দূরপাল্লার বাসের যাত্রী নেই, ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ!
করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি ঘটছে। সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এমন অবস্থাতেও খুলে দেওয়া হয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচল। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না বাস মালিক শ্রমিকরা। নির্ধারিত অর্ধেক আসনেও যাত্রী পূরণ হচ্ছে না। যাত্রী কম থাকায় কমেছে বাসের ট্রিপ সংখ্যাও।
আগে যেখানে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যেত, সেখানে এখন যাত্রীর অভাবে বাস ছাড়ার কোন নির্দিষ্ট সময়ই মানতে পারছে না। অন্যদিকে যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বলে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল সেটির ধারের কাছেও নেই মালিকরা।
তার ওপর যাত্রীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, করোনাকালের জন্য সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
যাত্রীরা বলছেন, ভাড়া দ্বিগুণ আর সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার ওপরে আস্থা রাখতে না পারায় যাত্রী সংকট পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তবে বাস মালিক শ্রমিক এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলছেন, ভাড়া খুব বেশি নেওয়া হচ্ছে না। আসলে খুব জরুরি না হলে মানুষ কোথাও যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায় রাজধানীর, কল্যাণপুর, গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালে ৩০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বেশিরভাগ বাস ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। বাস টার্মিনালেও যাত্রীদের আনাগোনা খুব কম।
যেখানে কল্যাণপুর থেকে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গগামী পরিবহন এসআর ট্রাভেলস্'র বাস ছেড়ে যেত। সেখানে সকাল ৯টা, ১০টা, ১১ টার শিডিউলের বাস শুধু ১২ টায় ছাড়ছে। তবুও যাত্রী নির্ধারিত আসনের ৪০ শতাংশ পূরণ হয়নি।
রংপুরগামী যাত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী মোরশেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, যেসব শর্তে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে, সেগুলোর ধারে কাছেও নেই বাস মালিকেরা। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ৪ ঘণ্টা ধরে বসে আছি। এমন তো কথা ছিল না। যেহেতু বাস ফাঁকা থাকবে সে জন্যই তো ভাড়া বেশি তাই না? তারা লোকাল বাসের মতো সব সিট বিক্রি করেই গাড়ি ছাড়ছে।
বগুড়াগামী যাত্রী মেহেদি হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এসআর'র নন এসিতে বগুড়ার ভাড়া ৩৫০ টাকা ছিল। আজকে দেখলাম ৬০০ টাকা। ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি নিশ্চয় ৬০০ টাকা হয় না। তারপরও কি বাজে সার্ভিস। যাত্রী নিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সন্তুষ্টি হচ্ছে না। তারা বাস ছাড়ছে না।
জানতে চাইলে আগমনী পরিবহনের একজন চালক বার্তা২৪.কমকে বলেন, এমনিতেই অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার বাধ্যবাধকতা। তার ওপর যাত্রী কম। বেশিরভাগ সময়ই ২০-২৫ যাত্রী নিয়ে যেতে হয়। আমাদেরই পোষায় না মালিকের কিভাবে চলবে।
সার্বিক বিষয় অথ্যাৎ যাত্রী সংকট এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনায় যাত্রী সংখ্যা কমেছে। সরকারকে সহযোগিতা করতে কম যাত্রী নিয়েই গাড়ি চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলবে। আর যাদের কথা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে; এমন যদি কেউ করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই প্রশ্নের জবাবে হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'যাত্রীর সংকটে বিভিন্ন রুটে হানিফ পরিবহনের বাসের সংখ্যা কমিয়ে এনেছি। একটি গাড়িতে ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী পাওয়া অনেক দুরূহ ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে বেতন উঠছে না'।
আর বাড়তি ভাড়া ব্যপারটা এমন যে, যেখানে যাত্রীই পাচ্ছিনা সেখানে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
প্রসঙ্গত গত ৩১ মে করোনাকালীন গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও তা কমিয়ে ৬০ শতাংশ করে মন্ত্রণালয়।