রংপুরে পশুরহাটে ক্রেতা কম, সাড়া নেই অনলাইনেও
ঈদুল আযহার বাকি আর ২০ দিন। ঈদকে সামনে রেখে রংপুরে বিভিন্ন হাটে তোলা হচ্ছে কোরবানির পশু। কিন্তু এখনো সেভাবে শুরু হয়নি গরু-ছাগলের বেচা-কেনা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে হাটগুলোতে। গরু কেনায় তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। হাটে সাধারণ ক্রেতাদেরও নেই ভিড়।
এদিকে, করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে রংপুরে নয়টি অনলাইনে পশুরহাট চালু করেছে প্রাণি সম্পদ দফতর। এতে তেমন সাড়া মিলছে না বলে দাবি অনলাইন নির্ভর খামারিদের। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
যদিও হাট ইজারাদাররা বলছেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে ততোই গরু কেনাবেচা জমে উঠবে।
অন্যদিকে রংপুর মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন পশুরহাটে নানামুখী তৎপরতাও শুরু হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, ব্যাপারী ও দালালরা হাটে হাটে আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশুর খোঁজখবর নিচ্ছেন। কেউ কেউ কম দামে কিনে বেশি লাভের আশায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেকেই হাটে গরু না নিয়ে বাড়ি থেকে বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছেন। যদিও খামারিরা ঈদকে ঘিরে গরু মোটা তাজাকরণ শেষে এখন বিক্রির অপেক্ষা করছেন।
রংপুরে গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি হাটে কথা হয় কয়েকজন খামারির সাথে। তারা জানান, এখন পর্যন্ত হাটে ক্রেতা ও ব্যাপারীদের তেমন আনাগোনা বাড়েনি। অনেকে হাটে এসে বাজার যাচাই করে দেখছেন। দেশি গরুর চাহিদা আছে তবে মিয়ানমার ও ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধের দাবি তাদের।
জানা গেছে, রংপুর বিভাগের সব থেকে বড় গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। তিন বছর ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুটি লালন পালন করছেন রংপুর সদরের পাগলাপীর এলাকার খামারি শহিদুল। তিনি পরম আদরের গরুটির নাম রেখেছেন 'সুলতান'। ঈদকে ঘিরে সুলতান ছাড়াও বেশ কয়েকটি গরু লালন পালন করেছেন এই খামারি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো গরুই বিক্রি করতে না পারায় পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
শহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে জানান, সুলতানের ওজন প্রায় ১৫০০ কেজি। এর মূল্য হাঁকিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা বাড়িতে এসে সুলতানকে দেখে ২২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম করেছেন। এতেও তিনি সুলতানের গলার দড়ি হাত ছাড়া করেননি।
এদিকে, শহিদুলের মতো অনেক খামারি এখন করোনা সংক্রমণ আর চলতি বর্ষা মৌসুমে গরু বেচাকেনা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন। তারা বলছেন, গরু অবিক্রীত থেকে গেলে বা সঠিক বাজার মূল্য না পেলে হুমকিতে পড়বে জেলার খামারগুলো।
রংপুর ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন একেকটা গরুর পেছনে খাবারসহ অন্যান্য খরচ হয় ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এ অবস্থায় যদি কোরবানিতে গরু বিক্রি করতে না পারি বা লোকসানে বিক্রি করতে হয়, তাহলে খামার টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’
অন্যদিকে ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের মুইব-ইবনে-ফেরদৌস জানালেন, পশুরহাটে এখনো তেমন সাড়া নেই। অনলাইনেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া হাটে গরু নিতে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে যদি একটা বিশেষ ট্রেনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চল থেকে শুধু গরু নিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় বিক্রির ব্যবস্থা করা যায়। এতে খামারিদের সুবিধা হবে।
এদিকে পশুরহাট জমে না ওঠার জন্য আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি আর বৈরি আবহাওয়ার পাশাপাশি করোনা ভীতিকে দুষছেন হাট ইজারাদার ও বিক্রেতারা। তারা বলছেন, ঈদের এক সপ্তাহ থেকে বিকিকিনি বাড়বে। তখন হাটে হাটে মানুষের উপচে পড়া ভিড়ও থাকবে।
রংপুর নগরীর লালবাগ হাটের ইজারাদার আব্দুল সালাম বার্তা২৪.কম-কে জানান, তারা এই মাসের শুরুতেই কোরবানি ঈদকে ঘিরে হাট প্রস্তুত করে রেখেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা আসছেন। কিছুটা জমে উঠেছে হাট। তবে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
এ পরিস্থিতিতে অনলাইন মার্কেটিংকে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা। এরইমধ্যে তারা রংপুর জেলায় কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য নয়টি অনলাইন পশুরহাট চালু করেছেন।
এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ দফতরের উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ হাবিবুল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘করোনা সংকটে অনেক সচেতন মানুষ ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনের মাধ্যমে পশু কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমরা সংকটময় পরিস্থিতিতে ফেসবুকে ই-মার্কেটিং পেজ খুলেছি। পশুরহাট নামে খোলা ওই পেজটি অনুসরণ করতে পারেন খামারিরা।’
রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, কোরবানির পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে এই বিভাগের আট জেলায় বাণিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে ৫৪ হাজার ২১টি। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ৮ হাজার ৪৪৯টি, নীলফামারীতে ২ হাজার ২৫০টি, কুড়িগ্রামে ১০ হাজার ৮৮২টি, দিনাজপুরে ১১ হাজার ৫৩২টি, লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৬৯৩টি, গাইবান্ধায় ৮ হাজার ৬৮৪টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ হাজার ২৪১টি এবং পঞ্চগড় জেলায় ৩ হাজার ২৯০টি। এছাড়া কেউ কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে আবার কেউ সংসারে সচ্ছলতা আনতে খামার গড়ে তুলে বিভিন্ন প্রজাতির পশু লালন-পালন করছেন।
সূত্র বলছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত বছর ১২ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৯টি পশু জবাই করা হয়েছে। এর বিপরীতে স্থানীয় সরকারি পশু চিকিৎসকদের সহযোগিতায় এ বছর রংপুর বিভাগের আট জেলায় কোরবানিযোগ্য ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ১৬৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাগল ও ভেড়া ৪ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৯টি, গরু-মহিষ, বলদ, ষাঁড় ও গাভী ৮ লাখ ৯২ হাজার ৯০৫টি এবং অন্যান্য ৪৯২টি।