ব্যাংকে লুটপাট, সংসদে ক্ষোভ বিএনপির
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট নিয়ে কড়া সমালোচনা করলেন বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্যগণ।
তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলেই শেয়ারবাজার একেবারে শুয়ে পড়ে। দেশের ব্যাংকগুলো পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।
সোমবার (৭ জুন) সংসদে ২০২০-২১ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেট পাসের প্রস্তাবের ওপর আনিত মুঞ্জরি দাবি সম্পর্কিত ছাটাই প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ দিনের কার্যসূচি শুরু হয়। মাত্র দুটি মঞ্জুরি দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। একটি হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অপরটি হচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, করোনাকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে করোনা নিয়ন্ত্রণে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত হচ্ছে পোশাক শিল্প আর প্রবাসী আয়। করোনাকালীন সময় যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে এই খাত দুটি এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা কল্পনাও করা যায় না। পোশাক শিল্পের বায়াররা দেশে আসতে পারবেনা, প্রবাসীরা বিদেশে যেতে পারবে না। প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা আয় যদি নিচে নেমে আসে তাহলে আমরা আবার ভয়ানক একটা অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ব। তাছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুবই বেহাল দশা। প্রতি বছর লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিচ্ছে, এতে প্রতিষ্ঠানগুলো বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেয়ার বাজার একেবারে শুয়ে গেছে। বাস্তবিক অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্নীতিগ্রস্থ। দুর্নীতির এই অবস্থা যদি কমাতে না পারেন তাহলে ভয়নাক অবস্থা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন- অপ্রদর্শিত কালো টাকা যতক্ষণ পর্যন্ত থাকবে ততক্ষণ প্রদর্শন করার সুযোগ দেব। এটা প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা দুর্নীতির বিরুদ্ধে (জিরো টলারেন্স) তার সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। এরকম চলতে পারে না।
হারুন বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ আর কালো টাকা এক নয় একথার সঙ্গে আমি একমত। অপ্রদর্শিত অর্থ ঘরবাড়ি জমি বিক্রি করা টাকা, যেগুলো বৈধ, সেগুলো বৈধ করার সুযোগ দিন। কিন্তু দুর্নীতির মাধ্যমে, মাদকের মাধ্যমে অবৈধ রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে যদি কেউ সম্পদ গড়ে তোলে, তাকে যদি সুযোগ দেন তাহলে যারা ন্যায়ের পথে চলছে, সৎ পথে চলছে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, একদিকে মাতারবাড়ি রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবেন আর অন্যদিকে গাছ লাগাবেন এটা হয় না। পরিবেশের আরও বিপর্যয় ঘটবে। সারা পৃথিবীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, আর আপনি এদিকে বলছেন গাছ লাগাও।
রুমিন ফারহানা বলেন, ২০১৯ সালে সরকারি হিসাব মতে মন্দ ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালে এসে শুনলাম ৮৮ হাজার কোটি টাকা মাত্র। আসলে ব্যাংকে মন্দ ঋণের পরিমাণ কত?
তিনি বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ারবাজার শুয়ে পড়ে। এটা যে কি একটা অদ্ভুত সম্পর্ক এটা এখনো বুঝতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, সাবেক (অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত) স্পষ্ট কথা বলতেন, দলের বিরুদ্ধে গেলেও বলতেন। তিনি বলেছিলেন ব্যাংক দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। একটা দেশে যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দেয়া হয় তখন সেই দেশের অর্থনীতির কাজ সম্পর্কে বলতে নিশ্চয়ই চিন্তা করতে হয়। যারা ব্যাংকের টাকা লুট করে তাদেরকে সুবিধা দেয়ার জন্য একটার পর একটা নতুন আইন হয়। ব্যাংক কোম্পানিতে আইন পরিবর্তন করে এক একটা ব্যাংক এক একটা পরিবারের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন এক পরিবার থেকে তিনজন সদস্য থাকতে পারবেন ব্যাংকের পরিচালক পদে, একাধিকক্রমে তিন মেয়াদে থাকতে পারবেন তারা। এই পরিবর্তনগুলোর কারণে এক একটা পরিবার একটা ব্যাংকের মালিক হয়ে যাচ্ছে। জনগণের টাকার হরিলুট হচ্ছে।
বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, একবার সংসদে ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হলো। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটা এখনো জানতে পারলাম না। ব্যাংকে যে টাকা থাকে সেটা আমাদের মত আমজনতার টাকা। সেই টাকা এক ব্যাংকের পরিচালকের সাথে আরেক ব্যাংকের পরিচালকদের ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ঋণ নেয়। ঋণ নেয়ার সময় তারা জানে এই ঋণ তারা আর পরিশোধ করবে না। এই টাকা চলে যায় বিদেশে। গ্লোবাল ফাইন্যান্স ইন্টিগ্রিটির তথ্যানুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রায় ১ লক্ষ কোটি বিদেশে চলে যাচ্ছে। গত ১০বছরে প্রায় সাড়ে ৮ থেকে ৯ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে চলে গেছে।