জঙ্গিবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের সাফল্য, কোনঠাসা জেএমবি



শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আব্দুর রহমান আটক হন র‌্যাবের হাতে, ছবি: সংগৃহীত

জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আব্দুর রহমান আটক হন র‌্যাবের হাতে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০০৬ সালের ২ মার্চ। সিলেটের টিলাগড় এলাকার ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’র দিকে মনোযোগ দেশবাসীর। চাপা উত্তেজনা, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার পাশাপাশি নানাবিধ জল্পনা। কী হবে শেষ পর্যন্ত? বাড়িটি ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঘেরাও করে রেখেছে র‌্যাব সদস্যরা। এখানে সপরিবারে আছেন জঙ্গি সংগঠন জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আব্দুর রহমান।

এর প্রায় মাস ছয়েক আগে একযোগে বাংলাদেশের ৬৩ জেলার ৫শ’ স্থানে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। সুতরাং আলোচনা আর মনোযোগ ওই বাড়ির দিকে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।

টান টান উত্তেজনা আর নানা নাটকীয়তা শেষে ৩ দিন পর অক্ষত অবস্থায় ওই বাড়ি থেকে শায়খ আব্দুর রহমানকে বের করে আনা হয়। পরে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ ফাঁসিতে ঝুলতে হয় তাকে।

এরপর জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নেতৃত্ব পান ডা. নজরুল ইসলাম। ততদিনে জেএমবি দুই গ্রুপে বিভক্ত। কারাবন্দি মাওলানা সাঈদুর রহমানের গ্রুপকে জেএমবি ভেতরের গ্রুপ আর আবদুর রহমান ওরফে সারওয়ার জাহান মানিক ও ডা. নজরুল ইসলামের গ্রুপকে বাইরের গ্রুপ বলে মনে করা হয়। পরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ডা. নজরুলকে হত্যা করা অথবা গুম করে দেওয়া হয়। তার আর কোনো হদিস মেলেনি।

এরপর নতুন জেএমবির আমিরের দায়িত্ব পায় আবু ইউসুফ। পরে তাকে সরিয়ে সারওয়ার জাহানকে যখন আমির বানানো হয়, তখন শুরা সদস্য ছিলো- রাইসুল ইসলাম খান ওরফে ফারদিন, মামুনুর রশিদ রিপন, নুরুল ইসলাম মারজান ও শফিক। সারওয়ার জাহান যখন আমির ছিলেন তখন তামিম চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক হয়। এই তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে বা পরিকল্পনায় দেশে আলোচিত হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার ঘটনা ঘটে।

৮ অক্টোবর ২০১৬। আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে বিভক্ত জেএমবির প্রধান সারোয়ার জাহান পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়।

শুরু থেকেই জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা এবং বিভক্ত জেএমবির হাল ধরে টিকে থাকতে চাওয়া জঙ্গি নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল র‌্যাব। এ যুদ্ধে একে একে সাফল্যও পেতে থাকে বাহিনীটি।

মাঝের এই বছরগুলোতে বাংলাদেশে কথিত খেলাফত কায়েমের লক্ষ্যে ও জনমনে আতঙ্ক তৈরি এবং হামলা করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসএর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিল সংগঠন অন্য নেতারা। এ পরিকল্পনাতেও র‌্যাব বাগড়া দিয়ে তাদের নিঃশেষ করতে কাজ করেছে এখনও করছে।

র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আলোকে জঙ্গি দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এসেছে। র‌্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ২ হাজার ১৮৯ জন সদস্যকে তারা আটক করেছে।

৪ বছর আগে ২০১৬ গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে নারকীয় জঙ্গি হামলা চালিয়ে আবারও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে চায় জঙ্গিরা। তাতেও তারা সফল হয়নি।

বসিলার জঙ্গি আস্তানায় র‍্যাবের অভিযান, ছবি: বার্তা২৪.কম 

ওই ঘটনায় জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে পরবর্তীতে র‌্যাব জঙ্গিদের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আটক করতে সক্রিয় হয়। জঙ্গি সংগঠনের আমিরসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করে। র‌্যাবের অভিযানে কেন্দ্রীয় দাওয়াতি শাখা প্রধান, শুরা ও শরিয়া বোর্ড সদস্য, মহিলা শাখার নেতৃবৃন্দ এবং বেশ কয়েকজন অতি গুরুত্বপূর্ণ আইটি বিশেষজ্ঞকে আটকের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনকে দুর্বল করে দেয়।

ফোর্সটি বলছে, হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার পর থেকে সময়োচিত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও তীক্ষ্ম গোয়েন্দা নজরদারির ফলে মোট ৩৯৫টি অভিযান পরিচালিত হয়। ১৭টি জঙ্গি আস্তানায় সফল অভিযানের পাশাপাশি ১ হাজার ১৬ জন জঙ্গি আটক, ৭ জন আত্মসর্মপণ এবং ২৫ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। উদ্ধার করা হয় ৮৫টি গ্রেনেড, ৭১টি ডেটোনেটর ও ৫৮টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র।

জানতে চাইলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদ্য দায়িত্ব পাওয়া গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বার্তা২৪.কমকে বলেন, র‌্যাব শুরু থেকেই জঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। যখন যেখানে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে, র‌্যাব তাদের দমন ও নির্মূলে কাজ করেছে।

শুধু অভিযানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি র‌্যাব। জঙ্গিবিরোধী প্রতিরোধমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। জঙ্গিবিরোধী প্রচার-প্রচারণা, সমাবেশ, বিলবোর্ড, স্টিকার বিতরণ এবং জঙ্গি দমনে বই-পুস্তক প্রকাশ করেছে তারা। তাছাড়া জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসন নিয়েও কাজ করেছে র‌্যাব। যেটা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল বার্তা২৪.কমকে বলেন, জঙ্গি দমনে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে র‌্যাব। আমরা জঙ্গি নির্মূলে চারটি জেনারেশনে জঙ্গিদেরকে ভাগ করেছি। প্রথম জেনারেশন অর্থাৎ ১৯৯০ সালের হরকতুল জিহাদ আল ইসলাম বাংলাদেশ (হুজিবি), দ্বিতীয় জেনারেশন ১৯৯৫ সালের জেএমবি, তৃতীয় জেনারেশন ২০০০ সালের হিজবুত তাওহিদ এবং চতুর্থ জেনারেশন বিভক্ত জেএমবি।

এসব নানা তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে জঙ্গি দমনে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে র‌্যাব এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও অপারেশন পরিচালনা করা। জঙ্গি দমনে জনগণের সম্পৃক্ততা। ক্রমাগত নিজস্ব গোয়েন্দা ও অপারেশন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। জঙ্গিবাদে অন্তর্ভুক্তি প্রতিহত করা। জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

   

তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে আগামী রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এরই মধ্যে দেশের তাপমাত্রা অসহ্য অবস্থায় পৌঁছানোয় কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও ৭ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করছে প্রশাসন। এর মধ্যে স্কুল কলেজ খুললে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আগামী ৭ দিনের জন্য শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, এ বছর শিখন ঘাটতি পূরণে মাধ্যমিকে ১৫ দিন ছুটি কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রমজানের শুরুতে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অন্যদিকে, রমজানের প্রথম ১০ দিন ক্লাস চালু ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একইভাবে সব কলেজ ও মাদরাসায়ও ছুটি কমিয়ে রমজানের শুরুর দিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়। ছুটি শেষে রোববার থেকে পুরোদমে চালু হচ্ছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

 

;

বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার বাতাসে নেই স্বস্তির খবর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। কয়েক দিনের তীব্র গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢাকার বাতাস আবারও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ১২১ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে মেগাসিটি ঢাকা। আজ ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। গতকাল শুক্রবারও ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ছিল।

এদিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ১৭৮ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি শহর। এ ছাড়া ১৭৩ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই, ১৬৩ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, এরপর নেপালের কাঠমান্ডু ১৬২ স্কোর নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে। ১৫৮ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাই শহর।

একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।

 

;

শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের কৃষকেরা



খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিগুলো এখন সবুজ সমারোহে ভরপুর। ধানের পাশাপাশি সবজি চাষাবাদে এখন ব্যস্ত কৃষক। জমিতে বপন করা প্রতিটি শসা গাছের ডগায় ডগায় ঝুলছে ছোট বড় শসা। ২/১ দিন পর পর জমি থেকে শসা সংগ্রহ করছে সবজি চাষিরা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। জমিতে বপন করা শসা গাছের যত্ন নিতে ভর দুপুরেও শসা ক্ষেতে ব্যস্ত কৃষকেরা। জমিতে বপন করা গাছের ফলন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। এর পাশাপাশি কীটনাশকসহ ভিটামিন প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।


আশানুরূপ ফলনের পরও বাজারদর নিয়ে হতাশায় জেলার সবজি চাষিরা। কয়েকদিন আগেও প্রায় ১০০ টাকার কাছাকাছি ছিল প্রতি কেজি শসার দাম। তবে সপ্তাহ দু’য়েক সময় গড়ানোর আগেই শসার দাম নেমে এসেছে ৫০ টাকার নিচে। দ্রুত গতিতে শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের সবজি চাষিরা।

রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অনুকূল আবহাওয়া আর বাম্পার ফলনের কারণে দিনকে দিন মানিকগঞ্জে বেড়ে চলেছে শসাসহ নানা প্রকারের সবজির চাষাবাদ। তবে সার, কীটনাশক, বীজসহ শ্রমিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবজির দাম বাড়েনি বলে অভিযোগ সবজি চাষিদের।

মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাতেই কম-বেশি আবাদ হয় সবজির। তবে জেলার সাটুরিয়া, সিংগাইর এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাতে সবজি, বিশেষ করে শসার আবাদ হয়েছে বেশি এলাকায়। প্রথম দিকে শসার দাম বেশি হলেও আগামীর দিনগুলোতে শসার দর-দাম নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা।


মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাহেবপাড়া এলাকার সবজি চাষি মো. নয়া মিয়া বলেন, এক বিঘা জমিতে শসা আবাদের জন্য জমি তৈরি, বীজ বপন, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি শসা পাইকারি হিসেবে ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি শসা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। বাজারদর এই গতিতে কমতে থাকলে শসা চাষে নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আনোয়ার হোসেন নামের আরেক শসা চাষি বলেন, যারা আগাম শসার আবাদ করেছে তারা দামে শসা বিক্রি করতে পেরেছিল। এখনকার বাজারদর যা আছে তাতে কোনোরকমে চালানো যাবে। কিন্তু দরপতন আরও হলে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।

মোস্তফা হোসেন নামের এক বৃদ্ধ সবজি চাষি বলেন, বাজারে গেলে সবজির দাম হাতের নাগালের বাইরে মনে হয়। কিন্তু এই সবজি চাষাবাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর শ্রমিকের বাজারদর যে হারে বেড়েছে সেই তুলনায় সবজির দাম অনেক কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।


মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ১১৯১ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। সবজির আবাদ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সবজি আবাদের পরিমাণ আরও বাড়বে।

আলাদাভাবে শসা আবাদের জমির পরিমাণের তথ্য এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। তবে জেলায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। শসাসহ বিভিন্ন সবজি চাষে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে সহায়তার জন্য কৃষি বিভাগের লোকজন কাজ করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

;

‘প্রচণ্ড গরমেও আমরা আগুনের কাছে বন্দি’



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচণ্ড গরমে যখন মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে, ঠিক তখন তাদের আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে গরমকে উপেক্ষা করে কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাদের বয়স প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ছুঁই ছুঁই। কেউ কেউ পড়েছেন ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত, আবার কেউ কেউ টেন-ফেল। শেষমেশ তাদের জায়গা হয়েছে মিষ্টির কারখানার আগুনের চুলার পাশে। সমস্যা একটাই অভাব। যার কারণে আজ তারা আগুনের কাছে বন্দি অনেকটাই!

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) তালার পাটকেলঘাটা ভাগ্যকুল মিষ্টি কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে প্রথমে ঢুকতেই দেখা যায় দাউ-দাউ করে জ্বলছে বড়-বড় চুলা। চুলার ওপরে বসানো কড়াই আর তার মধ্যে আগুনের জ্বালের মধ্য দিয়ে ফুটছে দুধ। চুলার পাশে দাঁড়িয়ে সেই দুধ নাড়া দিচ্ছে অভিজিত গুড্ডুর মতো ছেলেরা।

চুলার পাশে একটু যেতেই মনে হলো আগুনের হলকা গায়ের ওপরে এসে পড়ল। মনে হচ্ছে আগুনের তাপে গায়ের লোমগুলো যেন পুড়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ আর অন্যদিকে চুলার আগুন। যেখানে মানুষ এক তাপদাহ সহ্য করতে নাজেহাল আর সেখানে তারা একে একে দুই তাপদাহের সঙ্গে লড়াই করছে। প্রচণ্ড এই তাপে যখন মানুষ নাজেহাল তখন চুলার পাশে দাঁড়িয়ে তারা ছোট গেঞ্জি গায়ে দিয়ে কাজ করছে।


তাদের একজন চুলায় দুধ জ্বাল দিতে থাকা অভিজিত মন্ডল গুড্ডু বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে আমরা আগুনের কাছে বন্দি। শুধু অভাবের কারণে। আমরা এখানে টাকার জন্য আগুনের সাথে লড়াই করছি। এই প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে আগুনের কাছে গেলে মনে হয় জীবন বের হয়ে গেল। এতো তাপ সহ্য করে আছি শুধুমাত্র টাকার জন্য। কারণ বাড়িতে বাবা প্যারালাইজড। অভাবের কারণে সেই ক্লাস ফাইভ থেকে বাইরে বের হয়ে পড়েছি। সেই থেকে আগুনের সাথে লড়াই। আগুনের পাশে থেকে-থেকে বেঁচে থেকেও শরীরটা পুড়ে গেছে। পুড়তে-পুড়তে এই শরীরে আগুন দিলেও আর পুড়বে না।

পাশের চুলায় দুধ ঢালতে থাকা অপু মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, দিনেরাতে মিলে মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুম হয়। বাকি ১৮ ঘণ্টা চুলার আগুনের পাশে থেকে কাজ করতে হয়। সকাল ১১টায় উঠে চুলা ধরিয়ে দুধ জ্বাল দিয়ে কাজ করতে করতে দুপুর ২টায় খেয়েদেয়ে একটু রেস্ট, তারপর আবার কাজ শুরু করে রাতে খেয়ে একটানা কাজ করে শেষ ভোর ৫ টা। এভাবে ঝড়, বৃষ্টি, গরম, বন্যা সবকিছু কাটছে আগুনের সাথে।

মিষ্টি গোল করতে থাকা বাঁধন রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রায় ২০-৩০ জন ছেলে এখানে কাজ করি। প্রায় সবার বয়স ১৮, ১৯, ২০ বছর ছুঁই ছুঁই। টাকার জন্য আমরা সবাই এখানে কাজ করছি। এটাই সত্যি যে টাকা হলে মানুষ সব জায়গাতে আটকায়। আমরা যেমন টাকার জন্য আগুনের কাছে আটকে গেছি। এটাই কপাল। এ দেহ আগুনে পুড়ে ছাই।

;