সময় এখন প্রকৃতির



মো. সামিউল আহসান তালুকদার
মানুষের সমাগম না থাকায় সৈকতে জেগে উঠেছে সাগর লতা, ছবি: সংগৃহীত

মানুষের সমাগম না থাকায় সৈকতে জেগে উঠেছে সাগর লতা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বই আজ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে ধরাশায়ী। গতানুগতিক জীবন ধারা পাল্টে এক নতুন স্বাভাবিক জীবনের (new normal) প্রত্যাশায় গৃহবন্দি মানুষ। এহেন করোনা মহামারির সময় ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে ৪৭তম বিশ্ব পরিবেশ দিবস।

দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জীব-বৈচিত্র্য’। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির এ বছরের স্লোগান হচ্ছে ‘সময় এখন প্রকৃতির’। এবার দিবসটির আয়োজক দেশ কলম্বিয়া।

পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি মৌলিক সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতার পরিবেশ বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫-১৬ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই যুগান্তকারী সম্মেলনের ঘোষণার অনুসরণে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতাকে টেকসইভাবে বেগবান করার জন্য পরের বছর ১৯৭৩ সালে ১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৫ জুনকে “বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়।

তারিখটি পরিবেশ বিষয়ক প্রথম যুগান্তকারী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিনের সঙ্গে মিল রেখে করা হয়। একই অধিবেশনের অন্য একটি রেজুলেশনে পরিবেশ সংক্রান্ত বিশেষায়িত এজেন্সি জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই দিবসটি জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহে ১৯৭৪ সালে প্রথম উদযাপন করা হয়।

ধারাবাহিকভাবে অ্যাবদি এই দিবসটি জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচিকে ওজন স্তর হ্রাস, বিষাক্ত রাসায়নিক, মরুকরণ ও বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো উদ্বেগগুলোতে সচেতনতা বাড়াতে এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সৃষ্টিতে সহায়তা করছে। পরিবেশগত জরুরি সমস্যা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এই দিবসটি একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিকশিত হয়েছে।

কৃষিবিদ মো. সামিউল আহসান তালুকদার

আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি, বাতাসের সাহায্যে শ্বাস নেই, পানি পান করি এবং জলবায়ু আমাদের গ্রহকে বাসযোগ্য করে তোলে- সবকিছুই প্রকৃতি থেকে আসে। উদাহরণ স্বরূপ- সামুদ্রিক জলজ উদ্ভিদ আমাদের বায়ুমণ্ডলের অর্ধেকের বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ আমাদের প্রায় ২২ কেজি কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ করে বিনিময়ে অক্সিজেন ছেড়ে দিয়ে বায়ু নির্মল করে। এতকিছু সুবিধা পাওয়ার পরও আমরা এখনও প্রকৃতির সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করছি না।

ব্রাজিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার দাবানল থেকে শুরু করে পূর্ব আফ্রিকা জুড়ে পঙ্গপাল আক্রান্ত হওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এবং বর্তমান বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি মানুষ এবং অন্যান্য জীব ও পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের আন্তঃনির্ভশীলতা জীব-বৈচিত্র্যের গুরুত্ব ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। ‘জীব-বৈচিত্র্য’ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে অত্যন্ত জরুরি ।

জীবনের ভিত্তি হলো জীব-বৈচিত্র্য। এটি মানুষের স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাদ্য, প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে জলবায়ু প্রশমন সবকিছুকে প্রভাবিত করে। এই চক্রের একটি উপাদান পরিবর্তন করা বা অপসারণ সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে এবং ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। মানুষের বিবিধ কার্যকলাপ যেমন বন উজাড় করা, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল দখল, আগ্রাসী কৃষিকাজ ইত্যাদি প্রকৃতির সীমাকে অতিক্রম করেছে।

প্রকৃতি তৈরি করে মানুষের এমন বার্ষিক চাহিদা পূরণ করতে ১.৬ গুণ পৃথিবী প্রয়োজন। আমরা যদি এই পথে চলতে থাকি, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ধসসহ মানবতার জন্য মারাত্মক প্রভাব পড়বে। করোনাভাইরাসের আবির্ভাবে এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস করা মানে মানবজাতির বেঁচে থাকার ভিত্তিকেই ধ্বংস করা।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় ৭৫ ভাগ সংক্রামক রোগ হলো জুনোটিক অর্থাৎ প্রাণি থেকে মানুষে সংক্রামিত হয়েছে। এ থেকে প্রকৃতির বার্তা আমরা অনুধাবন করতে পারি। প্রাণিবাহিত সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে বাহক প্রজাতির উচ্চ ঘনত্বের কারণে উক্ত রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। কিন্তু যদি আমরা এসব রোগের বাহকদের ধ্বংস করে তাদের সংখ্যাকে কমিয়ে শুধু অবৈজ্ঞানিকভাবে নির্বাচিত প্রাণির একক পালন করি, তখনই তারা সংক্রামক রোগের উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখে। তাই ভবিষ্যৎ মহামারি থেকে বাঁচার প্রধান উপায় হলো প্রকৃতিকে অক্ষুণ্ন রাখা, জীব-বৈচিত্র্যকে অক্ষুণ্ন রাখা।

প্রকৃতি আমাদের একটি পরিষ্কার বার্তা পাঠানো হয়েছে। আমাদের নিজেদের ক্ষতির জন্য আমরা প্রকৃতিকে নির্বিচারে বিনাশ করছি। জলবায়ু বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হচ্ছে। তাই প্রকৃতি তথা ‘জীব-বৈচিত্র্য’ রক্ষার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করা উচিত। এজন্যই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে আমাদের বছরব্যাপী শুধু এই দিবসটি পালন নয়, ধারণ করা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: ইউএনইপি

লেখক: কৃষিবিদ মো. সামিউল আহসান তালুকদার, সহযোগী অধ্যাপক ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার ল্যাব কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

   

ফেনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই তরুণের মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনীতে পৃথক দুইটি সড়ক দুর্ঘটনায় তানভীর হোসেন সৈকত (১৬) ও শাকিল হক শান্ত (২৬) নামে দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাইচ্ছুটি এলাকা ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ডাক বাংলা এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তানভীর হোসেন সৈকত ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের নোয়াবাদ এলাকার গুড়াগাজী বাড়ির হারুনুর রশীদের ছেলে এবং অন্যজন শাকিল হক শান্ত ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের চাঁদগাজী এলাকার প্রবাসী সিরাজুল ইসলামের ছেলে। শান্ত দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজীতে তিন বন্ধু মিলে প্রাইভেটকার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলেন শান্ত। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গেলে প্রাণ হারান তিনি। এ সময় গাড়িতে থাকা তার অপর দুই বন্ধু অমি এবং রবিন গুরুতর আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে নিহত সৈকতের পরিবার জানায়, বিকালে বোনের বাড়ি থেকে ফেরার পথে কাইচ্ছুটি রাস্তার মাথায় মহাসড়ক পার হওয়ার সময় একটি মাইক্রোবাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন সৈকত। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সৈকতের ভগ্নিপতি মজিবুল হক বলেন, পরিবারে পাঁচ বোনের মধ্যে সবার ছোট সৈকত। আমি প্রবাস থেকে ফেরার পর ঈদ উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ির সবাইকে দাওয়াত করেছিলাম। এখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে পরিবারের সবাই চলে গেলেও সৈকত পরে বের হয়। পরে কাইচ্ছুটি এলাকায় পৌঁছালে তাকে একটি মাইক্রোবাস ধাক্কা দেয়। তার এমন আকস্মিক মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছে না কেউ।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জসিম উদ্দিন বলেন, কয়েকজন পথচারী গুরুতর আহত অবস্থায় সৈকতকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহতদের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। 

;

সিরাজগঞ্জে দুই মাথা ৪ চোখ নিয়ে বাছুরের জন্ম



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিরাজগঞ্জ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দুই মাথা ও চার চোখ নিয়ে জন্ম নিয়েছে একটি গরুর বাছুর। এ খবর শুনে উৎসুক জনতা এক নজর দেখতে খামারির বাড়িতে ভিড় করছে।

এই অদ্ভুত বাছুরটি জন্ম হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের পালাশী গ্রামের খয়বার আলীর বাড়িতে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল ) বিকালে খামারির বাড়িতে জন্ম নেওয়া পর থেকে বাছুরটি দেখতে ভিড় করছে এলাকাবাসী।

খয়বার হোসেন বলেন, গাভীটি আমার গৃহপালিত। চার বছর আগে বিদেশি ষাড়ের মাধ্যমে প্রজনন দিয়ে প্রসূতি গাভীটির জন্ম হয়। পরবর্তীতে গাভীটি বড় হলে প্রজননের জন্য ইনজেকশন ব্যবহার করে গর্ভধারণ করা হয়। দীর্ঘ আট মাস ২৩ দিন পর গাভীটি দুই মাথা ও চার চোখ বিশিষ্ট একটি বকনা বাছুর প্রসব করে। বকনা বাছুরটি এখনো নড়াচড়া করছে। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও দুই মাথার কারণে উঠে দাঁড়াতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, বাছুরটি অস্বাভাবিক, দুই মাথা ও চার চোখ বিশিষ্ট। অস্বাভাবিক প্রকৃতির এই বাছুরটিকে দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় করছে।

তাড়াশ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, হরমোনাল ইমব্যালান্সের কারণে এরকম বাছুর প্রসব করার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়াও প্রজনন গত কারণেও এ রকম অস্বাভাবিক বাছুর প্রসব হতে পারে। তবে এমন বাছুর প্রসব খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না।

;

বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সীমান্তে তীব্র গোলাগুলি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বান্দরবান
বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সীমান্তে তীব্র গোলাগুলি

বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সীমান্তে তীব্র গোলাগুলি

  • Font increase
  • Font Decrease

বান্দরবান-রাঙ্গামাটির সীমান্তের দুর্গম এলাকায় তীব্র গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। সেখানে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে বান্দরবানের রুমার প্রাংসা-পাইন্দু ও রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়নে সীমান্তের দুর্গম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় গত ৬ এপ্রিল থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে যৌথ বাহিনী, যা এখনও চলমান রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রুমা খাল, প্রাংসা, পাইন্দু ও রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি সীমান্ত এলাকায় তীব্র গোলাগুলির চলছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লা চিং মারমা জানান, কয়েকদিন ধরে রুমা উপজেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। এলাকাবাসীরা তাকে আজ বিকেলে জানিয়েছেন পাইন্দু- রুমা সদর ইউপি ও বিলাইছড়ি উপজেলা বড়থলি ইউনিয়নের সীমান্তে দুর্গম এলাকার ভিতরে প্রচণ্ড গুলি বোমার আওয়াজ শুনেছেন। এলাকাবাসীর ধারণা, গোলাগুলি হচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান জানান, গোলাগুলির সংবাদ পেয়েছি। তবে বিস্তারিত জানা যায়নি।

গত ৮ এপ্রিল যৌথবাহিনী বিশেষ অভিযান চালিয়ে রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া থেকে ১৮ নারীসহ ৪৯ জনকে গ্রেফতার করে। অন্যদের বিভিন্ন সময়ে মোট ৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ৫২ জনের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে পাঠানো ৫২ জনের মধ্যে ১৭ জন নারী রয়েছেন।

 

 

 

 

 

 

;

সাভারে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং, আতঙ্কে নগরবাসী



মো. কামরুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকার সাভারে দিনদিন বেড়েই চলছে কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ংকর তাণ্ডব। ফলে সাভার এখন পরিণত হয়েছে আতঙ্কের নগরীতে। পৌর এলাকাতেই মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ৪ খুন। এছাড়া প্রতিনিয়ত ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তার ও মাদকের অন্যতম কারণ এই গ্যাং কালচার। কোনোভাবেই যেন লাগাম টানতে পারছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রকাশ্যে কিশোর গ্যাংয়ের হামলা পাল্টা হামলা সাভার পৌরসভার নিত্যদিনের ঘটনা। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে কেউ হেঁটে যায়, আনার কেউ হাসপাতালে বিছানায় করে বাঁচার আর্তনাদ। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে সম্প্রতি সাভার পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১২ এপ্রিল সাভারের আড়াপাড়ায় খুন হলেন রং মিস্ত্রী সাজ্জাদ। গত ৩১ মার্চ সাভারের রেডিও কলোনীতে কিশোর গ্যাংয়ের ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মৃত্যু সাথে লড়াই করেছেন কলেজ ছাত্র রবিউল।

ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্র রবিউল ইসলাম বার্ত২৪.কম-কে বলেন, 'সকালে আমি ডিউটির উদ্দেশ্যে যাইতেছি। তখন দেখি দুইটা ছেলে বসা তখন আমার হাতে মোবাইল ছিল ওরা আমাকে ডাক দিছে। ডাক দিয়েই বলে কি আছে দে। আমি সাথে সাথে মোবাইল দিয়ে দিছি। তারপরেও ওরা আমাকে ছুরি মারছে। আমার পেটে পিঠে চাকু মারছে। তখন আমি চিৎকার দিলে আশপাশে থেকে লোকজন এসে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আমার পায়েও সমস্যা, ১৮ দিন ধরে ব্যথায় আমি একটুও ঘুমাতে পারি না।

ছেলেকে বাঁচাতে রবিউলের কৃষক বাবা ধার-দেনা করে প্রায় নিঃস্ব এখন। তাদের দাবি এ ধরনের ঘটনা যেন কোনো পরিবারের সাথে না হয়। এই পরিবারের মত এমন ঘটনার ভুক্তভোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।

ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামের বাবা মো. আশরাফুল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের টোটাল বিল আসছিল ৭ লাখ টাকা। পেমেন্ট দিয়েছি প্রায় চার লাখ টাকা। আমি কৃষি কাজ করি ও মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করি। হাসপাতালের এই ৪ লাখ টাকা মানুষের কাছে তো ধার ও সুদের উপর এনে দিয়েছি। আর্থিকভাবে মনে হয় দশ বছরেরও আমি এই জিনিসটা পূরণ করতে পারব না। আমি সুদে যে টাকাটা নিছি প্রতিমাসে এই সুদ টানতেই আমার কষ্ট হয়ে যাবে এখন।

ভুক্তভোগী রবিউলের মা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা যদি আর্থিক দিকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা না পাই, তাও কোনো দুঃখ নাই। আমার ছেলেটা ১৮ দিন ধরে হসপিটালের বিছানায়। আমার ছেলের মত এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে এটাই আমার দাবি।

তথ্য বলছে, সাভারে কিশোর গ্যাংয়ের মূল দৌরাত্ম্য পৌরসভাজুড়ে। পিনিক রাব্বি, হৃদয় গ্রুপ, ভাই-ব্রাদার গ্রুপ বেশ সক্রিয়। নিজেদের দ্বন্দ্ব থেকে ভাগ হয়ে তৈরি হচ্ছে আরো গ্রুপ। গত দুই মাসে কিশোর গ্যাংয়ের ছিনতাই ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অন্তত ৪ খুনের ঘটনা ঘটেছে। খরচ মেটাতে ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত এই কিশোর গ্যাং।

সাভার পৌর সভার বাসিন্দা রিফত বার্তা২৪.কম-কে বলেন, অপরাধীরা বেশিরভাগই মাদক সেবন করেন। তার জন্য তো টাকা দরকার তাদের। তারা কোনো কাজকর্ম করে না। আর এই টাকার জন্যই তারা ছিনতাই করে। কাছে কিছু না পেলে বা দিতে না চাইলেই তাকে আঘাত করে। কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে এমন। মারাও গেছেন কয়েকজন। সরকারের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ, এই মাদক ও কিশোর গ্যাং নিয়ে যেন কঠোর একটা ব্যবস্থা নেয়। এদের যেন শাস্তি হয়, এগুলো যেন একবারে নির্মূল করে দেয়।

গত মার্চ মাসে র‍্যাব ও পুলিশের আলাদা অভিযানে হৃদয় গ্রুপের প্রধান গিয়ার হৃদয়সহ ৮ জন ও ভাই-ব্রাদার গ্রুপের ৪ জনসহ মোট ১২ জন গ্রেফতার করা হয়।

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শাহ জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কখনো যদি কোনো লোক এরকম ছিনতাইয়ের শিকার হন বা ডাকাতির শিকার হন, তাহলে তাৎক্ষণিক আমাদের কাছে রিপোর্ট করবেন। যাতে করে আমরা এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারি। যদি এরকম কোনো ঘটনায় আপনারা রিপোর্ট না করেন, ওই অপরাধীদেরকে আমরা যদি গ্রেফতার করতে না পারি, সেক্ষেত্রে কন্টিনিউয়াস একটার পর একটা ঘটনা ঘটিয়ে যাবে। সুতরাং যে কোনো ঘটনাই ঘটুক, অবশ্যই পুলিশকে রিপোর্ট করতে হবে। পুলিশ যাতে সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে পারে।

;