‘হামরা কত আর পানিতে ডুবি মরমো’
‘এই মাসে যে কতবার ঘর নরাইছি, মুই (আমরা বলতে পারি) কবার পাং না বাহে। এভাবে কি আর বাঁচা যায়? প্রতি সপ্তাহে পানি বাড়ে আর (আমাদের) হামাক তিস্তায় ডুবায়। কবে যে তিস্তার পানি থাকি (রক্ষা পাবো) রেহাই পামো।’
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম সরদার পাড়া গ্রামের আতোয়ার মিয়া এই প্রতিবেদককে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। তিনি বলেন, সরকার আসে যায়, কিন্তু তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্যের পরির্বতন হয় না। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাস দেয়। এবার ভোট দিলে বাঁধ হবে। কিন্তু ভোটের পর পানিতে ডুবে থাকলেও খবর নেয় না তারা।
সরেজমিনে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, লালমনিরহাট সীমান্তের ওপারের মেখলিগঞ্জ দিয়ে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামে প্রবেশ করেছে ভারতের সিকিমে উৎপত্তি হওয়া নদী তিস্তার। সেখান থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ। মূলত সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। তিস্তা নদীর পানি এসেই ধাক্কা দিয়েছে দহগ্রামে। যার কারণে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সরদারপাড়া গ্রামটি। ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটির, কালভার্ট, পাকা রাস্তা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমির।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার । যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ মিটার) বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় জেলার হাতীবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলার প্রায় ২০০ বসতভিটা চলে গেছে নদীগর্ভে। সর্বশেষ গত ১১ জুলাই আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়াও দহগ্রামে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো সংসারের যতটুকু রক্ষা করতে পেরেছেন তা নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন বাঁধ, রাস্তা কিংবা অন্যের জমিতে।
আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, গত তিনদিনে মহিষখোচা ইউনিয়নের ৯৫টি পরিবারের বসতভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।
তিস্তা ব্যারেজের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, সোমবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যা ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । ফলে বন্যা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। তবে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় পানি ওভার ফ্লু হয়ে গ্রামে ঢুকে পড়েছিল। যার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।