মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
গত ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে জেলার অন্যান্য নদ-নদী ও খাল-বিলে পানি বৃদ্ধির ফলে ক্রমেই জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
বর্তমানে মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার মধ্যে সিংগাইর উপজেলা ব্যতীত বাকি ৬টি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। বন্যার পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দৌলতপুর, হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলার বাসিন্দারা।
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, জেলার ২৩১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। আর পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া জেলায় ২২ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা কবিলত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও এখনো অনেকেই তা পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলার ৩টি উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সংকট রয়েছে। তলিয়ে গেছে ওই উপজেলাগুলোর বেশির ভাগ রাস্তাঘাট।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো। গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে তারা। কোরবানির ঈদকে লক্ষ্য রেখে প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজাকরণ গরুগুলোর ক্রেতা না থাকায় হতাশায় দিন কাটছে এসব এলাকার খামারিদের।
জেলার দৌলতপুর উপজেলার সমেতপুর গ্রামের দিনমজুর আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শুনেছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে কয়েকবার গিয়েও কোনো ত্রাণ পাইনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের পরিচিত একই ব্যক্তিকেই বার বার ত্রাণ দিচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরকাটারি এলাকার এক স্কুল শিক্ষক জানান, চরকাটারি ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধিকাংশ ব্যক্তির বাড়িতেই এখন বন্যার পানি। টাকা থাকলেও খাবার পাওয়া কঠিন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস জানান, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের জন্য জেলায় ১০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে হরিরামপুর ও দৌলতপুর উপজেলার বেশ কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।
বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের জন্য ১৩০ মেট্রিক টন চাল ও ১৭শ শুকনা খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।