অবৈধ অর্থ উপার্জনকারীদের পুলিশে স্থান নাই: আইজিপি
যারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বড় লোক হতে চান, পুলিশ বাহিনীতে তাদের স্থান নেই বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা কোনভাবেই কোন ধরনের দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকতে পারবেন না। পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।
মঙ্গলবার (১৬ জুন) বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জ এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন আইজিপি।
তিনি বলেন, বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে চাই। রূপকল্প- ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে নিরলস কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নের এ অভিযাত্রায় শামিল হয়ে বাংলাদেশ পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হতে হবে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, গণমানুষের দোরগোড়ায় পুলিশিংকে পৌঁছে দিতে হবে। বিট পুলিশিং-এর মাধ্যমে প্রান্ত থেকে কেন্দ্র সর্বত্র হাতে নিতে হবে উন্নয়নমুখী উদ্ভাবনী পুলশিং কার্যক্রম। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কেন্দ্রিক বিট পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে তার দায়িত্বাধীন এলাকার প্রত্যেক নাগরিকের সুখ-দুঃখের খোঁজ নেবেন। বিপদে ও প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। এ বিষয়ে একটি এসওপি প্রণয়ণের কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাসহ একটি এসওপি সকল ইউনিটে পৌঁছে দেয়া হবে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশের মানুষকে নির্মোহভাবে ভালোবাসতে হবে, মানুষকে কোনো প্রকার নির্যাতন ও নিপীড়ন করা যাবে না। সকল উপায়ে মানুষের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, দায়িত্বপালনকালে শারীরিক শক্তি নয়, আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে।
মাদকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। কোন পুলিশ সদস্য মাদকের সাথে অথবা মাদক ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আসুন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেশকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে যাই; যাতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি মাদকমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন।
পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ প্রসঙ্গে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বরত অবস্থায় আহত, গুরুতর আহত ও নিহতের ক্ষেত্রে কল্যাণ সংক্রান্ত সুবিধাদি রয়েছে। এর পাশাপাশি চাকরিরত অবস্থায়ই সদস্যদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, শাসন ও সোহাগের সমন্বয় করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ভালো কাজ করলে স্বীকৃতি ও উৎসাহের পাশাপাশি মন্দ কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করা হবে না।
পুলিশ সদস্যদের শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যাপারে কোন ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে।
আইজিপি আরও বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশ যেভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের সহযোগিতা করছে, নিজের জীবন বিপন্ন করে জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ পুলিশের এ মানবিকতা দেশের মানুষের কাছে বাংলাদেশ পুলিশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মানুষ পুলিশকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে, পুলিশকে ভালোবাসছে, শ্রদ্ধা করছে। মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে পুলিশ। মানুষের এ অভূতপূর্ব ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মর্যাদা আমাদের রাখতে হবে।
তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের এ অবস্থান ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের জন্য জনগণের পুলিশ হয়ে কাজ করতে হবে। দুর্নীতি ও মাদকসহ যে কোনো প্রকার পুলিশি মিসকন্ডাক্টকে কঠোর হাতে দমন করতে না পারলে জনগণের পুলিশ হয়ে ওঠা সহজ হবে না।
বেনজীর আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন ও প্রধানমন্ত্রীর সকল প্রচেষ্টার ঐকতানে আমরা যেভাবে কাজ করছি, তা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম অংশীদার হবে বাংলাদেশ পুলিশ।