অভিযোগের অন্ত নেই, সুনাম খুইয়েছে লাজ ফার্মা!
রাজধানীতে যে কয়েকটি ফার্মেসিকে মডেল ফার্মেসি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে লাজ ফার্মা তার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু প্রায় সময়ই স্বনামধন্য এই ফার্মেসির বিরুদ্ধে ওঠে নানা অভিযোগ। এতে প্রতিষ্ঠানটি তার অর্জিত সুনাম খুইয়েছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সর্বশেষ গত ৭ দিনের মধ্যেই ভয়াবহ দুটি অভিযোগ উঠেছে এই ফার্মেসির বিরুদ্ধে। অভিযান চালিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। জব্দ ও জরিমানা করেছে প্রায় কোটি টাকা।
গত ১২ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় ভুয়া ইউরোপ এবং আমেরিকার ওষুধের কারখানার সন্ধান পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই কারখানা থেকে কোটি টাকার ভেজাল কাঁচামাল জব্দ করা হয়।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ওই নকল কারখানায় প্রস্তুত করা ভেজাল ওষুধ পাঁচ বছর ধরে সরবরাহ করা হচ্ছিল লাজ ফার্মা, তামান্না ফার্মা, আল মদিনা ফার্মা, ইসলামিয়া, গুলশান এবং নিউ বনানীসহ নামীদামি ফার্মেসিগুলোতে।
তাদের কাছে থেকে সবচেয়ে বেশি ওষুধ নিতো লাজ ফার্মা। পরবর্তীতে লাজ ফার্মার উত্তরা শাখায় অভিযান চালিয়ে অনুমোদনহীন ওষুধ রাখার দায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
কয়েকবছর আগে ২০১৫ সালে ২৪ ধরনের অনুমোদনহীন দেশি-বিদেশি ওষুধ বিক্রি করার অপরাধে লাজ ফার্মার কলাবাগান শাখাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আবার চলতি বছর করোনাভাইরাসের সংকটে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও ওষুধের বেশি দাম নেওয়াসহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি অভিযানে লাজ ফার্মার বিভিন্ন শাখাকে জরিমানা করা হয়।
মার্চে অভিযান চালিয়ে মাস্ক বিক্রয়ে প্রতারণার দায়ে রাজধানীর ফকিরাপুলে লার্জ ফার্মাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ওই মাসে এলিফ্যান্ট রোডে লাজ ফার্মা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই অভিযোগে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের লাজ ফার্মাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করায় লাজ ফার্মার সাভার শাখাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সবশেষ গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে লাজ ফার্মায় মেয়াদোত্তীর্ণ, আমদানি নিষিদ্ধ ও অনুমোদনহীন ওষুধ রাখার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে ২৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় লাজফার্মা থেকে ৭৬ ধরনের প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ওষুধ জব্দ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, যে সুনাম নিয়ে লাজ ফার্মা কাজ করছিল সেটা রাখেনি তারা। স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে ওষুধ নিয়ে প্রতারণা করছে। সর্বশেষে অভিযানটি তার অন্যতম উদাহরণ হতে পারে। এবার যে নতুন তাও না। একাধিকবার বিভিন্ন অভিযোগে অভিযান হয়েছে। আমরা সতর্ক করেছি। লাজ ফার্মায় নতুন কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভোক্তা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনাকালে যখন চারদিকে রমরমা প্রতারণা। লাজ ফার্মার মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে দাঁড়ানোর কথা কিন্তু তারাও প্রতারণা করেছে। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এভাবে আলাদা করে বলার আর কিছু নেই।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, লাজ ফার্মা দীর্ঘদিন ধরে নকল ওষুধ বিক্রি করেছে। অবাক করা বিষয় বিদেশি নকল ওষুধ যেখানে লাজ ফার্মা, মদিনা, ইসলামিয়া এবং তামান্না ফার্মেসি নেয় তখন বিশ্বাস আর রাখা যায় না।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ওষুধ নিয়ে প্রতারণা অনেকেই করে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। লাজ ফার্মা যখন সেটা করে তখন বড় অন্যায়। একের পর এক অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে ভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে মানুষের বিশ্বাস ফেরানো যাবে না।
এদিকে সার্বিক অভিযোগের বিষয়ে লাজ ফার্মার মহাব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, দোকানে কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকতে পারে। কোনো ওষুধের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে তা গ্রাহককে দেওয়া হয় না।
আর অনুমোদনহীন ওষুধের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তাদের রাখতে হয়। এগুলো তারা বৈধভাবে আমদানি করা কোম্পানির কাছ থেকে কাগজপত্র দেখে কেনেন।
তবে এরপর আর এমন ভুল হবে না বলে জানান লাজ ফার্মার এই কর্মকর্তা।