গরুর নাম ড্যান্সার, ১৮ লাখ দাম তার!
গরুটি দাঁড়ানো অবস্থায় এক মুহূর্ত স্থির থাকে না, পা দুটো আর মাথা নাচাতেই থাকে। সেই সঙ্গে লেজ নাড়ানো তো আছেই। বলা চলে সব সময় শরীরটা দুলতেই থাকে তার। তাই তার চলন-বলনের সঙ্গে মিল লাল রঙের এই গরুটির নাম রাখা হয়েছে ড্যান্সার!
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বড় করা হয়েছে ড্যান্সারকে। এক বছর বয়সে তাকে আনা হয়েছে, তিন বছর বয়সী ড্যান্সারের ওজন প্রায় এক হাজার। তাই মালিক দাম ধরেছেন ১৮ লাখ টাকা।
রাজধানীর গাবতলী বেড়িবাঁধ এলাকায় সাদেক অ্যাগ্রোর একটি ড্যান্সারের দেখা মিলল। সাদেক অ্যাগ্রোর খামারগুলো কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ড্যান্সারের মতো প্রায় বড় বড় প্রায় ৪৫টির মতো উন্নত জাতের গরু রয়েছে। অধিকাংশই গরু আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা। অল্প বয়সে এনে লালন পালন করে বড় করা হয়েছে গরুগুলোকে। কোনটি ১৬ মাস বয়সে আবার কোনটি ১৮ মাসে বয়সে আনা হয়েছে।
এক মাসেরও কম সময় বাকি ঈদুল আজহার। মুসলিম ধর্মের চিরায়ত বিধান অনুযায়ী প্রতিবছর ঈদুল আজহায় কয়েক লাখ পশু কোরবানি হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এবার মহামারি করোনার কারণে মানুষের মধ্যে একটু শঙ্কা বিরাজ করছে। তারপরও বসে নেই গরুর খামারিরা। দেশী ও আমদানি করা বিভিন্ন জাতের গরু এনে খামার গরুতে পরিপূর্ণ করেছেন। এবার গরুর ঘাটতি নেই সেটা মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকেই জানানো হয়েছে।
ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী উন্নত জাতের গরু আমদানি করে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে সাদেক অ্যাগ্রো লিমিটেড। এই খামারে গত কয়েক বছর ধরে উন্নত জাতের গরু বিক্রি করার রেকর্ড রয়েছে। এবারও ব্রাহমা, ব্রাংগাস, এবারও আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে উন্নত জাতের গরু আনা হয়েছে। অবশ্য গরুগুলো দুই তিন বছর আগেই এই খামারে এসে বড় হয়েছে। কোনটা দুই বছর কোনটা ৩ বছর আবার কোনটা ৪ বছর ধরে এই খামারের আলো বাতাসেই বড় হয়েছে।
আমেরিকার ব্রাহমা জাতের গরুর সাধারণত বড় আকৃতির হয়ে থাকে। সাদেক অ্যাগ্রোতে ব্রাহমা জাতের কয়েকটি গরু রয়েছে। তারমধ্যে খামারে লালন পালন করার সময় চকলেট লালচে কালারের একটি ব্রাহমা জাতের গরুর আদর করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোজো’। চলনে বলনে এদের ভেতর একটু আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে। থাকার জন্য পৃথক ঘর, মাথার উপর সার্বক্ষণিক দুটি ফ্যান। মুখের সামনের বড় পানির পাত্র। ঘুমানোর জন্য বিছানো রয়েছে নরম কার্পেট।
রোজোকে ১৮ মাস বয়সে আমেরিকা থেকে প্লেন যোগে বাংলাদেশে আনা হয়। এখন তার বয়স প্রায় ৪ বছর। এই সময় বাংলাদেশের আবহাওয়া খাবার দাবারের সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। তার শরীরের গড়ন দেখলেই বুঝা যায়। কারণ তার ওজন ১৩০০ কেজির ওপরে। গরুটি বিক্রি হয়েছে ৩৭ লাখ টাকায়।
রোজোর মতই বিশাল দেহের অধিকারী ব্রাহমা জাতের আর একটি গুরু। এটির গায়ের রং মাথার দিকে কালো, পেটের দিকে অ্যাশ এবং পেছনের দিকটাও কালো। এটির ওজন ১২০০ কেজির ওপরে। খামারিরা গরুটির আদর করে নাম দিয়েছে টাইগার। এই গরুটি অবশ্য একটু রাগী। সুযোগ পেলে কাউকে ছাড়ে না। তবে যারা লালন পালন করে তাদের কথার বাইরে খুব বেশি একটা যায় না। টাইগারও বিক্রি হয়েছে সঠিক দাম বলতে পারেননি খামারের ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলাম। তবে ৩০ লাখের ওপরে এইটুক জানেন তিনি।
সাদেক অ্যাগ্রোতে আরো রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ব্রাংগাস জাতের গরু। সেই গরুর মধ্যে একটি কুচকুচে কালো নাম তার গিলবাড। ওজন ১ হাজার ৫০ কেজি। লালচে রং এর আরো একটি গরু রয়েছে। তার নাম দিয়েছে বাদশা। বাদশা আবার একটু আলাদা। সে অন্যদের সাথে খুব বেশি মেশে না। সব সময় একটু ভাব ধরে থাকে বলে তার নাম বাদশা।
গরুর পরিচর্যা সম্পর্কে শরিফুল ইসলাম বলেন, এদের খাবার-থাকা সবকিছু রাজকীয়। প্রতিদিন সময়মতো তিন বেলা খাবার দিতে হয়। এক একটি গরুর ২৫ থেকে ২৬ কেজি করে খাবার দিতে হয় দিনে। খাবার হিসেবে থাকে ধানের কুড়া, গমের ভূষি, মসনার খৈল, কালোজিরার খৈল, গাজর, মিস্টি কুমড়া। শুধু তাই না এসব গরুর শরীর ম্যাসাজ করার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যখন যেটা ছেড়ে দেওয়া হয় অটো মেশিন লাগানো আছে সেখানে দিয়ে নিজের ইচ্ছামত শরীর ম্যাসাজ করে নেয়। আবার দুই বেলা গোসল করাতে হয়। মাথার উপর সবসময় দুটো ফ্যান ঘোড়ে। পানির জন্য মুখের সামনে বড় পাত্র আর ঘুমানোর জন্য নরম বিছানা।