‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’ না করলে সংস্থা চালাতে পারবেন না



শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তার দায়িত্ব গ্রহণ করার গুণে গুণে ৫৪ দিন হলো। দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিনেই দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন। তার এমন অ্যাকশনে ঢাকাবাসীর মনে কিছুটা স্বস্তি ও আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছে।


তবে তার এই অ্যাকশন কি অব্যাহত থাকবে নাকি কোথাও থমকে যাবে, নাকি পুরনোদের সরিয়ে নতুনদের জায়গা দেওয়া হবে? এ রকম নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বললেন, 'হায়ার অ্যান্ড ফায়ার না করলে সংস্থা চালাতে পারবেন না'।


হায়ার অ্যান্ড ফায়ার এর আভিধানিক অর্থ হলো-কাউকে নিয়োগ দিলাম কাজে পছন্দ না হলে সাথে সাথে তাকে বের করে দেবো বা কাজ ভালো না লাগলে বাদ।

বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস

বার্তা২৪.কমের পাঠকদের জন্য বুধবার (৯ জুলাই) নেওয়া ডিএসসিসি মেয়রের সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

বার্তা২৪.কম: দায়িত্ব গ্রহণ করেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়েছেন। এটি অব্যাহত থাকবে কিনা? আপনি বলেছেন সিটি করপোরেশনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, তাহলে সেটা দূর করতে পরিকল্পনা কি?

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: আমরা প্রশাসনিক সংস্কারের হাত দিয়েছি। প্রশাসনিক সংস্কার চলমান থাকবে। প্রথম দিন হয়তো বা দুইজনকে অপসারণ করাতে সংবাদ মাধ্যমে বেশি প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু এর পরবর্তীতেও এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

শুধু দুর্নীতিই না; কোথাও অবহেলা, গাফিলতি পাওয়া গেলেই সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আবার শুধু অপসারণ না, বিভাগীয় মামলাও এরমধ্যে করা হয়েছে। এমনকি ফৌজদারি মামলাও করা হয়েছে। আপনারা হয়তো জানেন, সংস্থার টাকা সংস্থাকে জমা না দিয়ে পে-অর্ডার ভাঙিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে এরকম অভিযোগও পাওয়া গেছে।

ডিএসসিসির রাজস্ব আহরণে বড় একটি ফাঁকি রয়েছে ও ঘাটতি রয়েছে-মেয়র তাপস

বার্তা২৪.কম: আপনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়ায় ঢাকাবাসী আশান্বিত আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন আপনার পছন্দের লোকদের শীর্ষ পদে বসাতেই এমন অ্যাকশন? বিষয়টা যদি পরিষ্কার করেন।

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: যারা অপসারিত হবে তারা তো কিছু না কিছু বলবেই। কিন্তু যাদের অপসারণ করা হয়েছে তারা সকলেই দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা সর্বস্বীকৃত এবং শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত না আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। সুতরাং সেটা বিষয় না। বিষয় হলা যে আমরা প্রশাসনিক সংস্কারে হাত দিয়েছি। প্রশাসনিক সংস্কারটা চলমান থাকবে।

এগুলো কিন্তু প্রায় সবগুলোই হাতে নাতে ধরা। যেখানে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় বা যেটা স্বীকৃত, যেটা দীর্ঘ দিন ধরে জানা যাচ্ছে, যেসব ব্যক্তিরা সংস্থার স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে নিজ স্বার্থে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে একটি ক্ষমতা দেওয়া আছে আইনে। আর এটা সারাবিশ্বেই আছে ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’ না করলে প্রশাসন চালাতে পারবেন না, সংস্থা চালাতে পারবেন না। তো এই দিকগুলো বিবেচনা করে আইনটা আছে। প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া এই সংস্থাকে তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না।

বার্তা২৪.কম: আপনার সংস্থায় তো দীর্ঘদিন লোকবল সংকটের কথা বলা হচ্ছে। এটা নিয়ে পরিকল্পনা কি?

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: আমরা নতুন নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছি। ভালো, দক্ষ ও  শিক্ষিত কর্মকর্তা প্রয়োজন। জেনে অবাক হবেন, যে সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নেয়া আছে বা জনবল যে সংখ্যক আছে তাদের উত্তর সিটি করপোরেশনের থেকে চারগুণ বেশি বেতন দিতে হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী ঢাকাবাসী তার সুফলগুলো পাচ্ছে না। এগুলো প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া কিন্তু নির্মূল করা সম্ভব না, নিরাময় করা সম্ভব না। এ বিষয়গুলো আমরা খুব কঠোরভাবে ও গভীরভাবে দেখছি।

সমীক্ষায় দেখা গেছে এরকম আয়ের উৎস আছে ৩ লাখ। আর সেখানে ট্রেড লাইসেন্সের অন্তর্ভুক্ত মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার-মেয়র শেখ তাপস

বার্তা২৪.কম: বিশাল ঘাটতি নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। আগ যিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখনও ঘাটতির কথা বলা হয়েছিলো। বরাবরই এই ঘাটতির কথা আসছে। এর থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা কি?

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: প্রথম কথা হলো এটাও প্রশাসনিক সংস্কারের আওতায় পরে। এখানে রাজস্ব আহরণে বড় একটি ফাঁকি রয়েছে ও ঘাটতি রয়েছে। এ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণের আওতায় ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার। তবে আমার বিশ্বাস এখানে শুধুমাত্র মুদি দোকানেরই সংখ্যা ৩ লাখ। মুদি দোকান বা ছোট একটি দোকান থেকে ন্যূনতম ৫০০ টাকা আয় হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে এরকম আয়ের উৎস আছে ৩ লাখ। আর সেখানে ট্রেড লাইসেন্সের অন্তর্ভুক্ত মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার! এটা অন্তত পক্ষে ৫ লাখ অনায়াসে হওয়া দরকার। এরকম জায়গাগুলোতে আসলে নজর দেওয়া হয় নাই।

আমার কিন্তু কর বা উপকর বাড়োনোর প্রয়োজন নাই। আমি যদি ফাঁকিগুলোকে বন্ধ করতে পারি তাহলে ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হবে। আয়ও অনেক বৃদ্ধি পাবে। আইনে মোট ২৬টি খাত দেয়া আছে। কিন্তু দেখা গেছে আমি আয় করছি মাত্র ৮টি খাত থেকে। বাকি খাতগুলো থেকে তো আয়ই হচ্ছে না। এখানে বড় একটি ফাঁক রয়েছে। যেসব জায়গা থেকে আয় করা হচ্ছে সেখানেও দুর্নীতি রয়েছে।

আমাদের যে ফাঁক ফোকরগুলো আছে, গাফিলতি রয়েছে সেগুলো  বন্ধ করতে হবে

বার্তা২৪.কম: রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনাটা কি?

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: রাজস্ব আহরণে নজর দিচ্ছি। কিন্তু তা কোনো রকম কর বৃদ্ধি না করে। গতকালই আমাদের সভাতে বাজেটের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কিছুদিনের মধ্যেই বাজেট উপস্থাপন করব। সেখানে কর বৃদ্ধি না করে আশা করছি রাজস্ব আহরণ অন্তত পক্ষে দ্বিগুণ হবে। যেহেতু করোনা মহামারি চলছে। অন্তত পক্ষে ঢাকাবাসীকে এটা থেকে পরিত্রাণ দেওয়া প্রয়োজন। সুতরাং আগের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের যে ফাঁক ফোকরগুলো আছে, গাফিলতি রয়েছে সেগুলো  বন্ধ করতে হবে।

গৃহকর নিয়ে বলেন, যেসব জায়গায় ফাঁকি রয়েছে সেগুলোতে নজর দিচ্ছি। দেখা যাচ্ছে একটা চারতলা ভবন হয়ে গেছে, কিন্তু তার কর নির্ধারণ করা আছে ১ তলা পর্যন্ত। এই দুর্নীতির জায়গাগুলো বন্ধ করতে চাই। এটা করতে পারলে আমরা দেখছি যে রাজস্ব আহরণ আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে।

দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে ব্যবস্থা চলমান উদাহরণ দিয়ে মেয়র বলেন, জেনে অবাক হবেন বুধবার (৮ জুলাই) কার্যালয়ে আসার সাথে সাথেই অভিযোগ পেলাম, আমার একজন লাইসেন্স সুপারভাইজার ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার জন্য অতিরিক্ত টাকা উৎকোচ চেয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক সংস্কারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা তো চলমান প্রক্রিয়া।

   

ভাইয়ের কাঁধে চড়ে বলীখেলা দেখল ছোট্ট দুর্জয়!



সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চতুর্দিকে হাজার হাজার মানুষ। চলছে ঢোলের মাতম। মাঝখানে উঁচু মঞ্চের দিকে সবার চোখ। বিপরীতে দর্শক সারিতে দেখা মিললো ভিন্ন কিছুর! ছোট্ট এক শিশুকে নিজের কাঁধে চড়িয়ে বলীখেলা দেখাচ্ছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব নারায়ন। মূলত ছোট্ট মামাতো ভাই দুর্জয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে তাকে কাঁধে করে বলীখেলা দেখাতে নিয়ে আসেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বরের বলীখেলার ১১৫তম আসরে।

দুর্জয়ের বয়স ৭ বছর। এবার প্রথম নয়, আগেও সে বেশ কয়েকবার এই নারায়নের কাঁধে চড়েই বলীখেলা দেখতে আসে। দুর্জয় বার্তা২৪.কমকে বলে, ‘আমি বলীখেলা দেখতে এসেছি। ভাইয়ার কাঁধে চড়ে দেখেছি। গতবারও ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসেছেন। খুব ভাল লাগছে।’

নগরীর হাজারী গলি থেকে দুর্জয় দত্তকে নিয়ে এসেছেন ফুতাতো ভাই নারায়ণ। তিনি বলেন, ‘ও ছোট হওয়ায় একলা দেখতে আসতে পারে না। তাই, আমি ছোট ভাইকে আনন্দ দিতে এবং তার ইচ্ছে পূরণ করতে এবারও নিজের কাঁধে চড়িয়ে বলীখেলা দেখাতে নিয়ে এসেছি। আমি প্রতিবছর দুর্জয়কে নিয়ে আসি। অন্যান্য বার মঞ্চ এলাকায় ঢুকতে কষ্ট হত। পুলিশকে বলে এবার কোনো রকম অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করেছি। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তবে, এবার মঞ্চ আরেকটু উঁচু হলে দূর থেকে দেখতে সুবিধা হত।’

এবারের বলীখেলার ফাইনালে ১১ মিনিট শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর স্বেচ্ছায় হার মানেন রাশেদ। বিজয়ী ঘোষণা করা হয় বাঘা শরীফকে। তাঁদের দুজনই কুমিল্লার। আর সীতাকুণ্ডের রাসেলকে হারেয়ে এবারও তৃতীয় হন খাগড়াছড়ির সৃজন বলী।

এদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরীর লালদীঘি বলীখেলা প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নবীন-প্রবীন মিলে প্রায় ৮৪ জন বলী অংশ নেন। এর আগে বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার ১১৫ তম আসর উদ্বোধন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। উদ্বোধক চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি বলীখেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর।

মূলত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুবকদের সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশীর হাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলীখেলা। এরপর, ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি ১২ বৈশাখ চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে জব্বারের বলীখেলা। যদিও করোনা মহামারীর কারণে ২০২০-২০২১ সালে বলীখেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। পরের বছর ২০২২ সাল থেকে আবার নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে জব্বারের বলীখেলা। এ বছর জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসর বসেছে।

;

সাজেকে সড়কে নিহত ৬ জনের বাড়ি ময়মনসিংহে, এলাকায় শোকের মাতম



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাঙামাটির সাজেকের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯ জনের মধ্যে ৬ জনের বাড়িই ময়মনসিংহে। এদের মাঝে ৫ জন ঈশ্বরগঞ্জের ও একজন গৌরীপুর উপজেলার। নিহতরা হওয়া সবাই নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন বলে জানা গেছে।

এর আগে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সাজেকের নব্বই ডিগ্রি এলাকায় সাজেক-উদয়পুর সীমান্ত সড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনার সময় শ্রমিকবাহী মিনি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ১০০ ফুট খাদে পড়ে ৯ জন নিহত হন। আহত হন আরো ৮ জন। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের খবর পরিবারে এসে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহতরা হলেন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের রিয়াছত আলী ভূইয়ার ছেলে এরশাদুল (৪২), তারুন্দিয়া ইউনিয়নের গিরিধরপুর গ্রামের শহীদুল্লাহ'র ছেলে শাহ আলম (২৮), একই ইউনিয়নের শ্রীফুরজিথর গ্রামের মো. চাঁন মিয়ার ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (২১), মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে নয়ন মিয়া (২০), মো. নজরুল ইসলামের ছেলে মোহন মিয়া (১৭)। গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে তপু হাসান (১৭)।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মরদেহ বাড়িতে না পৌঁছালেও পরিবারে শোকের মাতম চলছে। শুধু তা-ই নয়, এমন মর্মান্তিক খবরে এলাকাতেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতের খবর শুনে গত রাত থেকেই আশেপাশের লোকজনসহ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষজন।

তারুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রানা বলেন, সাজেকের দুর্ঘটনায় নিহত ৯ জনের মধ্যে ৪ জনের বাড়ি আমার ইউনিয়নে। এই ঘটনায় আমি নিজেও খুবই মর্মাহত।

বড়হিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজিজুল হক ভুইয়া মিলন বলেন, আমার ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের রিয়াছত আলী ভূইয়ার ছেলে এরশাদুল সাজেক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। শুনেছি মরদেহ নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছে।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে থেকে প্রতি পরিবারে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড় পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক নিহতদের পরিবারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে'।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় বলেন, ওই সড়ক দুর্ঘটনায় মইলাকান্দা ইউনিয়নের একজন মারা গেছেন। আরেকজন আহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন।

;

বন বিভাগের গেটের দেওয়ালে চাপা পড়ে শিশুর মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ায় বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে জুরাইন আহমেদ (৪) নামে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে খোকসা উপজেলা বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে এ ঘটনা ঘটে।

জুরাইন আহমেদ খোকসা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মাঠপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী উজ্জলের ছেলে।

নিহত শিশুর চাচা আজিজুল ইসলাম জানান, শিশুরা খেলছিলো আবার কেউ ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলো। এসময় অসাবধানতাবশত গেটের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে নিহত হয়।

বন কর্মকর্তার অফিসটি সব সময় অরক্ষিত থাকে। কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনায় জুবায়েরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

উপজেলা বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, এক বছর আগে কুষ্টিয়ার এক ঠিকাদার গেট নির্মাণ করেছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। গেট নির্মাণে ত্রুটি থাকতে পারে। ঠিকাদার গেটের পিলার এমনভাবে তৈরি করেছেন, মনে হচ্ছে পিলার দুটি মাটির ওপরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নাড়া দিলেই নড়ছে। বন কর্মকর্তার গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;

বাঘা শরীফের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে দুই গুরুর ত্যাগ!



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাবা-মায়ের দেওয়া নাম মোহাম্মদ শরীফ। কিন্তু বলীখেলার রিংয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপের কারণে সেই আসল নামটিই এখন বলতে গেলে হাওয়া। সবার মুখে মুখে রটে তাঁর নামটাই হয়ে গেছে ‘বাঘা শরীফ’। কুমিল্লার হোমনার এই ডানপিটে হৃষ্টপুষ্ট শরীরের তরুণ এবার প্রথমবার অংশ নিয়েছিলেন ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলায়। পরেরটাতো ইতিহাস। একে একে চ্যালেঞ্জ রাউন্ড, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল জিতে ইতিহাসের পাতায় যেন নিজের নামটা খুঁদাই করে গেলেন কুমিল্লার মানুষের ‘প্রিয় বলী’ বাঘা শরীফ। গল্পটা যেন সেই পুরনো প্রবাদের মতো-আসিলাম, দেখিলাম, জয় করিলাম!

অথচ বাঘা শরীফের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথাও ছিল না। বলীখেলায় অংশ নিতে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে এলেও চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে তাঁকে রাখেনি আয়োজক কমিটি। তাতে মন খারাপ হয়ে যায় শরীফের। সেটি দেখে বাঘা শরীফকে সুযোগ দিতে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন জীবন বলী নিজের নামও প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তাতেও আয়োজকদের মন গলেনি। শেষ পর্যন্ত গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীও বাঘা শরীফকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রত্যাহার করে নেন নিজের নাম। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়ে শাহজালালের অনুরোধ রাখে আয়োজক কমিটি। আর এতেই ভাগ্য খুলে যায় বাঘা শরীফের। চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে খেলতে নেমেই কক্সবাজারের নুর মোহাম্মদ বলীকে হারিয়ে বাঘা শরীফ উঠে যান সেমিফাইনালে। আর সেমিফাইনালে একইভাবে হারান সীতাকুণ্ডের রাসেল বলীকে।

ফাইনাল শুরু হতেই রিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বাঘা শরীফকে নানা দিক নির্দেশনা দিতে থাকেন শাহজালাল বলী। অদূরে দাঁড়িয়ে জীবন বলীও সমর্থন জানান শরীফকে। আর এতেই কিনা দ্বিগুণ উৎসাহে রাশেদকে চাপে রাখেন শরীফ। অবশ্য রাশেদও কয়েকবার চেষ্টা করেন ‘মরণকামড়’ দেওয়ার। কিন্তু শরীফের বলের কাছে পরাস্থ হন বারবার। এভাবে ১১ মিনিট ধরে চলতে থাকে ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’। কিন্তু থামতে যে হবেই! শেষ পর্যন্ত রাশেদ পারলেন না আর, মেনে নেন হার। এর মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক এই বলীখেলা পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন।

শরীফ বলী জিততেই আনন্দে ফেটে পড়েন শাহজালাল ও জীবন বলী। জানতে চাইলে জীবন বলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাড়ি থেকে আসার আগে শরীফ আমাকে ফোন করেছিলেন। তার খেলার খুব আগ্রহ ছিল, সেটি জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছিল। আর সে খুব ভালো বলীও। কুমিল্লায় তাঁকে এক নামে চেনেন সবাই। কিন্তু তাঁকে সুযোগ দিচ্ছিল না আয়োজক কমিটি। মূলত তাঁকে সুযোগ করে দিতে আমি নিজের নাম প্রত্যাহার করি নিই। কিন্তু এরপরও সুযোগ না দেওয়ায় শাহজালাল বলীও তাঁর জন্য নাম প্রত্যাহার করে নেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের মুখ উজ্জ্বল করল শরীফ। আর আয়োজক কমিটিকেও দেখিয়ে দিল সে কত বড় বলী।’

ছবি: জীবন বলী ও শাহজালাল বলী

প্রায় একই কথা বললেন শাহাজালাল বলীও। তিনি বলেন, ‘বাঘা শরীফ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সে খুব আশা নিয়ে খেলতে এসেছিল। কিন্তু আয়োজক কমিটি সুযোগ দিচ্ছিল না। সেজন্য আমি নিজে না খেলে তাঁকে খেলাতে অনুরোধ জানাই। ভাগ্যিস কমিটি সেই অনুরোধ মেনে নিয়েছিল।’

দুই সিনিয়র বলীর কাছে শ্রদ্ধায় যেন নুইয়ে পড়লেন বাঘা শরীফ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শাহজালাল ভাই আমার কাছে বড় ভাইয়ের মতো। বলীখেলায় তিনি আমার গুরুতুল্য। জীবন ভাইও তেমন। তাঁদের দুইজনের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাঘা শরীফ ট্রফির সঙ্গে পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকার সম্মানীও। এই টাকায় কি করবেন এমন প্রশ্নে বাঘা শরীফ বললেন, ‘স্মৃতি হিসেবে রেখে দেবে বেশিরভাগ টাকা। আর কিছু টাকায় আমার দুই বছরের মেয়ে মিমের জন্য কাপড় কিনে নিয়ে যাব। মেয়েকে বলে এসেছিলাম চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরব। সে বুঝতে না পারলেও হেসেছিল। এখন নিশ্চয় আরও বেশি খুশি হবে।’

এবারের বলীখেলাটি হয়তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে দুই বলীর ‘ত্যাগের’ জন্যও। খেলায় অংশ নিলে শাহজালাল আর জীবন বলীর মধ্যেই হয়তো হতো ফাইনালের লড়াই, যেটা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। কিন্তু একজন জুনিয়রকে সুযোগ করে দিতে দুজন যেভাবে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন, সেটি ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। দর্শকেরা তাই বললেন, এমন ত্যাগও হয়!

আর বাঘা শরীফ তো বলেই দিলেন, ‘এই ট্রফি, এই সম্মানি আমার একার নয়, এই অর্জনের পেছনে পুরো কৃতীত্ব শাহাজালাল ভাই আর জীবন ভাই। তাদের ত্যাগই আমাকে এনে দিল চ্যাম্পিয়নের সম্মান।’

নাম প্রত্যাহার করে শুধু বাঘা শরীফকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটাই করে দিলেন না জীবন আর শাহজালাল। জানিয়ে গেলেন-লড়াই না করেও জেতা যায়!

;