‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’ না করলে সংস্থা চালাতে পারবেন না
নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তার দায়িত্ব গ্রহণ করার গুণে গুণে ৫৪ দিন হলো। দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিনেই দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন। তার এমন অ্যাকশনে ঢাকাবাসীর মনে কিছুটা স্বস্তি ও আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছে।
তবে তার এই অ্যাকশন কি অব্যাহত থাকবে নাকি কোথাও থমকে যাবে, নাকি পুরনোদের সরিয়ে নতুনদের জায়গা দেওয়া হবে? এ রকম নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বললেন, 'হায়ার অ্যান্ড ফায়ার না করলে সংস্থা চালাতে পারবেন না'।
হায়ার অ্যান্ড ফায়ার এর আভিধানিক অর্থ হলো-কাউকে নিয়োগ দিলাম কাজে পছন্দ না হলে সাথে সাথে তাকে বের করে দেবো বা কাজ ভালো না লাগলে বাদ।
বার্তা২৪.কমের পাঠকদের জন্য বুধবার (৯ জুলাই) নেওয়া ডিএসসিসি মেয়রের সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
বার্তা২৪.কম: দায়িত্ব গ্রহণ করেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়েছেন। এটি অব্যাহত থাকবে কিনা? আপনি বলেছেন সিটি করপোরেশনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, তাহলে সেটা দূর করতে পরিকল্পনা কি?
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: আমরা প্রশাসনিক সংস্কারের হাত দিয়েছি। প্রশাসনিক সংস্কার চলমান থাকবে। প্রথম দিন হয়তো বা দুইজনকে অপসারণ করাতে সংবাদ মাধ্যমে বেশি প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু এর পরবর্তীতেও এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শুধু দুর্নীতিই না; কোথাও অবহেলা, গাফিলতি পাওয়া গেলেই সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আবার শুধু অপসারণ না, বিভাগীয় মামলাও এরমধ্যে করা হয়েছে। এমনকি ফৌজদারি মামলাও করা হয়েছে। আপনারা হয়তো জানেন, সংস্থার টাকা সংস্থাকে জমা না দিয়ে পে-অর্ডার ভাঙিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে এরকম অভিযোগও পাওয়া গেছে।
বার্তা২৪.কম: আপনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়ায় ঢাকাবাসী আশান্বিত আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন আপনার পছন্দের লোকদের শীর্ষ পদে বসাতেই এমন অ্যাকশন? বিষয়টা যদি পরিষ্কার করেন।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: যারা অপসারিত হবে তারা তো কিছু না কিছু বলবেই। কিন্তু যাদের অপসারণ করা হয়েছে তারা সকলেই দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা সর্বস্বীকৃত এবং শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত না আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। সুতরাং সেটা বিষয় না। বিষয় হলা যে আমরা প্রশাসনিক সংস্কারে হাত দিয়েছি। প্রশাসনিক সংস্কারটা চলমান থাকবে।
এগুলো কিন্তু প্রায় সবগুলোই হাতে নাতে ধরা। যেখানে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় বা যেটা স্বীকৃত, যেটা দীর্ঘ দিন ধরে জানা যাচ্ছে, যেসব ব্যক্তিরা সংস্থার স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে নিজ স্বার্থে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে একটি ক্ষমতা দেওয়া আছে আইনে। আর এটা সারাবিশ্বেই আছে ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’ না করলে প্রশাসন চালাতে পারবেন না, সংস্থা চালাতে পারবেন না। তো এই দিকগুলো বিবেচনা করে আইনটা আছে। প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া এই সংস্থাকে তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না।
বার্তা২৪.কম: আপনার সংস্থায় তো দীর্ঘদিন লোকবল সংকটের কথা বলা হচ্ছে। এটা নিয়ে পরিকল্পনা কি?
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: আমরা নতুন নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছি। ভালো, দক্ষ ও শিক্ষিত কর্মকর্তা প্রয়োজন। জেনে অবাক হবেন, যে সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নেয়া আছে বা জনবল যে সংখ্যক আছে তাদের উত্তর সিটি করপোরেশনের থেকে চারগুণ বেশি বেতন দিতে হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী ঢাকাবাসী তার সুফলগুলো পাচ্ছে না। এগুলো প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া কিন্তু নির্মূল করা সম্ভব না, নিরাময় করা সম্ভব না। এ বিষয়গুলো আমরা খুব কঠোরভাবে ও গভীরভাবে দেখছি।
বার্তা২৪.কম: বিশাল ঘাটতি নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। আগ যিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখনও ঘাটতির কথা বলা হয়েছিলো। বরাবরই এই ঘাটতির কথা আসছে। এর থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা কি?
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: প্রথম কথা হলো এটাও প্রশাসনিক সংস্কারের আওতায় পরে। এখানে রাজস্ব আহরণে বড় একটি ফাঁকি রয়েছে ও ঘাটতি রয়েছে। এ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণের আওতায় ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার। তবে আমার বিশ্বাস এখানে শুধুমাত্র মুদি দোকানেরই সংখ্যা ৩ লাখ। মুদি দোকান বা ছোট একটি দোকান থেকে ন্যূনতম ৫০০ টাকা আয় হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে এরকম আয়ের উৎস আছে ৩ লাখ। আর সেখানে ট্রেড লাইসেন্সের অন্তর্ভুক্ত মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার! এটা অন্তত পক্ষে ৫ লাখ অনায়াসে হওয়া দরকার। এরকম জায়গাগুলোতে আসলে নজর দেওয়া হয় নাই।
আমার কিন্তু কর বা উপকর বাড়োনোর প্রয়োজন নাই। আমি যদি ফাঁকিগুলোকে বন্ধ করতে পারি তাহলে ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হবে। আয়ও অনেক বৃদ্ধি পাবে। আইনে মোট ২৬টি খাত দেয়া আছে। কিন্তু দেখা গেছে আমি আয় করছি মাত্র ৮টি খাত থেকে। বাকি খাতগুলো থেকে তো আয়ই হচ্ছে না। এখানে বড় একটি ফাঁক রয়েছে। যেসব জায়গা থেকে আয় করা হচ্ছে সেখানেও দুর্নীতি রয়েছে।
বার্তা২৪.কম: রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনাটা কি?
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস: রাজস্ব আহরণে নজর দিচ্ছি। কিন্তু তা কোনো রকম কর বৃদ্ধি না করে। গতকালই আমাদের সভাতে বাজেটের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কিছুদিনের মধ্যেই বাজেট উপস্থাপন করব। সেখানে কর বৃদ্ধি না করে আশা করছি রাজস্ব আহরণ অন্তত পক্ষে দ্বিগুণ হবে। যেহেতু করোনা মহামারি চলছে। অন্তত পক্ষে ঢাকাবাসীকে এটা থেকে পরিত্রাণ দেওয়া প্রয়োজন। সুতরাং আগের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের যে ফাঁক ফোকরগুলো আছে, গাফিলতি রয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
গৃহকর নিয়ে বলেন, যেসব জায়গায় ফাঁকি রয়েছে সেগুলোতে নজর দিচ্ছি। দেখা যাচ্ছে একটা চারতলা ভবন হয়ে গেছে, কিন্তু তার কর নির্ধারণ করা আছে ১ তলা পর্যন্ত। এই দুর্নীতির জায়গাগুলো বন্ধ করতে চাই। এটা করতে পারলে আমরা দেখছি যে রাজস্ব আহরণ আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে।
দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে ব্যবস্থা চলমান উদাহরণ দিয়ে মেয়র বলেন, জেনে অবাক হবেন বুধবার (৮ জুলাই) কার্যালয়ে আসার সাথে সাথেই অভিযোগ পেলাম, আমার একজন লাইসেন্স সুপারভাইজার ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার জন্য অতিরিক্ত টাকা উৎকোচ চেয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক সংস্কারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা তো চলমান প্রক্রিয়া।