গড়াই নদীর ভাঙন আতংকে সহস্রাধিক পরিবার
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গড়াই নদীর ভাঙন আতংকে দিন কাটাচ্ছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। প্রতি বছরই নদী ভাঙনের স্বীকার এসব মানুষগুলো এখন ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
প্রতি বছরই গড়াই নদীতে পানি বৃদ্ধি ও হ্রাসের সময়ই দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। এরই মধ্যে নারুয়ার সোনাকান্দর, কোনাগ্রাম, জামসাপুর, মরাবিলা, বাকসাডাঙ্গি, নারুয়া গ্রাম ও জঙ্গল ইউনিয়নের পাঁচপটুরা, বিজয়নগর, হাবাসপুর, পুষআমলা গ্রামের নদীগর্ভে চলে গেছে ফসলি-কৃষি জমি, বসত-ভিটা, পাকা স্থাপনা, সড়ক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অনেক গাছপালা।
দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে গড়াই নদী ভাঙলেও ভাঙনরোধে নেই কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা। ভাঙন শুরু হলেই কেবলমাত্র বালু ভর্তি কিছু জিও ব্যাগ ফেলেই দায় মুক্তি হতে চায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর তাদের আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।
তবে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিমের নির্দেশনায় গড়াই নদী ভাঙনরোধে গত কয়েক বছর ধরে কিছুটা কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীর ভাঙনরোধে বড় একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরেজমিন নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছর নদী ভাঙতে ভাঙতে একেবারে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। নদীর পাশের কৃষি আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা এরই মধ্যে গ্রাস করেছে নদী।
নারুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদীর ভাঙন থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য অনেকেই নদীর কূল হতে তাদের বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধের জন্য বাঁশের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। বাঁশ দিয়ে নদীর কয়েকটি জায়গায় পাইলিং করে নদীর স্রোতের গতিবেগ কমানোর চেষ্টা করছেন।
নারুয়ার ৬ নং ওয়ার্ডের গড়াই নদীর পাড়ে বসবাসকারী আব্দুল রাজ্জাক, শিমুল মোল্লা, ফরিদ মোল্লা, এরশাদ মন্ডল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, প্রতি বছরই নদী ভাঙছে। সবাই এটা দেখছেও। কিন্তু ভাঙনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্য কেউ উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। আমরা চাই সরকার যেন দ্রুত আমাদেরকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করে।
নারুয়া ৬ নং ওয়ার্ডেরই আরেক বাসিন্দা পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধ সমছের মোল্লা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার পরিবারটাই নদী খেয়ে ফেলেছে। ২০ বছর ধরে শুধু এই নদীর ভাঙা-গড়া দেখছি। ভাঙনরোধে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দেখিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রায় ৩০ বিঘা জমি ছিল। সব জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমি ভূমিহীন। এখন আর আমার কোনো জমি-জমা নেই। এই যে কুঁড়ে ঘরটা দেখছেন- এটাও হয়ত এবার নদীতে ভেঙে যাবে।’
জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও নারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এসব এলাকার মানুষের এখন একটাই আতংক কখন বুঝি সব কেড়ে নিয়ে যায় গড়াই। গড়াই নদীর ভাঙনে প্রতিবছরই বিলীন হচ্ছে মানুষের সম্পদ। কিন্তু রক্ষা করার টেকসই কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। আমরা চাই- নদীর ভাঙন থেকে এ অঞ্চলের মানুষকে রক্ষার জন্য সরকার যেন দ্রুত স্থায়ী কোনো প্রকল্প হাতে নেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এমপি জিল্লুল হাকিমের নির্দেশনায় গড়াই নদীর ভাঙনরোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করেছি।’
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গড়াই নদীর ভাঙনরোধে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেই প্রকল্পটি নিয়ে বর্তমান প্রকল্পের কারিগরি কমিটি পর্যালোচনা করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে গড়াই নদীর ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়া সম্ভব না বলেও জানান তিনি।’