বাসে টিকেটের মূল্য চড়া, পিকআপেই ফিরছে ঘরমুখো মানুষ
মহামারি করোনা ও বন্যাকালীন ঈদের উৎসব ম্লান হলেও সানন্দে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা। সাভার ও আশুলিয়ায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের বাস। জীবিকার অন্বেষণে অনেকে বছরজুড়ে এখানে কাজে ব্যস্ত থাকলেও ঈদে বাড়ি ফেরা চাই। তাই ছুটি পাওয়া মাত্র বাসে কিংবা পিকআপে গ্রামে ছুটছেন তারা।
করোনা মহামারি শুরুর পরে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ও অঘোষিত লকডাউনের কবলে পড়ে ঈদুল ফিতরে গ্রামে ফিরতে পারে নি শ্রমিকরা। তবে এবার ছুটি কম হলেও গণপরিবহন চালু থাকায় ব্যাগ নিয়ে একের পর এক বেরিয়ে পরছেন নাড়ির টানে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও এবার ঈদ উৎযাপন করতে হবে পরিবারের সাথে। তাই চড়া ভাড়া গুণলেও বাস ও ট্রাক-পিকআপে করেই সানন্দে রওনা দিয়েছে ঘর মুখো মানুষ।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) বিকেলে সাভারের নবীনগর, বাইপাইল ও সাভার বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ড গুলোতে বাড়তে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষের চাপ। এদের মধ্যে বাসের টিকেটের মূল্য চড়া হওয়ায় ট্রাক কিংবা পিকআপে উঠে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই।
কারখানা ছুটি হওয়ায় এক ঝলক হাসি মাখা মুখ নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন আকলিমা। তিনি তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া যাবেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তিন দিন ছুটি দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ঈদের ছুটি হিসেবে অনেক কম দিন ছুটি দিয়েছে। যাওয়া আবার আসা অনেক কষ্ট ও অর্থ ব্যয় হবে জেনেও বাবা ও মায়ের সাথে ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছি। এখন গাড়ির টিকেট পাইলেই গাড়িতে উঠবো।
অপর শ্রমিক তাসলিমা বলেন, বাসের ভাড়া খানেক বেশি। এতো ভাড়া করোনার সময় কীভাবে দেবো। তাই পিকআপে ৯০০ টাকা ভাড়ায় রংপুর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। বাসের মধ্যেও স্বাস্থ্য বিধি নেই, ট্রাকেও নেই। তাহলে বেশি টাকা দিয়ে বাসে যাবো কেন। গত ঈদে বাড়ি যেতে পারি নাই ছোট সন্তান গ্রামে রেখে এখানে পোশাক কারখানায় কাজ করি। বছরে ২ বার সন্তানের মুখ দেখতে পারি। এবার অল্প দিনের জন্য হলেও সন্তানের মুখ দেখতে পারবো। কষ্ট হলেও এটাতেই তৃপ্তি।
বাসের ড্রাইভার আওলাদ বলেন, ঈদের আশায় আমরা এই লাইনে এখনও আছি। না হলে পেশা পরিবর্তন করতাম। গত ৪ থেকে ৫ মাস হলো আমরা খেয়ে না খেয়ে আছি। এই ঈদের আয় দিয়ে কয়দিন চলতে পারবো। বসে থাকলে তো কেউ খবর নেয় না। দুই টাকা ঈদ বোনাস বেশি নিলেই আমরা ভাড়া বাড়িয়েছি। স্বাস্থ্য বিধি মেনে আমরা যাত্রী ওঠাচ্ছি। সবার কাছে ঈদ বোনাস চাচ্ছি দিলে নেই, না দিলে জোর নেই।
নবীনগর বাস স্ট্যান্ডের টিকেট কাউন্টার মাস্টার বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে হিসেবে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম। তবে কারখানা সব ছুটি হওয়ার পর যাত্রীর চাপ অনেকটাই বেড়ে যাবে। যেহেতু গত ঈদে অনেকেই বাড়ি ফিরতে পারে নাই তাই এবার গাড়ি চালু থাকায় সবাই বাড়ি ফিরবে বলে ধারণা করছি। এতোদিন তো খেয়ে না খেয়ে ছিলাম। ঈদ উপলক্ষে আল্লাহ যা রিযিকে রাখবেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করছি। বাড়তি ভাড়া কোনো শ্রমিকের কাছে রাখা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, গতকাল ২৯ জুলাই প্রায় ৫০ শতাংশ কারখানা ছুটি দিয়েছে। তার পরেও বাড়ি ফেরা শ্রমিকের সংখ্যা কম। আজ সব কারখানা ছুটি হওয়ায় হালকা চাপ বাড়তে পারে। তবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে অনেকেই বাড়ি যাচ্ছে না। তাছাড়া শ্রমিকরা অনেকই মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছে। ফেরার সময় ভাড়ায় আরেক জনকে নিয়ে যাচ্ছে। এবার যাত্রীর চাপ কম থাকলেও ঝুঁকি ও চরম দুর্ভোগে নিয়ে শ্রমিকরা বাড়ি ফিরছেন বলে আমি মনে করছি।