পানির দরে চামড়া কিনেও ধরা, ফেলতে হচ্ছে পদ্মায়!
গেল বছরের তুলনায় এবার ২০-২৯ শতাংশ কমিয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিলো সরকার। তবে সেই দামও পাওয়া যায়নি। বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দরে!
ব্যতিক্রম নয় দেশের উত্তরের জেলা রাজশাহীতেও। এখানে ছাগলের চামড়া ৫ থেকে ২৫ টাকা আর গরুর চামড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
কোরবানির দিনে পানির দরে চামড়া পেয়ে একটু বেশিই কিনেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাতেও খেয়েছেন ধরা! কেনা চামড়া আড়তে গিয়ে বিক্রি করতে না পেরে বাধ্য হয়ে পদ্মায় ফেলছেন তারা। রোববার (২ জুলাই) দুপুরের দিকে রাজশাহী নগরীর আই-বাঁধ, টি-বাঁধসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে করে চামড়া নিয়ে পদ্মা নদীতে ফেলতে দেখা যায়।
চামড়ার পেশাদার ব্যবসায়ীরা বলছেন- সরকার কমিয়ে মূল্য নির্ধারণ করায় আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম কিছু একটা হতেও পারে। তবুও বুঝে শুনে চামড়া কিনেছি। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে বেশি চামড়া কিনে ধরা খেয়েছেন।
ঈদের দিন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, চামড়া ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দাম তো দূরে থাক, ন্যূনতম দামও দিচ্ছেন না। নিজেরা দেখে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছিলেন। বিক্রেতাদেরও দর কষাকষি করতে দেখা যায়নি। যেন বিক্রি করতে পারলেই হাফ ছেড়ে বাঁচেন!
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রেতাদের দরকষাকষি না দেখে পানির দরে যেখানে চামড়া পেয়েছেন কিনে নিয়েছিলেন। তারা বলছেন, ধারণা ছিল- ১০ টাকায় কেনা খাসির চামড়া আড়তে নিশ্চয় ৫০ টাকা বিক্রি হবে। তাতেও ৪০ টাকা লাভ হবে। কিন্তু আড়তদাররা চামড়ায় কিনতে চাইছেন না। দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিচ্ছেন।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৫০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনেছেন তারা। আর বড় আকারের গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ২০০ টাকা দিয়ে কিনতে পেরেছেন। এছাড়া ছাগলের চামড়া পেয়েছেন ৫ থেকে ২৫ টাকার মধ্যেই।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কুমারপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু জাফরসহ সাতজন ব্যক্তি একসঙ্গে একটি গরু কোরবানি দেন। আবু জাফর বলেন, ‘গরুটার দাম ছিল ৯০ হাজার টাকা। গোশত হয়েছে চার মণ। চামড়ার দাম পেয়েছি ১৮০ টাকা। এ দামেও চামড়া কিনছিলেন না ব্যবসায়ী। পরিচিত হওয়ায় জোর করেই তাকে চামড়া ধরিয়ে দিয়েছি। পরে দেখেছি- অনেকে ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি করেছে।’
এদিকে, দরদামে না হলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চলে যাওয়ার পর কোথাও কোথাও সামান্য কিছু দাম দেশি দিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে দেখা গেছে। কিন্তু সেসব চামড়া আর কেনা দামেও তারা বিক্রি করতে পারেননি। এতে তারা লোকসানে পড়েন।
হারুণ ও আমিরুল নামের দুই জন্য মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জানান, কাজ নেই তাই এবার চামড়া কিনেছি। ভাবলাম গতবার লস গেছে এবার হয়তো দাম হতে পারে। সরকারও দাম ঠিক করে দিয়েছে। তাই গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে ঘুরে চামড়া কিনেছি। সন্ধ্যার পর রেলগেট এলাকায় আড়তে নিয়ে গেলে চামড়া ব্যবসায়ীরা কিনতেই চাননি। তারা এক প্রকার তাড়িয়ে দেন সেখান থেকে।
তারা আরো বলেন, ‘অন্য আড়তে নিয়ে গিয়েও বিক্রি করতে পারিনি। ফ্রি দিলেও নিবেন না এমন কথাবার্তা আড়তদারদের। ফলে বাধ্য হয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছি।’
রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের বকেয়া টাকা পড়ে আছে। করোনার কারণে হাতেও টাকা নেই। সরকার কমিয়ে দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামেও চামড়া কেনার টাকা নেই। চামড়া কিনবো কী দিয়ে বলতে পারেন?’
জেলা প্রাণিসম্পদ ডা. অন্তিম কুমার সরকার জানান, কোরবানির আগে জেলায় গরু-মহিষ ছিল প্রায় এক লাখ। আর ছাগল ছিল দুই লাখ ২৮ হাজার। অন্যান্য পশু ছিল ৪২ হাজার। সব মিলে কোরবানির জন্য পশু ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার। জেলায় আড়াই লাখের মতো পশু কোরবানি হওয়ার কথা। তবে প্রকৃত হিসাবটা এখনও প্রস্তুত হয়নি।