সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে: নানক
সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বাংলাদেশে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তাই তিনি বাঙালি জাতিকে জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি করে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার পথে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান।
রোববার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শহীদ প্রকৌশলী ভবনের কাউন্সিল হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিব বর্ষ) উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) সদর দফতর, ঢাকা কেন্দ্র এবং ইআরসি যৌথ উদ্যোগে ‘মুজিবর, পিতা মুজিব এবং সোনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা অর্জনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা জনগণের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন দ্বিতীয় বিপ্লবের। ক্ষুধা দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই ছিল তার স্বপ্ন। তাই আমাদের দায়িত্ব হবে জ্ঞান গরিমায় সমৃদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। তাহলেই আমরা চিরঞ্জীব মৃত্যুঞ্জয়ী নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারব বলে দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন অগ্রগতির মহাসড়কে। ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন স্বাপ্নিক মানুষ। তিনি নিজে স্বপ্ন দেখেন, দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখান। তার স্বপ্ন দেশের উন্নয়ন ও জনসেবায় বিস্তৃত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। মানুষের এই প্রত্যাশা পূরণে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।
তিনি বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ ঘোষণা করেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে বলে আশাবাদ করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী নানক।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নানক বলেন, আজ বাঙালি জাতি এক মহাচ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আরেকদিকে ষড়যন্ত্র ও অপশক্তি আমাদের বিরুদ্ধে শাণিত অস্ত্র তাক করে আছে। এমন এক পরিস্থিতিতে আমরা যখন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, তখন এই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
এই অপশক্তিকে মোকাবিলা করা, একটি দূরহ কাজ। কারণ এর পিছনে রয়েছে ধর্মের সেন্টিমেন্ট। কাজেই আমাদেরকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যেমনিভাবে ছিল একটি কঠিন লড়াই, আমরা সেদিন যেমনিভাবে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এক বাঙ্কারে শত্রু হননের মহোৎসবে ছিলাম, আজও আবার সেই বাঙালিকে জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। তাই আমাদের একমাত্র পথ হল ধর্মীয় নিরপেক্ষতার পথ। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থাই একটি সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তবেই না বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
দেশ অত্যাচার-অবিচার এবং হুমকি-ধুমকির কবলে পড়ে বিরাজনীতিকরণ হচ্ছে’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আপনাকে বলতে চাই--আপনাদেরকে রাজনীতির সঠিক ধারায় ফিরে আসতে হবে। আপনারা ক’ রাজনীতির কারণে, অপরাজনীতির কারণে আজ রাজনীতির আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। এর থেকে আপনাদের ফিরে আসতেই হবে।
প্রকৌশলীরা শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অন্যতম এক কারিগর উল্লেখ করে নানক বলেন, আপনাদের নতুন নতুন চিন্তাভাবনা উদ্ভাবনী শক্তির মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আপনারাই মূল কারিগর আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার। তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপনাদেরকে অন্যতম প্রধান নিয়ামক শক্তি মনে করেন।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু, গিনেস বুক অব রেকর্ডের স্বীকৃতি আমাদের আরেকটি অর্জন বলেও মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক এবং বঙ্গবন্ধু জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ.ফ.ম. বাহউদ্দিন নাছিম এবং আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন আইইবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন, প্রকৌশলী এস.এম মনজুরুল হক মঞ্জু, আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোল্লা মোহাম্মদ আবুল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন আইইবি’র প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা।