৫ কোটি মানুষ সরকারি সহায়তা পাবে: প্রধানমন্ত্রী
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার স্বল্প থেকে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘করোনা সংকটে দেশের মানুষ যাতে খাদ্য সংকটে না থাকে তার জন্য বিদ্যমান ৫০ লাখ রেশন কার্ডের পাশাপাশি আরও ৫০ লাখ রেশন কার্ড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোট ১ কোটি কার্ড দেওয়া হবে। প্রতিটি পরিবার ৪-৫ জন করে ধরলে তাতে ৫ কোটি মানুষ সরকারি সুবিধাটা ভোগ করবে।’
শনিবার (১৮ এপ্রিল) একাদশ জাতীয় সংসদের ৭ম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা একথা বলেন।
এরআগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ঘণ্টাব্যাপী এই অধিবেশনের শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ৬০ দিনের মাথায় এবারের অধিবেশন বসে। টানা এক ঘণ্টা চলার পর শেষ হয় ৭ম অধিবেশন। এটি দেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। শুরুর দিনেই অধিবেশন শেষ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আমরা ১০ টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছি। আমাদের ভিজিএফ, ভিজিডিসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্ড দেওয়া আছে ৫০ লাখ। এর বাইরে আরও ৫০ লাখ কার্ড এরইমধ্যে করতে বলা হয়েছে। আর ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন হটলাইনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যখন কেউ সহযোগিতা চাইবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের যেন সহযোগিতা পাঠানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোতে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে প্রত্যেক জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা থাকে, সেই ব্যবস্থা আমরা করব।’
এই সংসদ নেতা বলেন, ‘পরিবারগুলো যেন খাদ্যের কষ্ট না পায় সেই ব্যবস্থা করেছি। আমি নিজেও অনেক সময় খবর পাই, আমার কাছে এসএমএস করে আপা আমার ঘরে খাবার নাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা কিন্তু উদ্যোগ নেই। শুধু ওই ঘরটাই না আশপাশে কোথাও এভাবে কষ্টে আছে কি না? যারা হয়তো হাত পাততে পারে না, তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রীকে বলেছি ৩৩৩ বা আমাদের হটলাইনগুলোর সঙ্গে সংযোগ রেখে এধরনের পরিস্থিতিতে যারা পরবে তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ধান কাটার মৌসুম। আমাদের দিনমজুর যারা কাজ পাচ্ছেন না তাদের জন্য একটু সুযোগ। তারা অনেকেই ধান কাটতে যেতে পারেন বা সকলেরই যাওয়া উচিত। এখানে উঁচু নিচু ব্যাপার না। কাজ করা এটা সকলেরই দায়িত্ব। আমাদের ছাত্র-শিক্ষক, বিশেষ করে ছাত্রদের বলবো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেন এগিয়ে আসে। ধানগুলো যদি ভালোভাবে তুলতে পারি আমাদের খাদ্যের অভাব হবে না। তাছাড়া যারা যেদিকে থেকে ধান কাটতে যাবেন তাদের যেতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমাদের এটাই চেষ্টা মানুষের জীবনটা যেন চলে আবার তারা যেন সুরক্ষিত থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প যেগুলো এখনই না করলেই চলে সেসব প্রকল্পের অর্থগুলো সাশ্রয় করার উদ্যোগ নিয়েছি। সেই অর্থ জনগণের কল্যাণে যেন কাজে লাগে। দেশের মানুষ যেন দুর্ভিক্ষের মুখাপেক্ষী না হয় সেটা মাথায় রেখে আগামী ৩ বছর অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি।’
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঝড় ঝাপটা দুর্যোগ তো আসবেই। এই সময় হতাশ হওয়া বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাহসের সঙ্গে যারা যার অবস্থান থেকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। সেই প্রস্তুতি থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে দেশের মানুষ বেশি সাহসী হয়ে গেছে। তাদের বলা হয় আপনার ঘরে থাকেন, এখন কেউ যদি ঘরে না থেকে বৌ নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গেল শিবচর। সেখানে করোনা ভাইরাসটি পৌঁছে দিল। বারবার অনুরোধ করছি, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। এদেরকে যদি একটা জায়গায় ধরে রাখতে পারি, ওখান থেকে যদি সুস্থ করতে পারি তাহলে এটা বিস্তার লাভ করে না। কেন জানি মানুষ এটা মানতেই চায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘরে থাকতে অনুরোধ করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট চেষ্টা করছে তারপরেও এখানে বসে আড্ডা ওখানে বসে গল্প। সবাইকে বলবো স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলবেন। নিজে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন, তাহলে কারও জীবন ঝুঁকিতে পাড়বে না।’