৯০০০ কেজি আম নিয়ে ঢাকা আসছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল শুরু করেছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’। শুক্রবার (৫ জুন) বিকেল ৪টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকার কমলাপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। রাত ১টায় ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছাবে।
যাত্রা শুরুর প্রথমদিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোরের বেশ কয়েকটি স্টেশন থেকে আম, লিচুসহ কৃষিপণ্য নিয়ে রাজধানী ঢাকার পথে ছুটছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-১’।
স্টেশনগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথমদিনে প্রায় ৯০০০ কেজি আম নিয়ে ঢাকা রওনা করেছে ট্রেনটি। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে বুকিং হয়েছে ১০০০ কেজি, কাঁকনহাট স্টেশন থেকে ৪০০ কেজি, রাজশাহী স্টেশন থেকে ২৬৯৫ কেজি, সরদহ স্টেশন থেকে ৫০০ কেজি, আড়ানী স্টেশন থেকে ১১১০ কেজি ও নাটোরের আব্দুলপুর স্টেশন থেকে ৪৩১০ কেজি আম। এছাড়া আমনুরা বাইপাস স্টেশন থেকে প্রথমদিনে স্বল্প পরিমাণে আম বুকিং করা হয়।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে- প্রথমদিনে বুকিং কিছুটা কম হয়েছে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু ও আম বুকিং করে পাঠানোর প্রক্রিয়ার বিষয়টি এখনও অনেকে ঠিকমতো জানেন না। তবে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে আমচাষি ও পাইকার ব্যবসায়ীদের ট্রেনে আম বহনে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী স্টেশন মাস্টার আব্দুল করিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আম পচনশীল পণ্য হওয়ায় ট্রেনে আম পাঠাতে অনেক ব্যবসায়ী কিছুটা দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, ট্রেনে পণ্য পাঠানোর পর ঢাকা থেকে ছাড় করার বিষয়টি থাকে। কিন্তু ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আমরা আমসহ কৃষিপণ্য খুব সহজ প্রক্রিয়ায় পাঠানোর সুযোগ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমচাষি বা ব্যবসায়ীদের পার্সেল বুকিংয়ের সাথে রিস্ক বা ঝুঁকিপত্র পূরণ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে বুকিং করা ব্যক্তির নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর রাখছি আমরা। একদিনের মধ্যে পণ্য কেউ স্টেশন থেকে ছাড় করে না নিয়ে গেলে বুকিং করা ব্যক্তির সাথে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিজে থেকে যোগাযোগ করবে। ফলে আম নিয়ে কোনো ঝুঁকি থাকবে না।’
অভিজ্ঞতা না থাকলেও ট্রেনে আম পাঠাতে আগ্রহ রয়েছে অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন- তারা ট্রেনে আম পাঠাতে চান। কিন্তু এখনও রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভালো জাতের আম তেমন বাজারে আসেনি। সবেমাত্র হাটগুলো জমে উঠছে। ক্ষীরশাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ফজলি আম বাজারে আসলে তখন বেশি পরিমাণে বুকিং করবেন তারা।
ঢাকা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘খোঁজ-খবর করতে স্টেশনে গিয়েছিলাম। জেনে আসলাম নিয়ম-কানুন। তবে আমার আম আরও তিন থেকে চারদিন পর থেকে ঢাকায় যাবে। যে বাগান কিনেছি- সেখানে ল্যাংড়া ও আম্রপালি আম বেশি। ল্যাংড়া শনিবার (৬ জনু) থেকে পাড়া শুরু হবে। আম্রপালি আরও পরে। আম না ভাঙলে ট্রেনে পাঠাবো কোথা থেকে?’
এদিকে, রাজশাহী জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় বাঘা উপজেলায়। সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বাঘার আড়ানী স্টেশন থেকে আম বুকিংয়ের সুযোগ রেখেছেন। তবে প্রথমদিনে আশানুরূপ বুকিং পাননি বলে জানিয়েছেন আড়ানী স্টেশন মাস্টার সদরুল ইসলাম।
তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বাঘা-চারঘাটে আম সবচেয়ে বেশি হয়। আমরা ভাবছিলাম- হয়তো এখান থেকে অন্তত ৫ টন অর্থাৎ প্রায় ৫০০০ কেজি আম ঢাকা যাবে। তবে প্রথমদিনে সাড়া কিছুটা কম। যদিও অনেকে এসে খোঁজ-খবর নিয়ে গেছে। আশা করছি- দু’চারদিন পর থেকে আমের বুকিং বাড়বে।’
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ফুয়াদ হোসেন আনন্দ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রথমদিনে প্রায় ৯০০০ কেজির মতো আম বুকিং পেয়েছি আমরা। এটা কম মনে হলেও ট্রেনে আম পাঠানোর বিষয়ে আমচাষি বা ব্যবসায়ীদের আগ্রহের কমতি নেই। কিন্তু তারা বিষয়টি সম্পর্কে এখনও ঠিকমতো অবগত নয়। আমরা চেষ্টা করছি ব্যাপক প্রচারণার। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ম্যান টু ম্যান তথ্য পৌঁছে দিতে পারলে ট্রেনে আম বহনে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে ব্যবসায়ীরা। সেক্ষেত্রে রাজশাহী-চাঁপাই অঞ্চলের আমচাষিরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনি খরচ কম হওয়ায় ব্যবসায়ী ও ভোক্তারাও উপকারভোগী হবেন।’
রেলওয়ে তথ্যমতে, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি প্রতিদিন বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে ঢাকায় যাবে। রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফিরবে। ট্রেনের ৬টি ওয়াগনের মধ্যে ৫টিতে আমসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য বহন করা যাবে। অপর ওয়াগনে নিরাপত্তাকর্মী ও খুব অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ীকে ট্রেনে যাতায়াতের সুযোগ দেয়া হবে।
ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আমনূরা বাইপাস, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ, আড়ানী ও নাটোরের আব্দুলপুর বাইপাস স্টেশন থেকে আমসহ কৃষিপণ্য বুকিং করা যাবে। রাজশাহী থেকে ঢাকায় আম পাঠাতে মণ প্রতি খরচ পড়বে ৪৭ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ১ টাকা ১৮ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকায় আম পাঠাতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়বে ১ টাকা ৩০ পয়সা। অর্থাৎ এক মণে মাত্র ৫২ টাকা।