ভাঙছে নদী, ছাড়ছে বাড়ি
সাদুল্লাহপুর উপজেলায় ঘাঘট নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে নদী নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি ও বাঁধ। এ ভাঙনের শিকার মানুষ ইতোমধ্যে বসতভিটা হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সকালে উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের শালাইপুর (মিয়াপাড়া-পাছপাড়া) গ্রামে দেখা যায়, ঘাঘট নদীর ভয়াবহ ভাঙনের চিত্র। সেখানে বসভিটা হারানো রফিকুল ইসলাম নদের ধারে বসে বোবা কান্না কাঁদছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে এ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আর পানির তীব্র স্রোতে বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এর কবলে শালাইপুর (মিয়াপাড়া-পাছপাড়া) নামকস্থানে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়িসহ ফসলি জমি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
সম্প্রতি রফিকুল ইসলাম নামের এক দিনমজুরের ঘরবাড়ি ও বাস্তভিটা চলে গেছে ঘাঘটের পেটে। এছাড়া নদী তীরের সাজেদুল, আঙ্গুর, সাহাবুল, মিজানুর, রবিউল, ছামছুন্নাহার ও কুলছুমসহ আরও বেশ কিছু বাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব দরিদ্র পরিবারের ঘরবাড়ি যে কোন মুহূর্তে নদীগর্ভে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের ওইসব মানুষ।
ইতোপুর্বে শালাইপুর (মিয়াপাড়া-পাছপাড়া) স্থানে কয়েক’শ ফুট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। সেই সময়ে আমিনুর, রবিউল ও জামিনুরের ঘরবাড়িও বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। বিশেষ করে বাঁধটি ভেঙে যাওয়া হুমকির মুখে পড়েছে বেশ কিছু নতুন নতুন পরিবারের মানুষ। তারা এমনি ঘটনার শিকার হলেও, কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের লোকজন ভাঙন স্থানে আসেননি বলে ভুক্তভোগীরা জানান। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওইসব পরিবারের মানুষ নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পোহাচ্ছেন।
ভাঙনের শিকার রফিকুল ইসলাম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সম্প্রতি ঘাঘটের অব্যাহত ভাঙনে ঘরবাড়িসহ বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। একমাত্র ভিটাটুকু হারিয়ে এখন অন্যত্র বসবাস করছি।
ভুক্তভোগী আঙ্গুর মিয়া বলেন, অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি না করলে পেট চলে না। মাত্র দুই শতক জমির ওপরে ঘরবাড়ি স্থাপন করে বসবাস করে আসছিলাম। বর্তমানে সেটিও নদীর হুমকিতে পড়েছে। আর এই ভাঙন আতঙ্কে রাতে ঠিকভাবেও ঘুমাতে পারছিনা।
স্থানীয় কৃষক ফরহাদ মিয়া জানান, দীর্ঘদিন আগে শালাইপুর (মিয়াপাড়া-পাছপাড়া) স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নদীতে বিলীন হওয়ায় এখাকার ঘরবাড়িগুলো চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে কয়েক একর আবাদী জমিও চলে গেছে নদীর পেটে।
বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহীন সরকার বার্তা২৪.কমকে জানান, এরই মধ্যে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করা হবে।