ধানের রাজ্য নওগাঁয় আমের রাজত্ব
ধানের জন্য বিখ্যাত নওগাঁ জেলা।এ জেলাতে যেসব শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে তার অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক। কৃষিই নওগাঁর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল চাবিকাঠি। কাটারী ভোগ, কালাজিরা চালসহ উন্নত মানের চালের জন্য এই জেলা বিশেষভাবে পরিচিত। এছাড়াও ধানচাষ নির্ভর এই জেলা দেশের সিংহভাগ চালের যোগান দেয়। কিন্তু অল্প দিনেই ধানের এই রাজ্যে ঘটেছে আমের বিপ্লব। চাষিরা বলছেন- ধানের চাইতে আম উৎপাদনে বেশি লাভ তাই কৃষকরা আম চাষে ঝুঁকছেন।
সোমবার (৮ জুন) সকালে জেলার সাপাহার, পত্নীতলা, নিয়ামপুর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, ধান, পাট, মরিচ, ক্ষেতের পাশেই বিশাল আমের বাগান। আমের ফলন এতো বেশি যে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। একই অবস্থা পাশের কয়েকটি উপজেলার।
সাপাহার উপজেলার আম বাগানি আমিনুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, সার, বীজ এবং কীটনাশকে খরচ করে ধান উৎপাদনে লাভ হয় না। কিন্তু আমে সহজে বেশি লাভবান হওয়া যায়। যার কারণে ফসলের জমিতে দিন দিন আমবাগান বাড়ছে।
পত্নীতলা উপজেলার চাষী রিয়াদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ধান চাষে পরিশ্রম বেশি কিন্তু সেই তুলনায় আমে পরিশ্রম কম। বেশি পরিশ্রম করে যেখানে ফসল চাষ করে উৎপাদন খরচই উঠে না, সেখানে কম পরিশ্রমে আম উৎপাদনে লাভবান হওয়া যাচ্ছে। এ কারণে দিন দিন নওগাঁর ফসলি জমিতে আম বাগান বাড়ছে।
একই উপজেলার আরেক চাষি সাহাজান সাজু বলেন, যে কোনো ফসলের চেয়ে তুলনামূলক বেশি লাভের কারণে ফসলের জমিতে আমের বাগান তৈরি হচ্ছে। আমের বাগান তৈরি করায় কৃষকরা অল্প শ্রমেই পাচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নওগাঁর বেশিরভাগ এলাকায় ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে বিভিন্ন জাতের আমবাগান। ফসলি জমিকে আমবাগান বানানোর যেন প্রতিযোগিতা চলছে রীতিমত।
নওগাঁর সিনিয়র সাংবাদিক শফিক ছোটন বলেন, বিগত কয়েক বছরের একটি জরিপে দেখা গেছে বর্তমানে নওগাঁর কৃষকরা ধান কিংবা সবজির ফসলের চেয়ে আমে বেশি লাভবান হচ্ছেন। যে কারণে এখন কৃষি জমিতে আমবাগান হচ্ছে। যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমি বাগানে পরিণত হচ্ছে। গেল ১০ বছরে নওগাঁয় আম বাগান গড়ে উঠেছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নওগাঁ জেলার উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, অল্প খরচে ও শ্রমে ধানের চাইতে আম উৎপাদনে লাভ বেশি। মাটির কারণে নওগাঁর আম উৎপাদনে বেশ ভালো ফল পাওয়া গেছে। স্বাধেও বেশ ভালো বাজারে চাহিদা বেশি এজন্য নওগাঁর চাষিরা এখন আম উৎপাদনে ঝুঁকছেন।
এবছর জেলায় প্রায় সারে ২৫ হাজার হেক্টর আম বাগানে ৩ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।