজিডি খাদ্যশস্য বিতরণ না করা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে ব্যর্থ এবং কারণ দর্শানোর প্রেক্ষিতে নিজে জবাব প্রদান না করে অন্যের মাধ্যমে জবাব প্রদান করেছেন।
প্রজ্ঞাপনগুলোতে আরো উল্লেখ করা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলাধীন মজলিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য হারিছ মিয়া এবং ৭নং ওয়ার্ডের জনাব হাছান মিয়া এর বিরুদ্ধে সরকারি নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে নিজেদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
বরগুনা জেলার সদর উপজেলাধীন এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহনেওয়াজ এর বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মৎস্য ভিজিএফ এর চাল ৮০ কেজির স্থলে ৬০ কেজি প্রদান, তালিকার বাইরেও অন্যান্যদের চাল প্রদানসহ দুই জন গ্রাম পুলিশকে চাল প্রদানের অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। একই উপজেলার নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ও একই ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হারুন মিয়া, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ, ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা রানী এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা: ছাবিনা ইয়াসমিন (পলি) এর বিরুদ্ধে জেলেদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম, ভুয়া টিপসইয়ের মাধ্যমে চাল উত্তোলন-পূর্বক আত্মসাৎ এবং চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখিত চেয়ারম্যান ও সদস্য কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ মূলক কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে তাদের দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। কাজেই স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের স্বীয় পদ হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পৃথক পৃথক কারণ দর্শানো নোটিশে কেন তাদেরকে চূড়ান্তভাবে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে না তার জবাব পত্র প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়।